সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইয়েতি : মিথ নাকি সত্যি? / Yeti: Myth Or Reality?

 ইয়েতি : মিথ  নাকি সত্যি ? / Yeti: Myth Or Reality?


ইয়েতি কি সত্যিই আছে ? দিস্তা দিস্তা তথ্য প্রমাণ নাকি আছে এর স্বপক্ষে? কিন্তু তার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে কি? প্রচুর অভিযাত্রী নাকি স্বচক্ষে দেখেছেন এই ইয়েতি দের? কিন্তু তারা নাকি মানুষ দেখলে দুম করে নিজেদের লুকিয়ে ফেলে! সত্যি নাকি ইলিউশন এই রহস্যের ঘেরাটোপে খুঁজছি ইয়েতির অস্তিত্ব।


মাউন্ট এভারেস্টের ইয়েতির পায়ের ছাপ, যার ছবি তুলেছিলেন এরিক শিপটন, ১৯৫১ সালে। ইয়েতি কিংবা অতিকায় তুষারমানুষ, যে নামেই ডাকা হোক না কেন, যাই হিসাবে আমরা জানি না কেন, এই বানরের মতো প্রাণীরা তুষারে বাসকারী ক্রিপ্টিডদের ( cryptids) মধ্যে অনস্বীকার্যভাবেই রাজা স্বরূপ। উত্তর আমেরিকান বিগফুটের (bigfoot) মতো, ইয়েতিকে বলা হয় এক নির্জন প্রাণী, যে শুধুমাত্র হিমালয়ের তুষারময় পর্বতমালায় ঘুরে বেড়ায়। সাধারণত শেরপাদের মধ্যে ইয়েতিরা তিব্বতীয় এক লোককাহিনীর অংশ হলেও, এই অঞ্চলের পর্বতারোহীরা বিগত দুই শতাব্দী জুড়ে নাকি ‘sightings’ - 'দর্শন' করেছেন তাদের, আর যা কিনা একখানি রেকর্ডও গড়েছে, এবং একইসঙ্গে জন্ম দিয়েছে এক বিতর্কের- এই প্রাণীটি কিংবা এই ইলিউশন আসলে আছে কি, নাকি নেই?  


বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে যখন পশ্চিমের দেশ থেকে অভিযাত্রীরা হিমালয় পর্বতে আরোহণ শুরু করে তখন তথাকথিত ইয়েতি দেখার খবর হঠাৎ করে যেন বেড়ে যায়। আর এই ইয়েতি দর্শনের খবর শীর্ষে পৌঁছেছিল ১৯৫০ সাল নাগাদ, যখন ইয়েতির প্রমাণের সবচেয়ে কুখ্যাত টুকরোগুলি মাউন্ট এভারেস্টের এক দুর্গম হিমবাহ থেকে নামিয়ে আনা হয়েছিল। 



অলৌকিক বা প্যারানরমাল এনকাউন্টার কিংবা অদ্ভুত ইতিহাস :


তুষারের মধ্যে পায়ের ছাপ


১৯৫১ সালের শরৎকালে (যখন এভারেস্ট ভিড় পর্যটন গন্তব্যে পরিণত হয় নি), ইংরেজ পর্বতারোহী এরিক শিপটন এবং ডঃ মাইকেল ওয়ার্ড নেপালের দিক থেকে এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছানোর সম্ভাব্য পথগুলি সার্ভে বা জরিপ করার একটি অভিযান শুরু করেন। শিপটনের নেতৃত্বে, এই অভিযানের সদর্থক ফলাফল যা এডমন্ড হিলারি এবং তেনজিং নোরগেকে ১৯৫৩ সালে প্রথমবার সফলভাবে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় সফল আরোহণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। শুধু তাই নয় এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত চূড়ার আরোহণের রুট ম্যাপ স্থির করবার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযান ছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অভিযান স্থগিত ছিল, তারপর ১৯৫১ সালের আবার পর্বতাভিযান আরম্ভ হয়। 


কিন্তু ১৯৫১ সালের অভিযানটি সম্পূর্ণ অন্য কিছুর জন্যও পরিচিত হয়েছিল।


প্রায় ১৫,০০০ - ১৬,০০০ ফুট উচচতায়, শিপটন এবং ওয়ার্ড একটি অদ্ভুত দৃশ্যে দেখে হোঁচট খেয়েছিলেন - মেনলুং অববাহিকার তুষারে অদ্ভুত দর্শন পায়ের ছাপ ,ছাপ গুলি একটি ক্রম ধরে এগিয়ে গেছে যেন ! যেহেতু পর্বতারোহীদের পায়ের ছাপ পরিমাপ করার জন্য কোনও সরঞ্জাম ছিল না, তাই তারা তাদের হাতে যা ছিল তাই ব্যবহার করত - একটি আইস পিক, একটি ব্যাকপ্যাক এবং মাইকেল ওয়ার্ডের বাম বুট। শিপটন ফটোগ্রাফের একটি সিরিজ তৈরী করেছিলেন, ছবি তুলেছিলেন প্রচুর, কারণ এই দুজনে তাদের ছবিগুলো আরও নিখুঁত ভাবে পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন। একটি পায়ের ছাপের পাশের বুটের একটি ছবিতে এটা স্পষ্ট যে সেই পায়ের ছাপটি একটি সাধারণ মানুষের পায়ের চেয়ে যথেষ্ট চওড়া ছিল - ওয়ার্ড এর বর্ণনা অনুসারে প্রায় দুইগুণ। ছাপের পায়ের আঙ্গুলগুলি আকৃতিতে ছিল অদ্ভুত, উদ্ভট রকমের বড় এবং বুড়ো আঙুলটি মানুষের বুড়ো আঙুলের চেয়ে বড়, একটু কাছ থেকে দেখলে বাকি আঙুল গুলো থেকে একটু নিচু। এটা কি মানুষের পায়ের ছাপ হতে পারে? এমনও সন্দেহ হয়েছিল। কিন্তু বেশির ভাগের মত এটা মানুষের পায়ের ছাপ নয়, এমনকি যদি এটি মানুষেরও হয়, তাহলে তারা কীভাবে বরফের মধ্য দিয়ে, যেখানে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে , সেখানে উপযুক্ত সুরক্ষা ছাড়া তারা হাঁটতে সক্ষম হয়েছিল কীভাবে? 


প্রচণ্ড হতবাক, প্রায় এক মাইল হিমবাহের নিচের পায়ের ছাপ অনুসরণ করে চলতে থাকেন তারা; যতক্ষণ না রাতের ক্যাম্প ফেলেন, ততক্ষণ পর্যন্ত সেই ছাপ অনুসরণ করতে থাকেন। তার কয়েক দিন পরে সতীর্থ ডব্লিউ এইচ মারে এবং টম বোর্ডিলন, কৌতূহলী হয়ে ফিরে যান পায়ের ছাপ আরও একবার পরীক্ষা করতে। বোর্ডিলন এর ডায়েরি অনুযায়ী, যখন তিনি সেই পায়ের ছাপের কাছে পৌঁছেছিলেন ততক্ষণে তা সূর্যের তাপে কিছুটা বিকৃত হয়ে গিয়েছে, তিনি এই ঘটনাকে একটি আশ্চর্যজনক এবং অভিযানের ব্যাখ্যাতীত সংযোজন হিসাব দেখেছেন। 


যখন অভিযাত্রী দলটি ব্রিটেনে মানে নিজেদের দেশে ফিরে আসে, তখন শিপটনের অদ্ভুত ছবিগুলো বিভিন্ন জনের হাতে হাতে ঘুরতে থাকে। ক্রিপ্টোজুলজিস্ট, দানব শিকারী বা মনস্টার হান্টার এবং পর্বতারোহীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে, কারণ, অনেকের কাছে, ফটোগ্রাফগুলিতে শুধুমাত্র একটি জিনিসেরই ইঙ্গিত ছিল: প্রমাণ ছিল যে পৌরাণিক যুগের ইয়েতিরা হিমালয়ে ঘুরে বেড়ায় !


এই অভিযান এবং ছবি প্রকাশনার পর পরই, শিপটনের ফটোগ্রাফে পায়ের ছাপ তৈরি করা প্রাণীটির আসলে কোনো অস্তিত্ব আছে কিনা তা উদঘাটনের প্রয়াস শুরু হয়। হিমালয় এবং মধ্য এশিয়ায় অসংখ্য অভিযান শুরু হয়। যাইহোক, ইয়েতির অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য এক টুকরোও প্রমাণ মেলেনি। তাহলে কি এটি একটি প্রতারণা ছিল ? শিপটন এর নেতৃত্বে ইয়েতি অভিযানকে সম্পূর্ন সাজানো নাটক বলেও উল্লেখ করা হয়।


শিপটনের দলের অন্যান্যরা যারা পায়ের ছাপ দেখেছিলেন তারা পরে শিপটনের এর পক্ষই নিয়েছিলেন, ফটোগ্রাফটি যে একেবারেই লেজিট একটি ফটোগ্রাফ সেটারই সমর্থন করেছিলেন তারা, যার মধ্যে বোর্ডিলনও ছিলেন, যিনি ১৯৫০ এর দশকে মাইকেল জন ডেভিসকে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন : 


"dear mick. here are the footprint photos: sorry for the delay. we came across them on a high pass on the nepal-tibet watershed during the 1951 everest expedition. they seemed to have come over a secondary pass at about 19,500 ft, down to 19,000 ft where we first saw them, and then went on down the glacier. we followed them for the better part of a mile. what it is, i don’t know, but i am quite clear that it is no animal known to live in the himalaya, & that it is big. compare the depths to which it & mike ward (no featherweight) have broken into the snow. yours, tom bourdillon." 


"প্রিয় মাইক, এখানে পায়ের ছাপের ছবি আছে: বিলম্বের জন্য দুঃখিত। ১৯৫১ সালের এভারেস্ট অভিযানের সময় নেপাল-তিব্বতের জলাশয়ের একটি উঁচু গিরিপথে আমরা তাদের সেই পায়ের ছাপ গুলো দেখেছিলাম। প্রায় ১৯,৫০০ ফুটের একটি মাঝারি পাসের উপর দিয়ে হেঁটে এসেছে বলে মনে হয়েছিল, ১৯,০০০ ফুট নিচে যেখানে আমরা সেই ছাপ গুলো প্রথম দেখেছিলাম এবং তারপরে হিমবাহের নিচের দিকে চলে গিয়েছিলাম। আমরা এক মাইল ঠিকঠাক রাস্তা দিয়ে অনুসরণ করেছিলাম। এটা কি, আমি জানি না, কিন্তু আমি পরিষ্কার যে এটা হিমালয়ে বসবাস কারী পরিচিত কোনো প্রানী নয়, এবং এটা বড় একটি প্রানী। এই ছাপ এবং মাইক ওয়ার্ড এর পায়ের চাপ তুলনা করলে , সেই বড় পায়ের ছাপ (পালক সম ও ওজন নয়) তুষার মধ্যে ভেঙে গভীর হয়ে বসে গেছে এর গভীরতা, একমাত্র তুলনা করা যায় এর সঙ্গেই। তোমার, টম বোর্ডিলন ।"


এমনকি ইয়েতি - ন্যাসেয়াররাও বা বিরোধকারিরাও স্বীকার করেছেন যে ফটোগুলি সত্যিই অদ্ভুত ছিল। যদি পায়ের ছাপগুলি বাস্তব হয়, এবং শিপটন এবং ওয়ার্ড খুব বেশি রকমের মিথ্যা না বলে থাকেন, যদিও মিথ্যে বলছেন এমনটা বিশ্বাস করার খুব বেশি কারণ ছিল না; তাহলে একটি কিংবদন্তি দানব এর যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যাগুলির যে তালিকা তৈরী করা হয়েছিল, তার সেরকম কোনো ব্যাখ্যাই আদতে ছিল না! ফুটপ্রিন্ট এর খোঁজকারী ওয়ার্ড এর অনুসারে, ইয়েতি ব্যাখ্যার ট্র্যাকগুলির সম্ভবত অনেক বেশি প্রাকৃতিক উৎস ছিল। 


মাইকেল ওয়ার্ডের তত্ত্ব 

 

তার চিকিৎসা অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে, ওয়ার্ড আল্পাইন জার্নালের ১৯৯৯ ইস্যুতে তার প্রবন্ধ "ইয়েতির পায়ের ছাপ: মিথ এবং বাস্তবতা" - “the yeti footprints: myth and reality” এ এভারেস্ট অঞ্চলে ইয়েতির পায়ের ছাপের উৎস সম্পর্কে একটি তত্ত্ব প্রচার করেন: 


"most of the prints have been seen by mountaineers, the majority of whom are laymen, and the explanations have been provided by anthropologists and others who have assumed that the prints were made by normal feet. none has ever considered that the menlung prints or other could be made by a local tibetan with abnormally-shaped feet. in a primitive community, many days and miles from even the most basic medical facilities and quite beyond the reach of surgery, abnormality of the foot would remain from birth onwards. even in ‘civilised’ communities abnormally-shaped feet are not uncommon and many do not prevent walking. "  



"বেশিরভাগ প্রিন্ট পর্বতারোহীরা দেখেছেন, যাদের বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ, এবং ব্যাখ্যাগুলি নৃতাত্ত্বিক এবং অন্যদের দ্বারা প্রদান করা হয়েছে যারা অনুমান করেছেন যে প্রিন্টগুলি সাধারণ পায়ের দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। কেউ কখনও বিবেচনা করেনি যে মেনলুং প্রিন্ট বা অন্য কোনও স্থানীয় তিব্বতি অস্বাভাবিক আকৃতির পা দিয়ে তৈরি করতে পারে। একটি আদিম সম্প্রদায়ে, এমনকি মৌলিক চিকিৎসা সুবিধা থেকে অনেক মাইল দূরে এবং অস্ত্রোপচারের নাগালের বাইরে, পায়ের অস্বাভাবিকতা জন্মের পর থেকে থাকে। এমনকি 'সভ্য' সম্প্রদায়গুলিতেও অস্বাভাবিক আকৃতির পা অস্বাভাবিক নয় এবং অনেকেরই হাঁটাতে সমস্যা হয় না। "


 মাইকেল ওয়ার্ড,“ the yeti footprints: myth and reality.”- "ইয়েতির পায়ের ছাপ: মিথ এবং বাস্তবতা।" আলপাইন জার্নাল, ১৯৯৯ (পৃষ্ঠা ৮৫)।


কিন্তু পায়ের ছাপ যদি একজন মানুষের তৈরি হয়, তাহলে তারা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫,০০০ ফুট উপরে বরফের মধ্য দিয়ে খালি পায়ে হাঁটছিল কীভাবে?  


ওয়ার্ড এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী: 


"allowing for abnormally-shaped feet, is it possible for himalayan inhabitants to walk in the snow barefoot for long periods without frostbite? the answer is ‘yes’. i have seen families in the bhutan himal do this, and scientific investigations have been completed of two instances in the himalaya. the first took place during the silver hut expedition in 1960-1961, which wintered at 19,000ft in the everest region. during that winter we had a visit from man bahadur, a nepalese pilgrim aged 35 years, who normally lived at 6000ft. he stayed for 14 days at 15,300ft and above, and throughout this period wore neither shoes nor gloves, and walked in the snow and on rocks in bare feet without any evidence of frostbite. he wore minimal clothing and had no sleeping bag or protective equipment other than a woollen coat. he was continuously monitored whilst spending four days without shelter between 16,500ft and 17,500ft, with night temperatures between -13°c and -15°c, and day temperatures below freezing. eventually he developed deep cracks in the skin of his toes, which became infected, and he returned to lower levels for this reason. had any european members of the party followed this regime they would undoubtedly have become severely frostbitten and hypothermic. "


"অস্বাভাবিক আকৃতির পায়ের সাহায্যে, হিমালয়ের বাসিন্দাদের ফ্রস্টবাইট হওয়া ছাড়াই দীর্ঘ সময়ের জন্য খালি পায়ে বরফের মধ্যে হাঁটা সম্ভব? উত্তরটি হল হ্যাঁ'. আমি ভুটানের হিমালের পরিবারগুলিকে এটি করতে দেখেছি, এবং হিমালয়ে দুটি ঘটনার বৈজ্ঞানিক তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। প্রথমটি ১৯৬০ -১৯৬১ সালে সিলভার হাট অভিযানের সময় হয়েছিল, যেটি এভারেস্ট অঞ্চলে ১৯,০০০ ফুট উচ্চতায় হয়েছিল, শীতকালে হয়েছিল তা। সেই শীতকালে আমরা ৩৫ বছর বয়সী একজন নেপালী তীর্থযাত্রী মানুষ বাহাদুরের কাছে গিয়েছিলাম, যিনি সাধারণত ৬০০০ ফুট উঁচুতে থাকতেন। তিনি ১৫,৩০০ ফুট এবং তার উপরে ১৪ দিন অবস্থান করেছিলেন এবং এই সময় জুতো বা গ্লাভস পরেননি এবং খালি পায়ে তুষার ও পাথরের উপর হাঁটতেন, কোনো ফ্রস্টবাইট অব্দি হয়নি তার । তিনি ন্যূনতম পোশাক পরতেন এবং একটি পশমী কোট ছাড়া অন্য কোনও স্লিপিং ব্যাগ বা প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জামও ছিল না। ১৬,৫০০ ফুট থেকে ১৭,৫০০ ফুটের মধ্যে কোনরকম আশ্রয় ছাড়াই প্রায় চার দিন অতিবাহিত করেন তিনি, রাতের তাপমাত্রা যেখানে -১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে -১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে এবং দিনের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে থাকার সময়ও তাকে ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল। অবশেষে তার পায়ের আঙ্গুলের ত্বকে গভীর ফাটল দেখা দেয়, যা সংক্রামিত হয় এবং এই কারণে সে নীচে ফিরে আসে। অভিযাত্রীদের মধ্যে কোন ইউরোপীয় সদস্য যদি এই ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতেন তাহলে সে নিঃসন্দেহে মারাত্মকভাবে ফ্রস্টবাইট এবং হাইপোথার্মিকের শিকার হতেন। " 


মাইকেল ওয়ার্ড,“ the yeti footprints: myth and reality.”- "ইয়েতির পায়ের ছাপ: মিথ এবং বাস্তবতা।" আলপাইন জার্নাল, ১৯৯৯ (পৃষ্ঠা ৮৬)।


ওয়ার্ড ব্যাখ্যা করে যে কীভাবে যথেষ্ট ঠান্ডা তাপমাত্রায় বসবাসকারী ব্যক্তিদের 'কোল্ড-ইনডিউসড ভাসোডাইলেটেশন' - ‘cold-induced vasodilatation’ নামক একটি অবস্থার বিকাশ ঘটাতে পারে যেখানে “the peripheral blood vessels dilate in cycles on exposure to the cold, allowing warm blood to reach these parts, rather than constrict and prevent it” - "পেরিফেরাল রক্তনালীগুলি ঠান্ডার সংস্পর্শে আসার সময় চক্রের মধ্যে প্রসারিত হয়, উষ্ণ রক্তকে সংকুচিত করার পরিবর্তে এই অংশগুলিতে পৌঁছাতে দেয়। প্রতিরোধ করার পরিবর্তে।" নেপালী হাইল্যান্ডারের বিকৃত পায়ের ছবি দেখলে, পায়ের বিকৃতি এবং ইয়েতির পায়ের ছাপের মধ্যে মিল স্পষ্ট বোঝা যায়। 


মেনলুং অববাহিকায় যেখানে পর্বতারোহীরা পায়ের ছাপ খুঁজে পেয়েছিলেন খুব একটা নির্জন ছিল না যতটা প্রচার করা হত। ওয়ার্ড এর বক্তব্য অনুসারে, মাত্র কয়েক মাইল দূরে রংশার ঘাটে বসবাসকারীরা এই এলাকাটিতে নিয়মিত যাতায়াত করত এবং তার অভিযাত্রী দলও পরিদর্শন করে। এমনকি এখনকার বংশোদ্ভুত একজন গ্রামবাসীর সাথে দেখা হয় অভিযাত্রী দলের । যদিও ওয়ার্ড স্বীকার করেন যে সম্ভবত কখনই পায়ের ছাপের প্রকৃত উৎস জানতে পারা যাবে না, তার আলোচিত তত্ত্বটি দ্বারা ‘abominable snowman’ - ' অতিকায় তুষারমানব'-এর প্রমাণ হবে বলে অনেকের প্রত্যাশা। সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা প্রদান করে বোধহয় এই তত্ত্ব।


১৯৫১ সালে পায়ের ছাপ আবিষ্কারের পর, এডমন্ড হিলারির নেতৃত্বে এক অভিযান চালানো হয়। ইলিউশন নাকি ইয়েতি , এর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল প্রমাণ খোঁজা। তবে কয়েকটি ভ্রম ছাড়া সাধারণের বাইরে আর কিছুই উন্মোচিত হয়নি। আপাতত, ইয়েতি শেরপা কিংবদন্তির প্রাণীর হিসেবেই রয়ে গিয়েছে। অন্তহীন রহস্য চেপে বসে আছে যেন ! ক্রিপ্টোজুলজিস্টদের জন্য একটি সাদা তিমি শিকারের মতোই অধরা ! 









 



(চলবে)

 


 









মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কাকে বলে স্ট্রিম অফ কনসাসনেস বা মগ্নচৈতন্য / What is Stream of Consciousness?

কাকে বলে স্ট্রিম অফ কনসাসনেস ? সাহিত্য ধারায় এটি এক রীতি, বলতে গেলে লেখনীর এক ধরণ। সাহিত্যের আলোচনায়  কিংবা সমালোচনায় 'স্ট্রিম অফ কনসাসনেস'- ‘Stream of Consciousness’  বা মগ্নচৈতন্য শুধুমাত্র এক শব্দ নয়, এ এক অনন্য, এক স্বতন্ত্র জঁর  ।  মগ্নচৈতন্যের   স্রোত সাহিত্যসৃষ্টির এক অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ন ধারা,  যা কিনা  বিংশ শতাব্দীর কিছু বিখ্যাত লেখক   নিযুক্ত এক স্বতন্ত্র লেখন রীতি। নিজেদের লেখনীতে কিছু ঘটনা পরম্পরাকে  বর্ণনা করতে ব্যবহার করেছিলেন তারা ।  কিন্তু '  মগ্নচৈতন্য '  কী?  কেনই বা  এটি একটি 'ধারা' বা ' জঁর' ?  কিছু  পরিচিতি দিলাম বটে শুরুতে কয়েকটি শব্দকে আশ্রয় করে, তবে  বিস্তারিত আলোচনা  এগোবে আস্তে আস্তে।  এই আপাত সাধারণ এবং একইসঙ্গে ব্যাপকভাবে ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা যুক্ত , সাহিত্যিক টার্মটির ধারণা  পরিষ্কার করতে সহায়তা করতে পারে হয়ত এই  আলোচনা ।   Image Courtesy: Steve Jhonson:pixels.com/free image প্রকৃতপক্ষে, ' মগ্নচৈতন্য  '   সাহিত্যের  জঁর  হিসাবে একেবারেই শুরু করেনি    তার  জীবন !  তবে ?   অবাক করা তথ্য এই  যে - সম্ভবতঃ এটি ছিল   এ

পৃথিবীর দীর্ঘতম বাস রুট - কলকাতা থেকে লন্ডন / The World’s Longest Bus Route- From London To Kolkata

পৃথিবীর দীর্ঘতম বাস রুট - কলকাতা থেকে লন্ডন / The World’s Longest Bus Route- From London To Kolkata কলকাতা থেকে লন্ডনে যাবেন? বাসে চেপে ? ঠিক এইরকমই এক পরিকল্পনা করা হয়েছিল একবার... লন্ডন - কলকাতা - কলকাতা - লন্ডন , বাস সার্ভিস তাও    আবার লাক্সারি    বাস সার্ভিস। চমকে  উঠলেন    নাকি ? তা চমক লাগানো কথা বটে ! খাস কলকাতা থেকে বাস নিয়ে যাবে কিনা সুদূর লন্ডন ! হ্যাঁ , সত্যি।   বাস বটে একখানা। নাম তার এলবার্ট।   খাসা ট্যুর প্ল্যান হয়েছিল। কি দুঃখ হচ্ছে ? যেতে পারবেন না তাই ?  এত দুঃখ করার কিচ্ছু    নেই , সেই বাসে    এখনও চড়তে পারেন আপনি। কি বলছেন , তাই আবার হয় নাকি ? খুব    হয়। কিন্তু একটু টাইম মেশিনে চড়ে বসতে হবে যে !  Image  Courtesy: reddit.com  ১৯৬০   সালে   কলকাতা   থেকে ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডন যাওয়ার জন্য একটি বাস সার্ভিস। ডবল ডেকার সমস্ত রকমের লাক্সারি সুবিধাযুক্ত বাস। এলবার্ট ট্যুর।

এডগার অ্যালান পো সিরিজ ১ l Edgar Allan Poe Series

এডগার অ্যালান পো এর "দ্য মার্ডারস ইন দ্য রু মর্গ"- “The Murders in the Rue Morgue” গোয়েন্দা গল্পের প্রথম আত্মপ্রকাশ হল এবং যাত্রা শুরু হল গোয়েন্দা কাহিনীর।  এডগার অ্যালান পো: Image Courtesy : pixabay  ১৮৪১ সালের প্রথম দিক তখন, এডগার অ্যালান পো (Edgar Allan Poe) ফিলাডেলফিয়ার এক জনপ্রিয় প্রকাশনা গ্রাহামস ম্যাগাজিনের (Graham’s Magazine) সম্পাদক হিসাবে কাজ করছেন, পত্রিকায় একটি গল্প জমা দিয়েছিলেন, বহু খেটে গল্পটি লিখেছেন পো, যার নাম ছিল "মার্ডার্স ইন দ্য রু ট্রায়ানন " - “Murders in the Rue Trianon.” প্যারিসের রাস্তার পাশে একটি বাড়িতে একটি ভয়ঙ্কর জোড়া-খুনের ঘটনা ঘটেছে। বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী নিশ্চিত করেছেন যে বাড়ি থেকে একজনের কণ্ঠস্বর শোনা গেছে, তবে একজন বক্তা ঠিক কী ভাষা ব্যবহার করছেন সে বিষয়ে কেউ একমত হতে পারছে না। ভাষার ধাঁধায় গুলিয়ে যাচ্ছে গোটা ঘটনা। বেশ কিছু ক্লুও পাওয়া গেছে, কিন্তু সেগুলো প্রতিটি পরবর্তীটির চেয়ে আরও বিভ্রান্তিকর। প্রতিবেশীরা আতঙ্কিত। পুলিশ বিভ্রান্ত। কিন্তু সি. অগাস্ট ডুপিন (C. Auguste Dupin) একজন শেভালিয়ার (chevalier) এব