সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কাকে বলে স্ট্রিম অফ কনসাসনেস বা মগ্নচৈতন্য / What is Stream of Consciousness?


কাকে বলে স্ট্রিম অফ কনসাসনেস ? সাহিত্য ধারায় এটি এক রীতি, বলতে গেলে লেখনীর এক ধরণ।


সাহিত্যের আলোচনায়  কিংবা সমালোচনায় 'স্ট্রিম অফ কনসাসনেস'-‘Stream of Consciousness’ বা মগ্নচৈতন্য শুধুমাত্র এক শব্দ নয়, এ এক অনন্য, এক স্বতন্ত্র জঁর ।  মগ্নচৈতন্যের  স্রোত সাহিত্যসৃষ্টির এক অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ন ধারা,  যা কিনা  বিংশ শতাব্দীর কিছু বিখ্যাত লেখক  নিযুক্ত এক স্বতন্ত্র লেখন রীতি। নিজেদের লেখনীতে কিছু ঘটনা পরম্পরাকে  বর্ণনা করতে ব্যবহার করেছিলেন তারা । কিন্তু ' মগ্নচৈতন্য ' কী? কেনই বা  এটি একটি 'ধারা' বা 'জঁর'

কিছু পরিচিতি দিলাম বটে শুরুতে কয়েকটি শব্দকে আশ্রয় করে, তবে  বিস্তারিত আলোচনা  এগোবে আস্তে আস্তে।  এই আপাত সাধারণ এবং একইসঙ্গে ব্যাপকভাবে ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা যুক্ত , সাহিত্যিক টার্মটির ধারণা  পরিষ্কার করতে সহায়তা করতে পারে হয়ত এই  আলোচনা । 


কাকে বলে স্ট্রিম অফ কনসাসনেস বা মগ্নচৈতন্য ? -পর্ব ১  / What is Stream of Consciousness? Part -1
Image Courtesy: Steve Jhonson:pixels.com/free image


প্রকৃতপক্ষে, ' মগ্নচৈতন্য '  সাহিত্যের জঁর হিসাবে একেবারেই শুরু করেনি  তার জীবন ! তবে ?   অবাক করা তথ্য এই  যে - সম্ভবতঃ এটি ছিল  একটি মনস্তাত্ত্বিক টার্ম ।   এই টার্মটির উৎপত্তি সম্পর্কে একটা  প্রচলিত প্রবাদ আছে,  বলা হয় যে, দার্শনিক এবং ঔপন্যাসিক হেনরি জেমসের  ভাই - উইলিয়াম জেমস নাকি এই টার্মটির প্রবক্তা । তিনিই প্রথম তাঁর ১৮৯০ সালে দ্য প্রিন্সিপাল অফ সাইকোলজি (The Principles of Psychology) বইটিতে 'স্ট্রিম অফ কনসাসনেস'   শব্দটির মুদ্রণ ঘটিয়েছিলেন। জেমস অবশ্য শুধু এই শব্দগুচ্ছটি নিছক ব্যবহারই  করেননি,  এটি জনপ্রিয় করে তুলবার পিছনেও তাঁর অবদান যথেষ্ট। 

প্রথম যে মনোবৈজ্ঞানিক  'স্ট্রিম অফ কনসাসনেস' শব্দবন্ধটি  ব্যবহার করেন তিনি হলেন   আলেকজান্ডার বাইন  তাঁর ১৮৫৫ সালে দ্য সেনসেস অ্যান্ড ইন্টেলেক্ট (The Senses and the Intellect)

বিংশ শতাব্দীর একেবারে গোড়ার দিকে লেখকদের কলম হয়ে ওঠে পরীক্ষামূলক; নিরন্তর চলতে থাকে  নিরীক্ষা।   সাহিত্যের ধারায় জন্ম হয় আধুনিকতাবাদের। সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রয়োগ শুরু  হয় ‘স্ট্রিম অফ কনসাসনেস বা মগ্নচৈতন্য’। সোজা কথায় বলতে গেলে, ‘স্ট্রিম অফ কনসাসনেস’ এমন এক সাহিত্য রীতি কিংবা বলা ভালো লিখন রীতি যেখানে কোনও চরিত্রের বহুস্তরীয় চিন্তাভাবনা এবং চরিত্রের প্রভাব  এমনভাবে প্রকাশিত  করা হয় যা তার  আকস্মিকতা, স্বতঃস্ফূর্ততা  এবং প্রায়শই অসামঞ্জস্যকে ধারণ করে।

সাধারণত, সিন্ট্যাক্স বা বাক্যের গঠনে এই মগ্নচৈতন্য  প্রতিফলিত হয়,  খণ্ড খণ্ড হয়ে বিস্তৃত হয়ে যায় , বা কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে, বিরামচিহ্নগুলি বহুলাংশে অনুপস্থিত থাকে। কখনও কখনও  কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে।  যেমন টি এস এলিয়েটের  ''দ্য লাভ  সং অফ জে আলফ্রেড প্রুফ্রোক'' (The Love Song of J. Alfred Prufrock)  উদাহরণ  যদিও অনেক আধুনিকতাবাদী সাহিত্য সমালোচক কেবলমাত্র ফিক্শন কাহিনীর  জন্যই  এই শব্দটি ব্যবহার সংরক্ষণ করতেন এবং প্রয়োগ করতেন!

১৯১৮ সালে দ্য ইগোইস্ট  পত্রিকাতে প্রকাশিত এক সাহিত্য- পর্যালোচনায় লেখক মে সিনক্লেয়ার সাহিত্যের লিখন শৈলী বর্ণনার জন্য  'মগ্নচৈতন্য' শব্দবন্ধটি ব্যবহার করেছিলেন। তবে আশ্চর্যের বিষয়, যে লেখকের কাজকে তিনি এইভাবে 'মগ্নচৈতন্য' হিসাবে বর্ণনা করেছেন তা কোনোভাবেই এই সাহিত্য রীতির অন্তর্গত ছিল না। 

ডরোথি রিচার্ডসনের  (১৮৭৩ - ১৯৫৭) দীর্ঘ উপন্যাস-''পিলগ্রিমেজ''-(Pilgrimage)   ''ইমারশন''-(Immersion)শব্দটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন, ''স্ট্রিম'' (Stream) এর ধারণা আসলে  খুব সমান্তরাল বলে  মনে হয়েছে তাঁর,  লিনিয়ারের  ধারণাকে ভাবতে চেয়েছিলেন তাই, জড়িত করতে চেয়েছিলেন ।  গভীর প্রভাব, নিমজ্জনের প্রভাব।  রিচার্ডসন তাঁর লেখায়, চিন্তাধারার এবং অভিজ্ঞতার একসাথে ''ইমারশন'' ঘটিয়েছেন, তার সঙ্গে  গভীর প্রভাব ঘটেছে  বহুমুখী স্বতঃস্ফূর্ত  প্রকৃতির ।

সুতরাং, ডরোথি  রিচার্ডসন, যার লেখা  প্রথম মগ্নচৈতন্যের ধারা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, তা আসলে সেই নির্দিষ্ট লেবেল থেকে অনেকটাই দূরে । সেই লেখন -রীতির থেকে সম্পর্কবিহীন। কিন্তু অন্যান্য মর্ডানিস্ট অথবা আধুনিকতাবাদীদের বক্তব্য কী এই বিষয়ে ? ভার্জিনিয়া উলফ সম্পর্কে  কী মত তাদের ? কী ভাবেন তারা  রিচার্ডসনের চেয়ে অনেক বেশি বিখ্যাত ও বহুল প্রচারিত খ্যাতিসম্পন্ন মর্ডানিস্ট বা আধুনিকতাবাদী ঔপন্যাসিকের লেখা  সম্পর্কে ?  উলফ এর লেখা কি আসলে  'স্ট্রিম অফ কনসাসনেস' হিসেবে স্বীকৃত ?

হয়ত সন্দেহের উদ্রেক ঘটে। র‌্যান্ডাল স্টিভেনসন তাঁর দুর্দান্ত বই '' মডার্নিস্ট ফিকশন'' (Modernist Fiction: An Introduction) এ  বলেছেন '' ইন্টেরিয়র মনোলোগ ''(Interior Monologue) উলফের সাহিত্যশৈলীর বর্ণনা দেওয়ার জন্য সেরা শব্দ, স্ট্রিম অফ কনসাসনেস নয়। যদিও এই টার্মগুলোর শর্তগুলির মধ্যে কিছুটা ওভারল্যাপও  রয়েছে,স্টিভেনসন মনোনিবেশ করেছিলেন  ''এনার্কিক ফ্লুয়েন্সি'' (Anarchic Fluency) এবং  ''সিনট্যাক্টিক ফ্র্যাগমেন্টেশন''-(Syntactic Fragmentation) এ। যেটা কিনা মর্ডানিস্ট স্ট্রিম অফ কনসাসনেসের চূড়ান্ত উদাহরণ।  

  উলফের সাহিত্যে, ''মিসেস ডালোওয়ে  (১৯২৫)'' (Mrs Dalloway -1925) '' বা ''দ্য ওয়েভস (১৯৩১)''(The Waves 1931) -  তাঁর সবচেয়ে পরীক্ষামূলক উপন্যাস, ন্যারাটিভ টার্মসে  এটি অত্যন্ত সুসংহত, সুসংগঠিত, বিশেষতঃ  চরিত্র-চিত্রণে - চরিত্রের নিজের মধ্যে  অভ্যন্তরীণ অন্তর্দ্বন্দ্ব, চিন্তন  এবং আবেগের পরিমিতিবোধ। এখানে তার কিছুটা উল্লিখিত রয়েছে-''মিসেস ডালোওয়ে '':

''But why should she invite all the dull women in London to her parties? Why should Mrs. Marsham interfere? And there was Elizabeth closeted all this time with Doris Kilman. Anything more nauseating she could not conceive. Prayer at this hour with that woman. And the sound of the bell flooded the room with its melancholy wave; which receded, and gathered itself together to fall once more, when she heard, distractingly, something fumbling, something scratching at the door. Who at this hour? Three, good Heavens! Three already!''

উলফ স্পষ্টতই তার চরিত্রের অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্বের মধ্যে প্রবেশ ঘটান আমাদের ।  মনের খবর  আমাদের সরবরাহ করতে থাকেন, তবে তিনি সিনট্যাক্সের (Syntax) বা বাক্যের গঠনের  কঠিন-কঠোর শর্তগুলো  অবলম্বন করতে থাকেন; প্রশ্নগুলিতে (উচ্চস্বরে নয়,  চুপচাপ নিজেকে জিজ্ঞাসা করা হয় এমন প্রশ্ন) প্রশ্ন চিহ্ন দেওয়া হয়েছে, বিস্মৃতিগুলির দেওয়া হয়েছে বিস্মৃত বিবরণ, বিস্ময়বোধক চিহ্ন গুলিও যথাযথ,  এবং মাঝে মাঝে বাক্য খণ্ডের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও অন্যান্য বিরামচিহ্নগুলির উপস্থিতি বর্তমান।  তবে,  স্ট্রিম অফ কনসাসনেস হয়তো নয়,একটু  গভীর ভাবে তলিয়ে  দেখলে এই অভ্যন্তরীণ একাকীত্বকে ''ইন্টেরিয়র মনোলোগ'' (Interior Monologue)-  বলা  অনেক বেশি বিধিসম্মত ও যথাযথ। 

সাহিত্যে মগ্নচৈতন্যের  একটি যথাযথ, অথচ বিতর্কিত নয় এমন  উদাহরণ খুঁজে পেতে আমাদের আরও একজন আধুনিকতাবাদী লেখক জেমস জয়েসের  কাছে ফিরে যেতে হবে।   ১৯২২ সালে লিখিত বিখ্যাত  উপন্যাস ইউলিসিসের  একেবারে শেষ, এখানে মলি  ব্লুমের বিখ্যাত ''সলিলকো '' (Soliloquy)বা স্বগতোক্তি  :  

''O and the sea the sea crimson sometimes like fire and the glorious sunsets and the figtrees in the Alameda gardens yes and all the queer little streets and the pink and blue and yellow houses and the rosegardens and the jessamine and geraniums and cactuses and Gibraltar as a girl where I was a Flower of the mountain yes when I put the rose in my hair like the Andalusian girls used or shall I wear a red yes and how he kissed me under the Moorish wall and I thought well as well him as another and then I asked him with my eyes to ask again yes and then he asked me would I yes to say yes my mountain flower and first I put my arms around him yes and drew him down to me so he could feel my breasts all perfume yes and his heart was going like mad and yes I said yes I will Yes.''

বিরামচিহ্নের অভাব  কিছুটা ইচ্ছাকৃত -  চূড়ান্ত এবং সম্পূর্ণ যতিচিহ্ন পড়েছে উপন্যাসের শেষ অধ্যায়ে।  দ্বিতীয় দ্রষ্টব্যঃ  -  মলি ব্লুমের মন যেভাবে একটি ভাবনা থেকে ভাবনান্তরে চলাচল করছে, এবং  স্মৃতিতে অন্য এক ভাবনার দোলাচল  চলেছে তা যেন গদ্যের মতো ঝরঝরে, এক  নিঃশ্বাসে, বিরতিহীন ভাবে পড়ে ফেলা  যায়।এখানে যে  একটি বিরতি আছে, এক সাবলীলতা আছে যা আসলে একপ্রকার  এনার্কি (Anarchy); এখানে আমরা স্টিভেনসনে মধ্যে দেখতে পাই যা  অনুপস্থিত  উলফের মধ্যে।  

তবে এটি একটি চূড়ান্ত উদাহরণ:  চরমতম মগ্নচৈতন্য, বলা যেতে  পারে । জয়েসের উপন্যাসের এমন  অনেকগুলি উদাহরণ  রয়েছে যাকে মগ্নচৈতন্য  হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে :  

''Yes. Thought so. Sloping into the Empire. Gone. Plain soda would do him good. Where Pat Kinsella had, his Harp theatre before Whitbred ran the Queen’s. Broth of a boy. Dion Boucicault business with his harvestmoon face in a poky bonnet. Three Purty Maids from School. How time flies eh? Showing long red pantaloons under his skirts. Drinkers, drinking, laughed spluttering, their drink against their breath. More power, Pat. Coarse red : fun for drunkards : guffaw and smoke. Take off that white hat. His parboiled eyes. Where is he now? Beggar somewhere. The harp that once did starve us all.''

অবশ্য এই প্লটটি দ্বিধাহীনভাবেই  ''মর্ডানিস্ট''  বলে বোধ  হচ্ছে: পুরো কর্মকান্ডটি, যাকে  বলতে পারি ''অ্যাকশন '' (Action) কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ঘটেছে;  পুরো সময়কালে, একটি ঘটনা চলাকালীন কিছু  খণ্ডিত ক্রিয়া আবর্তিত হয়েছে,  এবং প্রকৃতপক্ষে এখানে বলার মতো সত্যিকারের কোনও 'ক্রিয়া' আদৌ সংঘটিত হচ্ছে কিনা তাও সন্দেহের উদ্রেক করে। সবথেকে  যা গুরুত্ত্বপূর্ন, মূল চরিত্রটির এখানে  চিহ্নিতকরণ সম্ভবপর হয় নি। মজার বিষয় হল, ডুজার্ডিনের স্ট্রিম অফ কনসাসনেসের   ক্ষেত্রে  গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব সাহিত্যের  ছিল না, ছিল সংগীতের: কিছুটা হলেও তা  ছিল সাহিত্য-প্রভাব বর্জিত।  তিনি ওয়াগনারিয়ান লেইটমোটিফের দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং উপন্যাসটিও তার অনুরূপ বা সমগোত্রীয় ছিল।

তবে বাস্তবে, আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে; চলে  যেতে হবে আরো দূরে, না ঠিক উনিশ শতকের সাহিত্যের আলোড়নের সময়কাল নয়,তার  থেকেও দূরে ,চেয়েও আরও পিছনে , দেখব এক চেতনার স্রোত;  মগ্নচৈতন্যের মধ্যে থাকা এক লেখনী যা প্রদর্শিত করেছে  অনুভবের কথকতাকে : 

...—I know I shall make nothing of it before I begin—I am no dab at your fine sayings in the first place—and in the next, I cannot for my soul set a grave face upon a bad matter, and tell the world—’tis the refuge of the unfortunate—the enfranchisement of the prisoner—the downy lap of the hopeless, the weary, and the broken-hearted; nor could I set out with a lye in my mouth, by affirming, that of all the soft and delicious functions of our nature, by which the great Author of it, in his bounty, has been pleased to recompense the sufferings wherewith his justice and his good pleasure has wearied us …

এই কি তবে  প্রকৃত অর্থে মগ্নচৈতন্য যদিও জেমস জয়েসের  উপন্যাসের গঠনরীতিতে সিনটেক্স যথাযথ, সম্ভবত কখনোই ''আউট অফ  প্লেস'' বলে ধরা যায় না । আর  এই অনুচ্ছেদের প্রত্যেকটি ''এলিমেন্ট'' যেন এক, প্রত্যেকটি চিন্তন উপাদান যেন আরো গভীরতর চিন্তন-মননের জগতের চেতনা-বিস্মৃত স্রোত বয়ে  চলে,- ''মগ্নচৈতন্য''- ''Stream of Consciousness'' এর স্রোত ; ''থিঙ্কিং আউট লাউড'' (thinking out loud); বড় গভীর চিন্তনের সেই পরিভাষা, কোনো উচ্চকিত শব্দ নয়, থাকে শুধু চেতনা। মগ্নচেতনার  এই ধ্যান হয়ত ঘুমের থেকেও গভীরতর ! সম্ভবত খুব বেশি আত্মমগ্ন এবং সময়ানুসারী, নিয়মানুবর্তী - এলোমেলো অথবা স্বতঃফূর্ত নয় কিছুতেই । হঠাৎ করে এর বিভ্রান্তিকরণ  স্বতঃস্ফূর্ত - জাগ্রত চৈতন্যের সমান।  যথেষ্ট বিচ্যুতিকরনের আভাস বিদ্যমান। জয়েসের ''মগ্নচৈতন্য'' এর  শ্রেণিকরনের সমরূপ, ক্লাসিফিকেশন এর অন্তর্গত  

তাহলে, মগ্নচৈতন্যের  ধারা আসলে কী ? কিভাবে টানব এর উপসংহার?  যেকোন আধুনিকতাবাদী আখ্যান কৌশল যাকে পরিচয় করাতে হবে মর্ডানিস্ট  ন্যারেটিভ  টেকনিক হিসেবে, তাকেই  কি  লেবেল করা হবে মগ্ন চেতনার ধারা হিসেবে? বোধহয় নয়, কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করব,  সাবধানে বেছে নেব এর সংজ্ঞাকে।    উপন্যাসের বা ছোটগল্পের পরিবর্ত ঘটনাক্রম, ব্যাপ্তি  বা এলোমেলো চিত্রণ , স্বতঃস্ফূর্ততা, চরিত্রের মনের বাঁক, কাহিনীর টুইস্ট আর টার্ন -  স্থির চিত্রের মতো এই জটিলতার  দিয়ে সন্ধান করতে হবে Stream of Consciousness' -স্ট্রিম অফ কনসাসনেস' এর ।  

পেঙ্গুইন  ডিকশনারি অফ লিটারারি টার্মস এন্ড লিটারারি থিয়োরিতে  (The Penguin Dictionary of Literary Terms and Literary Theory) উদাহরণ, এবং সাহিত্যের তত্ত্ব সাপেক্ষে  উদ্ধৃত শর্তাদির একটি ঝরঝরে সংক্ষিপ্তসার রয়েছে - কাকে বলে স্ট্রিম অফ কনসাসনেস। (যদিও উইলিয়াম জেমসকৃত শব্দবন্ধটির ব্যবহারিক উৎস কিছুটা হলেও আলাদা )। পেঙ্গুইন অভিধান আমাদের এও মনে করিয়ে দেয় যে, বিংশ শতাব্দীতে  এই শব্দবন্ধটি বা ধারাটি  সাহিত্য রীতির অন্তর্গত হলেও, এর আসল বা মূল কিন্তু তারও কিছু আগে দেখা গেছে। এডুয়ার্ড ডুজার্ডিনের ১৮৮৭  সালে প্রকাশিত  একটি উপন্যাস, লেস লরিয়ার্স সাঁ কোপে - ‘দ্য লরেলস আর কাট’ (Les lauriers sont coupés -‘The Laurels Are Cut’)    পাওয়া গেছে  স্ট্রিম অফ কনসাসনেস বা মগ্নচৈতন্যের  আভাস। উস্কে দিয়েছে মগ্নচেতনার স্রোতের উৎসকে।

 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

এডগার অ্যালান পো সিরিজ ১ l Edgar Allan Poe Series

এডগার অ্যালান পো এর "দ্য মার্ডারস ইন দ্য রু মর্গ"- “The Murders in the Rue Morgue” গোয়েন্দা গল্পের প্রথম আত্মপ্রকাশ হল এবং যাত্রা শুরু হল গোয়েন্দা কাহিনীর।  এডগার অ্যালান পো: Image Courtesy : pixabay  ১৮৪১ সালের প্রথম দিক তখন, এডগার অ্যালান পো (Edgar Allan Poe) ফিলাডেলফিয়ার এক জনপ্রিয় প্রকাশনা গ্রাহামস ম্যাগাজিনের (Graham’s Magazine) সম্পাদক হিসাবে কাজ করছেন, পত্রিকায় একটি গল্প জমা দিয়েছিলেন, বহু খেটে গল্পটি লিখেছেন পো, যার নাম ছিল "মার্ডার্স ইন দ্য রু ট্রায়ানন " - “Murders in the Rue Trianon.” প্যারিসের রাস্তার পাশে একটি বাড়িতে একটি ভয়ঙ্কর জোড়া-খুনের ঘটনা ঘটেছে। বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী নিশ্চিত করেছেন যে বাড়ি থেকে একজনের কণ্ঠস্বর শোনা গেছে, তবে একজন বক্তা ঠিক কী ভাষা ব্যবহার করছেন সে বিষয়ে কেউ একমত হতে পারছে না। ভাষার ধাঁধায় গুলিয়ে যাচ্ছে গোটা ঘটনা। বেশ কিছু ক্লুও পাওয়া গেছে, কিন্তু সেগুলো প্রতিটি পরবর্তীটির চেয়ে আরও বিভ্রান্তিকর। প্রতিবেশীরা আতঙ্কিত। পুলিশ বিভ্রান্ত। কিন্তু সি. অগাস্ট ডুপিন (C. Auguste Dupin) একজন শেভালিয়ার (chevalier) এব

বাংলা অণুগল্প- অনুগল্প সিরিজ /Bengali Story

অসীম আর মাধবীলতা অসীম.....এই যে এই দিকে, মাধবীলতা আবার ডাক দিলো,....... হ্যাঁ একদম ঠিক যাচ্ছ,......আমার হাতটা লক্ষ্য করে আস্তে আস্তে এগিয়ে এস, না না ওদিকে নয়.......ওদিকে কাঁটার ঝোপ......গায়ে ফুটে গেলে কেলেঙ্কারির একশেষ.....মাধবীলতা আর ভরসা রাখতে পারলো না, নিজেই এগিয়ে গিয়ে অসীমের হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে হাঁটতে লাগলো। অসীমের জামাকাপড় ভিজে জবজব করছে। একজায়গায় থামলো তারা, বেশ নির্জন, একটা বাড়ির ভিতরে ঢুকে এল। একটু পুরোনো বাড়ি কিন্তু বসবাসের যোগ্য। মাথাটা মুছে নাও, বেশ ভিজেছ, ঠান্ডা ব'সে গেলে জ্বর আসতে পারে....মাধবীলতা হাতের মুঠো ছেড়ে দিয়ে একটা গামছা এগিয়ে দিল। .অসীম গামছাটা নিয়ে সামনে খোলা জানালার বাইরের পুকুরটার দিকে তাকিয়ে রইল একদৃষ্টে। মাধবীলতার শাড়ির আঁচলের একটা অংশ একটু দেখা যাচ্ছে। ওদিকটায় বোধহয় কাঁটাঝোপ ছিল. কালকের মধ্যে দুটো লাশ ই ভেসে উঠবে আশা করা যায় । -------------------------------------------- ছ'য়ে ছটাক : অনুগল্প ১. জানালাটার গ্রিলের মধ্যে দিয়ে নিজের চার হাত পা বের করে দিল সে, এবার শেকল দিয়ে বাঁধার কাজ শুরু হবে। ২.আমার পেনের কালিটা ধীরে ধীরে শেষ

একটি প্রেমের গল্প : অমৃতা প্রীতম এবং সাহির লুধিয়ানভি / The love story of Amrita Pritam and Sahir Ludhianvi

প্রেমের গল্প। প্রেম ভাঙার গল্প। পাত্র-পাত্রী সাহির লুধিয়ানভি এবং অমৃতা প্রীতম। দিকপাল দুই সাহিত্যিক। কেমন ছিল সেই সম্পর্ক ? ''আমি তো জানতাম সাহির, তোমার কোনোদিনই আমার প্রতি প্রতিশ্রুতি রক্ষার কোনো দায় ছিল না । কি যেন বলে আজকাল ! ও হ্যাঁ , কমিটমেন্ট ফোবিয়া।  ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারবে কি না সেই দ্বিধাতেই তো রয়ে গেলে। কেন  যেন মনে হয় আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা  সেই গভীরতর  অতলান্ত  স্পর্শ করে নি কোনোদিন। ছুঁয়ে দেখেনি সেই ভালোবাসার তীব্র টানকে। আচ্ছা সত্যি করে বলো তো, তুমি কি সত্যি আমাকে ভালোবেসেছ  ? যতটা আমি তোমাকে বেসেছি।  "ম্যায়নে টুট  কে প্যায়ার কিয়া তুম সে / ক্যায়া  তুমনে ভী উতনা কিয়া মুঝ সে?'' অমৃতা প্রীতম এবং সাহির লুধিয়ানভি : Image Courtesy : Indian Express  ' ''মোহাব্বত কি পরখ  কা  ইয়েহি  তো রাস্তা  হ্যায় / তেরি  তালাশ মে নিকলু, তুঝে  না  পায়ু  ম্যায় '' । অমৃতা ভালোবাসা খুঁজেছেন, সেই আকুল করা ভালোবাসা,  হৃদয় তন্ত্রীতে সেই তীব্র ঝড় তোলা ভালোবাসা তাকেই তো খুঁজেছেন অমৃতা। পেয়েছেন কি ? খুঁজবো আমরা।  উপরের লাইনদুটি মজহা