''আমি তো জানতাম সাহির, তোমার কোনোদিনই আমার প্রতি প্রতিশ্রুতি রক্ষার কোনো দায় ছিল না । কি যেন বলে আজকাল ! ও হ্যাঁ , কমিটমেন্ট ফোবিয়া। ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারবে কি না সেই দ্বিধাতেই তো রয়ে গেলে। কেন যেন মনে হয় আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা সেই গভীরতর অতলান্ত স্পর্শ করে নি কোনোদিন। ছুঁয়ে দেখেনি সেই ভালোবাসার তীব্র টানকে। আচ্ছা সত্যি করে বলো তো, তুমি কি সত্যি আমাকে ভালোবেসেছ ? যতটা আমি তোমাকে বেসেছি।
'''মোহাব্বত কি পরখ কা ইয়েহি তো রাস্তা হ্যায় / তেরি তালাশ মে নিকলু, তুঝে না পায়ু ম্যায় ''।
অমৃতা ভালোবাসা খুঁজেছেন, সেই আকুল করা ভালোবাসা, হৃদয় তন্ত্রীতে সেই তীব্র ঝড় তোলা ভালোবাসা তাকেই তো খুঁজেছেন অমৃতা। পেয়েছেন কি ? খুঁজবো আমরা। উপরের লাইনদুটি মজহার ইমামের লেখা। অমৃতার খুব প্র্রিয় । সাহিরের জন্য এক সমুদ্র ভালোবাসা লুকিয়ে আছে যে লাইনদুটিতে। প্রেমের নাকি এটাই পরীক্ষা ! এটাই নাকি সর্বোত্তম মানদণ্ড। প্রেম হবে তীব্রতর। যাকে ভালোবাসবে তাকে কখনই জীবনে পাওয়া যাবে না ! যাকে খুঁজতে চাইছি , তাকে হয়ত কোনোদিনই পাওয়া যাবে না !
অমৃতা প্রীতম আর সাহির লুধিয়ানভি। দুই সাহিত্যিক। হৃদয়ে খুঁড়ে খুঁজে নেবো ওদের ভালোবাসার গল্প । মাজহার ইমামের উর্দু শায়েরি বরাবরই প্রিয় ছিল অমৃতার। সাহিরের প্রতি ভালোবাসা গুলোই যেন লেখা ছিল এই শায়েরিগুলোতে। অমৃতা যা বলতে চেয়েছিলেন তাই যেন লেখা ছিল প্রতি ছত্রে ছত্রে। ভালবাসার সংক্ষিপ্তসার । এই ঘনিষ্ঠতা, এই প্রেম কি সত্যি অমৃতাকে শান্তি দিতে পেরেছিল ? নাকি এক হারানো- না-হারানো ভালোবাসার উদ্বেগের মধ্যে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল? প্রেম বড় নিটোল আর নিখুঁত অধিকারবোধ দাবি করে।হয়তো কখনও কখনও তা কোনো নির্দিষ্ট গন্ডিতে বেঁধে রাখা যায় না, ছড়িয়ে পরতে থাকে জীবনের বাঁকে বাঁকে, যা প্রচলিত প্রেমের সীমা ছাড়িয়ে যেতে থাকে, মিশে যেতে থাকে এক অপার্থিব আলোর তরঙ্গে।
পাবলো নেরুদা লিখেছেন “Difficult is to define love; all the more tricky to define ours…” -ভালবাসা সংজ্ঞা দেওয়া কঠিন; আর মানুষের ভালোবাসাকে সংজ্ঞায়িত করা তো আরও জটিল। একথা যেন একেবারে সত্যি হয়ে যায় অমৃতা প্রীতম আর সাহির লুধিয়ানভির ভালোবাসার জীবনের জন্য। সত্যি তো ভালোবাসাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবো আমরা। আর দুজন মানুষ যখন একান্ত নিভৃতে ভালোবাসার স্বপ্ন বুনতে থাকে তখন কি করেই বা ব্যাখ্যা সম্ভব এর ? অনুভব করা যায় শুধু, এক পশলা বৃষ্টির পরে ছাদের তারে ফোঁটায় ফোঁটায় জমে থাকা জলের বিন্দুকে ছুঁলে যে তিরতিরে অনুভূতি হয় , তখন জলকণা গুলিই বলে দেয় সেই ভালোবাসার কথা।
'' সির্ফ এহসাস হ্যায় ইয়ে রুহ সে ম্যাহসুস করো, প্যায়ার কো প্যায়ার হি রহনে দো কোই নাম না দো। ''
ভালোবাসা তো অনুভূতিতে ছড়িয়ে প'রে, প্রতিটা অনুভবে ছড়িয়ে থাকে ভালোবাসার বাতাস। ভালোবাসাকে ভালোবাসার মতো করে থাকতে দেওয়াই তো ভালো, কি দরকার কোনো নাম দেওয়ার ! ভালোবাসার তো অনেক রং হয়, হয় অনেক রকমফের। অমৃতা আর সাহিরের ভালোবাসাতে মিশেছিল বৌদ্ধিক সচেতনতা, সৃজনশীলতা ;পরিশীলিত সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ ওঁরা , তাই একে অন্যের কাছাকাছি এসেছিলেন সাহিত্য -সংস্কৃতিকে সেতু করে। বাঁধন মজবুত হয়েছিল শিল্প-সৃজনশীলতাকে আঁকরে ধরে। নিজেদের বুদ্ধিমত্তাকে অনেক বেশি প্রকাশ করেছিলেন একে অন্যের কাছে। অকুন্ঠ প্রশংসা করতেন একে অন্যের। প্রশংসা কি প্রায়শই ভালোবাসার মতো নয়?
কাছাকাছি আসতে শুরু করেছিলেন তারা। এমনকি কাদম্বিনী নামে একটা হিন্দি ম্যাগাজিনকে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে অমৃতা ও বলে বসেন -'' সাহির মেরে সাত্রে আউর ম্যায় উনকি সিমোন থি। '' এই ইন্টারভিউ নিচ্ছিলেন ধর্মভীর ভারতী। বুঝতে পেরেছিলেন অমৃতার চোখে তখন সাহিরের ভালোবাসাগুলো দৃঢ় এক বন্ধনের খোঁজ করছে। ভিক্টোরিয়ান যুগের ইংরেজ কবি রবার্ট ব্রাউনিং এবং এলিজাবেথ ব্যারেট ব্রাউনিং। অমৃতা আর সাহির। একে অপরের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলেন এই ভালোবাসা-দম্পতি।
প্যারালালিজম ইন সেরিব্রাল লাভ অ্যাফেয়ার - Parallelism in Cerebral Love Affairs বইতে ডেনিস উইলিয়ামস লিখেছেন, দুটি অতীব তীব্র গভীর ব্যক্তিত্ত্ব একে অপরের মধ্যে খুঁজে পেয়েছিলেন জীবন নামে সংগীতকে। গভীর এক বৌদ্ধিক চেতনার অধিকারী মানুষ নিজেদের স্বতন্ত্রের ঝোঁকে স্বাভাবিকভাবেই নিকটবদ্ধ হয়, শেষ পর্যন্ত প্রেমে পড়ে যায়; জাগতিক প্রেমের যে প্রাথমিক শর্তাদি থাকে তা যেন এখানে শেষপর্যন্ত কাজ করে না।
অসাধারণ সুন্দরী ছিলেন অমৃতা। যেখানে সাহির ছিলেন অতিসাধারণ দেখতে। বসন্তের দাগ সারা মুখ জুড়ে। সাধারণ মাপকাঠির মানুষ এক। হাবভাব খুব সাধারণ। যেমন সাঁত্রে আর সিমোন। সাঁত্রে ছিলেন ছোটখাট চেহারার, সিমোন ছিলেন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। ভালোবাসার ক্ষেত্রে কি এগুলো কোনো প্রাধান্য পায় ? জার্মান দার্শনিক এমানুয়েল কানও ছিলেন খুবই খাটো চেহারার, কিন্তু সঙ্গিনী এলিজা ছিলেন ব্যতিক্রমী সুন্দর এবং তাঁর চেয়ে লম্বাও। বিজোড় দম্পতির তালিকা যে শেষ হবার নয়। কিন্তু তাতে কি ভালোবাসায় কোনো ভাঁটা পরে ?
সাহিরের উপর অমৃতার প্রায় একরকম ''স্যাপিওসেক্সুয়াল ক্রাশ'' ছিল,''কলম কা যাদুগর'' (wizard of pen) নাম দিয়েছিলেন অমৃতা। প্রকৃতপক্ষে, সাহির নামটি ছিল তখল্লুস (nom de guerre) - ছদ্মনাম -তাঁর আসল নাম আবদুল হাই - এর অর্থ যাদুকর। শ্বাসরুদ্ধকর বৈবাহিক বন্ধনে হাঁসফাঁস করছেন অমৃতা, অসন্তুষ্ট নিজের জীবন নিয়ে , অমৃতা সন্ধান করেছিলেন স্বাধীনতার ; আত্মার স্বাধীনতা , মনের স্বাধীনতা, চেতনার স্বাধীনতা এবং মনের স্বাধীনতা।
"তুমহারে দারখত কী তাহানি কা যো আশরা মিলা / মেরে টুটে হুয়ে দিল কা পরিন্দা ওয়াহি রুক গ্যায়া। '' অমৃতা তাদের ভালোবাসার প্রথম দিনগুলিতে সাহিরের কাছে লিখেছিলেন । সাহির যেন একটা বটবৃক্ষের মতো, ছায়া দিয়েছে সুনিবিড়। অমৃতার ভালোবাসার ছোট্ট পাখিটি যেন ডালে ডালে নেচে বেড়ায়। সেই হৃদয় ভাঙা পাখি নতুন বাসা বানাবার তোড়জোড় করেছে।
গভীর সখ্যতা ছিল তাঁর মা সরদার বেগমের সঙ্গে, জীবনের নানা ওঠাপড়ায় সঙ্গে ছিলেন মায়ের। মাই ছিল জীবন, মায়ের প্রতি ছিল এক অমোঘ প্রতিশ্রুতি; সাহিরের সঙ্গে অমৃতার সম্পর্কের ক্ষেত্রেও কি মায়ের ছায়া লক্ষ্য করা যায় ? হয়তো তাই ছিল এই সম্পর্কের ভিত্তিভূমি সাহিরের ক্ষেত্রে। কারণ তাঁর চেয়ে কয়েক বছর বড় ছিলেন অমৃতা। কি বলবেন একে ? কোয়াসি -ওডিপাল- প্রেডিলেকশন (quasi-oedipal predilection) ? যদিও উভয়ই একে অপরকে গভীরভাবে ভালবাসতেন, তবে অমৃতাই সাহিরকে জড়িয়ে ছিলেন আরো গভীরে, সমুদ্রের মতো অতলান্ত ছিল সেই প্রেম।
ডন জুয়ানে ( Don Juan ) বায়রন শুনিয়ে গেছিলেন সেই অমোঘ বাণী, স্মৃতি উস্কে দিল কতকটা- ''Man’s love is in a man’s life, a thing apart/’Tis a woman’s whole existence'' - একজন পুরুষের কাছে ভালোবাসা তার জীবনে অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়ের মতোই একটা শুধুমাত্র বিষয় হয়ে থেকে যায় / কিন্তু একজন নারীর ভালবাসা এক পৃথক অস্তিত্বের সমান, এক নারীর পুরো অস্তিত্বের সঙ্গে জুড়ে থাকে সেই ভালোবাসা।
''ম্যায় তুমহারী হো কর রহ গয়ি / তুম মেরে মুকাম্মল ওয়াজুদ বন গ্যায়ে। '' অমৃতা সেই কবেই যে সাহিরের হয়ে গিয়েছিলেন, সমস্ত জীবন -মন দিয়ে অমৃতা তো সাহিরেরই ছিলেন। পুরো অস্তিত্ব জুড়েই ছিলেন সাহির । কিন্তু, সাহিরের জীবনে কি এতটাই তীব্র ছিলেন অমৃতা ? না বোধহয়। অমৃতা জানতেন, অনুমান করতেন, সাহিরের কমিটমেন্ট ফোবিয়ার কথা এবং তাঁর প্রতি একনিষ্ঠ গভীর ভালবাসার অভাবের কথা ।
"ম্যায়নে টুট কে প্যায়ার কিয়া তুম সে / ক্যায়া তুমনে ভী উতনা কিয়া মুঝ সে?'' সাহিরের কাছে তার লেখা শেষ চিঠিতে অমৃতার প্রশ্ন ছিল এটা, কিন্তু কার কাছে প্রশ্ন ? নিজের কাছে ? নিজের কাছে কোনো উত্তর ছিল না। তাই হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়েছিলেন প্রশ্ন। এই শেষ চিঠি অমৃতা নিজের হাতে দিয়েছিলেন সাহিরকে। চিঠি নিয়ে চলে গিয়েছিলেন সাহিরের কাছে। ব্যক্তিগতভাবে তাকে দিয়েছিলেন নিজেদের সম্পর্কের শেষ প্রলেপ, সেই শেষবার একসঙ্গে এক কাপ করে কফি খেয়েছিলেন দু'জনে, শেষ হয়ে গিয়েছিল জন্ম, স্থির হয়ে গিয়েছিল সময়।
অনেক কথা হয়েছিল তাদের মধ্যে সেদিন। একটা সময়কাল যেন স্থির হয়ে যাচ্ছে, এক নীল ভালোবাসার আকাশ, দুটো জীবন ফিরে যাচ্ছে নিজেদের ভাঙা মনের কাছে। সাহিরের বাড়ি থেকে ফিরে যাচ্ছেন অমৃতা। আবৃত্তি করছেন বায়রন। “In her first love, woman loves her lover/ In all the others, all she loves is love.” - : " মেয়েদের জীবনে প্রথম প্রেমের ক্ষেত্রে প্রেমিককে ভালোবাসে মেয়েরা / আর এর পরের সম্পর্কগুলিতে প্রেম নামক একটা আইডিয়া কেই আঁকড়ে ধরে।"
সাহির শান্তভাবে তাকে জিজ্ঞাসা করছেন, “ আপ যানে সে পহলে ইসকা তারজুমা কর দেঙ্গি ? ” কি দরকার ছিল তর্জমার ? এতটাই কি অচেনা তারা যে এই কথার তর্জমা দরকার পরে ? নাকি সাহির কথা দিয়ে আরো একটু সান্নিধ্য চাইছিলেন অমৃতার ? অমৃতা তাঁর স্মৃতিচারণে লিখেছেন, যখনই সাহিরের অমৃতার সঙ্গে মন কষাকষি হ'ত, কিংবা অমৃতার কারণে বিমর্ষ থাকতেন, তখনই তিনি অমৃতাকে সম্বোধন করার সময় ''তুমি''র পরিবর্তে আপনি ব্যবহার করতেন। দূরত্ত্ব নাকি অভিমান ? শুধু অভিমান নিজের কাছেই রেখে দিলেন সাহির ? দূরত্ত্ব দূর করার জন্য সচেষ্ট হ'লেন না একবারও ?
তাদের শেষ সাক্ষাত। একটা সম্পর্কের পরিসমাপ্তি। দুটো অনন্য জীবনের নিজেদের বিষাদের মধ্যে ঘোরাফেরা করা। দুটো মানুষের একটা গোটা জীবন পরিপূর্ন করার আগেই মারাত্মক বিচ্ছেদ। হৃদয়বিদারক। অত্যন্ত দুখঃজনক। পাকিস্তানী সমাজকর্মী এবং অমৃতা প্রীতমের প্রিয় বন্ধু প্রয়াত ফাহমিদা রিয়াজ লিখেছিলেন খন্ড ভাষ্য পাকিস্তানের উর্দু দৈনিক জং-এ - ''অমৃতা কি সাহির সে আখরি মুলাকাত:''- সাহিরের সাথে অমৃতার শেষ সাক্ষাৎ, এর প'রে থেমে যাবে সব কথা, শেষ হবে সব প্রেম-সঙ্গীত, থেমে যাবে সব শায়েরি। বিচ্ছেদ থেকে বেরোতে পারেননি অমৃতা, মনের ভিতরে বিচ্ছেদের ক্ষতরেখা বয়ে চলেছে তখনও; অমৃতা ফাহমিদাকে জানাচ্ছেন, সাহির তাকে বলেছিলেন কিছু কথা, নিয়েছিলেন কবিতা আশ্রয় : '' তুম চলি যাওগি, পরছাইয়া রাহ যায়েঙ্গি / কুছ না কুছ ইশক কি রাণাইয়ান রাহ যায়েঙ্গি। '' ফাহমিদা অনুবাদ করেছেন, এনেছেন রূপকের অনুষঙ্গ: ভালোবাসার মানুষ চলে গেলে কি বা পরে থাকে, কিছু স্মৃতি, স্মৃতি - সিলুয়েটগুলো ছায়া ফেলে মনের ভিতরে, ফেলে যাওয়া মনোরম ভালবাসার চিহ্নগুলো খুঁজে ফেরে। মন পরিণত হয়, অপেক্ষা করে।
|
অমৃতা প্রীতম এবং সাহির লুধিয়ানভি : Image Courtesy : Firstpost |
মহাম্মদ রফির কণ্ঠে অমর হয়ে আছে এক অমোঘ পংক্তি। ১৯৬৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি সগুন। ইশা শব্দটিকে বদলানো হয় হুসন শব্দটি দিয়ে। এই একমাত্র ঘটনা যেখানে সাহির রফি সাহেবকে অনুরোধ করছেন, গলায় একপ্রকার অনুনয়ের সুর। আবার করে গাইতে হবে ! অনর্থক ! যেখানে খৈয়াম সাহেবের মতো এটি খুঁতখুঁতে মানুষ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছেন। রানাইয়ান শব্দের সারমর্মটি ধরতে হবে যে, একদম হৃদয়ের ভিতর থেকে অনুভব করতে হবে তাকে। গানের একটা শব্দ তো শুধু একটা শব্দ হয়ে থাকে না, এক জীবন ভালোবাসার গল্পও তো তাতে ধরা পরে কখনও কখনও। সেই গানে, সেই সুরে, সেই কথায় - বেঁচে যায় না পাওয়া ভালোবাসার কথাকয়টি। তাইতো আবার গাইবার জন্য এতো অনুরোধ। সাহির বলেছেন : ''ইয়ে অমৃতা কে লিয়ে হ্যায়, চুনাঞ্চে আপকো জাহমত দে "। শুধু অমৃতা , অমৃতার জন্যই তো এত। খুব সংকুচিত ভাবেই বলেছিলেন সাহির। রফি অনুরোধ রেখেছিলেন, আন্তরিকভাবেই রেখেছিলেন ।
পৃথক হলো জীবন, আলাদা হয়ে গেল তাদের ভালোবাসার যাপন। কিন্তু ভুলতে পেরেছিলেন কি একে অপরকে ? সাহির সুধা মালহোত্রার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। কিন্তু হৃদয়ে ছিলেন অমৃতা, তাঁর একমাত্র ভালবাসা। অমৃতা খুঁজে নিয়েছিলেন ইমরোজকে। ভালোবাসাকে আবার খুঁজেছিলেন অমৃতা। জানতে পেরেছিলেন সাহির। লিখেছিলেন, "মুঝে আপনে তাবহিয়ো কা কোই গম নহি / তুমনে কিসি সে মুহাব্বত নিভা তো দি '' । গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, একটা গভীর-নিটোল ভালোবাসা। দুজন মানুষের মনের-যাপন। ছোট্ট ছোট্ট মাখা-মাখা দিনক্ষণ। শেষ হয়ে গেল যে সব ! ভিতরে ভিতরে ক্ষয়ে যাচ্ছিলেন সাহির।ধ্বংসাবশেষের শেষ প্রান্তে পৌঁছেছেন। দুঃখ নেই ! খুশি হবার কি আপ্রাণ চেষ্টা ! অমৃতা বেঁচে থাকার আশ্রয় পেয়েছেন ইমরোজে । কিন্তু সাহির , তার মনের খবর ! গুমরে গেছেন শুধু । এইভাবে খুব সংক্ষেপে প্রেমের শব্দ বন্ধ হয় তাদের। একটা সম্পর্কের মর্মান্তিক অবসান।
''তা’ররুফ রোগ হো যায়ে তো উসকো ভুলনা বেহতার
তা'ল্লুক বোঝ বন যায়ে তোহ উসকো তোরনা আচ্ছা
ওহ আফসানা জিসে তকমিল তক লানা না হো মুমকিন
উসে এক খুবসুরত মোর দে কর ছোরনা আচ্ছা ''.
ঘনিষ্ঠতা যদি কোনদিন দরকচা মেরে যায়, পরিণত হয় প্রাত্যহিক বিরক্তিতে , তবে তা ভুলে যাওয়াই ভাল, যদি কোনও সম্পর্ক বোঝা হয়ে দাঁড়ায়, তবে তা ভেঙে ফেলা ভাল, এমন কোনও সম্পর্ক যা আসলে পৌঁছায় না কোথাও, পৌঁছাতেই পারে না, পৌঁছাতে চায়ও না হয়'তো, হারিয়ে যায় কোনো যৌক্তিক- প্রান্তরে; তা'কে এক মনোরম মুহূর্তে এসে ছেড়ে যাওয়াই তো শ্রেয় , সেই মুহূর্তগুলো একসঙ্গে জড়ো হয়, ঘুরে যায় মোড় জীবনের অন্যদিকে ।
উল্লেখ্য যে, তকমিলের পরিবর্তে আঞ্জাম কেবল গানের সুর অপরিবর্তিত রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে - গানের বোল - '' চলো এক ফিরসে আজনবি বন যায় হামদোনো। '' -সিনেমার নাম গুমরাহ -১৯৬৩ - কথা: সাহির লুধিয়ানভি, সংগীত : রবিশঙ্কর শর্মা।
ভালোবাসা নাকি কোনোদিন কোনো প্রতিদান চায়না । প্রতিদান হীন ভালোবাসাই নাকি সত্যিকারের ভালোবাসা ! তাই তো বলে লোকে ! ভালোবাসা র জন্যই নাকি শুধু ভালোবেসে যাওয়া! পন্ডিতেরা নাকি দিস্তা দিস্তা কাগজ নাকি খরচ করেছেন এই প্রতিদানহীন ভালোবাসার কথা বলতে গিয়ে ? কিন্তু এই ভালোবাসা কি পেরেছিলো তার অন্তিম পরিণতিতে পৌঁছতে ? সুখী হয়েছিলেন কি তারা নিজেদের বৃত্তে ?
''মুহাব্বত জো আনজাম তক পৌঁহুছনি নহিঁ / ওয়াহী মুহাব্বত হ্যায়, বাকি কুছ নহি '' । তালখিয়ান - সাহির লুধিয়ানভি। সত্যিকারের ভালবাসা অসম্পূর্ণই থেকে যায়। বাকি অনেক সম্পর্ক আসে-যায় , প্রকৃত ভালোবাসা এক বিষাদের কবিতার জন্ম দেয়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন