সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আলোড়ন সৃষ্টি কারী এক ভারতীয় লেখক / When an Indian writer’s visit  in the US

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আলোড়ন সৃষ্টি কারী এক ভারতীয় লেখক / When an Indian writer’s visit  in the US



শরৎ কুমার ঘোষ, বিশ  শতকের প্রথম দিকের সাহিত্যিক। ‘first Hindu writer in English’-  'ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম হিন্দু লেখক' হিসেবে  খ্যাত হন যিনি। তবে এটাই কি ছিল বাস্তবতা, নাকি তার জীবনে আরও অনেক কিছুর গল্পকথার মতো, তাঁর সাহিত্যের ঘিরেও ছিল কল্পকাহিনী?

তাঁর আজানুলোম্বিত পোশাক, সুউচ্চ এবং বিস্তৃত পাগড়ি, সূক্ষ্ম সূচিশিল্প সমন্বিত  অভিজাত শাল এবং মুক্তার হারের ছড়া সহ, শরৎ ঘোষ , এক নাটকীয় কাহিনির নাটকীয় সূত্রধর রূপে ১৯১২ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি সাইবেরিয়া নামে জাহাজ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো তে অবতরণ করেন ।  একটি নাটকীয় চিত্র মনে দাগ কাটতে শুরু করে তখন থেকেই ।





মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আলোড়ন সৃষ্টি কারী এক ভারতীয় লেখক / When an Indian writer’s visit  in the US
                       শরত কুমার ঘোষ : Image Courtesy: Wikimedia Commons 




রাজা রাজড়ার মতো এত জমকালো আভরণ সত্ত্বেও তখনকার খবরের কাগজগুলো তাকে নিয়ে যথেষ্ট প্রশংসা করতে কুণ্ঠিত ছিল।  কারণ তিনি যে ঔপনিবেশিক ভারতের সন্তান! কিন্তু ইংরেজ উচ্চবিত্ত সমাজে এরকম গ্র্যান্ড এন্ট্রি নেবার পরে বলাই বাহুল্য প্রশংসা আদায় করে নিয়েছিলেন তিনি,  অভিজাত ও প্রাচুর্যপূর্ণ পরিচয় জ্ঞাপক তারা ভারতীয় লেখকের চিত্তাকর্ষক চেহারা এবং সুপ্রতিষ্ঠিত প্রমাণপত্রের দলিলকে প্রামাণ্য বলে ধরে নিয়েছিল।  তাঁর উপন্যাস, দ্য প্রিন্স অফ ডেসটিনি - "The Prince of Destiny",  যখন তিনি বিশের কোঠায়, তখন প্রকাশিত হয়েছিল, এবং যথারীতি ব্রিটিশ অভিজাত সমাজকে প্রভাবিত করেছিল।  তিনি অক্সফোর্ড এবং কেমব্রিজে পড়াশোনা করেছিলেন এবং রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির একজন ফেলো ছিলেন। সেই সময় কিছু পত্র পত্রিকা তাকে লন্ডনে স্বীকৃত "ইংরেজিতে প্রথম হিন্দু লেখক" - “first Hindu writer in English” হিসাবে উল্লেখ করে।


বিশদ বিবরণের অনুপস্থিতি কিছু অতিরঞ্জন ঘটায় বটে, কিন্তু শরৎ ঘোষ, যাকে সংবাদপত্র শীঘ্রই প্রিন্স হিসাবে উল্লেখ করতে চলেছিল - তিনি একটি রাজ পরিবারের (কলকাতার নিকটবর্তী ঘোষপাড়া) বংশোদ্ভূত বলে দাবি করেছিলেন - বেশ একটা নতুনত্ব ছিল  ব্যাপারটিতে, তখনকার নিরিখে, এবং তার বক্তৃতাগুলিও ব্যাপক মনোযোগ পেয়েছিল সেই কারণে।

লস অ্যাঞ্জেলেসের এক সংবাদ পত্র শহরে তৎকালীন সময়ের বর্ণনা করার জন্য যে লেখা অবলম্বন করেছে: 

There’s a preening of fine feathers and a running in and out, 

For the nephew of a raja is sojourning hereabout 

And all the social highlights have little artless ways 

To attract the royal presence and enjoy the royal gaze. 

— ‘The Record’, Los Angeles, March 27, 1912.



Princely’ - প্রিন্সলি লেকচার


তাঁর প্রথম বক্তৃতা ছিল রাজ দরবার সম্পর্কে, ১৯১১ সালে দিল্লিতে ব্রিটেনের রাজা পঞ্চম জর্জ এবং রানী মেরির জন্য একটি চিত্তাকর্ষক স্বাগত অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ হয়েছিল,  বক্তৃতাগুলির সাথে ছিল চার্লস আরবানের কাইনেমাকালার (kinemacolor) ফিল্ম  ‘Durbar’- 'দরবার', যা একটি নতুন ধরণের কালার মোশন ফিল্টার প্রক্রিয়ায় তৈরি।  শরৎ ঘোষের দাবি ছিল যে তিনি দিল্লি দরবার সম্পর্কে বিস্তর ভাবনা চিন্তা করছিলেন - এবং এর রঙিন সমারোহের অর্থ ছিল আনুগত্য এবং একই সঙ্গে এর প্রতিরোধের উপর জোর দেওয়া -  যা কিনা বক্তৃতার বিষয় হিসাবে তাঁর উপন্যাস লেখার সময় কালকে তুলে ধরেছিলেন ১৯০৯ সালে লন্ডনে প্রকাশিত হওয়া দ্য প্রিন্স অফ ডেসটিনিতে।


তাঁর বক্তৃতার আরেকটি বিষয় ছিল ভারতীয় নারী।  সে সময় বেশ কয়েকটি ক্যালিফোর্নিয়ার সংবাদপত্র তার আলোচনার প্রতিবেদন করেছিল,   ভারতীয় মহিলাদের নিম্ন স্তরের শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন তিনি এবং তবুও তারা নাকি তাদের পশ্চিমের সমকক্ষদের তুলনায় কতটা সৌভাগ্যবান ছিকেন, কারণ ভারতীয় ঐতিহ্য মহিলাদেরকে সম্মানিত করে এবং পরিবার ও বাড়ির মধ্যে তাদের সম্মান দেয়!  প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগের বছরগুলিতে, যখন তিনি সারা মার্কিন  যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ভ্রমণ করছিলেন - সিয়াটল থেকে শিকাগো এবং তারপরে নিউ ইয়র্ক - সংবাদপত্র এবং তাঁর বক্তৃতাগুলো শ্রোতাদের ভারত এবং বিশ্ব এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের ভূমিকা সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরী করতে থাকে। কৌতূহল প্রকাশ করতে থাকে জনগণ, সেখানকার সংবাদপত্র গুলি,  তাঁর বক্তৃতাগুলি ভারত সম্পর্কে এক তীব্র অনুসন্ধিৎসা তৈরী করে, নতুন করে আগ্রহ তৈরী হয়৷



‘Prince’  - 'প্রিন্স ' শরৎ ঘোষ, প্রকৃতপক্ষে, ভারতীয়দের মধ্যে সেই প্রথম দলভুক্ত যারা - ভ্রমণকারী, পণ্ডিত, লেখক এবং গদর পার্টির সদস্য - যিনি লেকচারার হিসাবে দ্বিতীয়বার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন, ভারত সম্পর্কে কথা বলার জন্য আমেরিকা জুড়ে ভ্রমণ করেছিলেন।  এই সাফল্য ঘোষকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায় -   “the only Indian writer on social and economic subjects who has been accepted in India and England”।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণকালীন তার প্রথম বছরগুলিতে, তিনি ভারতে আমেরিকার বাণিজ্য বৃদ্ধির  কথা বলেছিলেন। ভারত কে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাজার হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। ১৯১৪ সালের আগস্টে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই, ইংরেজ কর্মকর্তারা ব্রিটিশ-ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ভারতীয়দের আনুগত্য নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে শুরু করে, শরৎ ঘোষ খিলাফতের সমর্থনে মুসলিম সৈন্যদের বিদ্রোহ করার সম্ভাবনাকে গুজব বলে উড়িয়ে দেন।  তিনি এই বিদ্রোহের সম্ভাবনা কিংবা ভয়কে  “Kipling Gang” –"কিপলিং গ্যাং"-এর কাজ হিসাবে বর্ণনা করেন - রুডইয়ার্ড কিপলিং, একজন লেখক যাকে তিনি উপহাস করেছিলেন।  যেমনটি তিনি ১৯১৪ সালের নভেম্বরে বলেছিলেন, “All of his books on India have been false. His falseness is due to ignorance or malice. The only book he ever wrote that was not false was Kim and there are many bad chapters in that.”।


শরৎ ঘোষ প্রায়ই একটি বক্তৃতা প্রদান করতেন, যার শিরোনাম ছিল “Marvels of India”, - "মার্ভেলস অফ ইন্ডিয়া",  “ancient Hindu engineering marvels” - "প্রাচীন হিন্দু প্রকৌশলী বিস্ময়" বর্ণনা করার জন্য তথ্য এবং চিত্র ব্যবহার করতেন, যেমন সুবিস্তৃত প্রাচীর খোদাই, গুহাগাত্র খোদাই  এবং চিত্রকলা সহ পাহাড় থেকে নির্মিত মন্দির (অজন্তা এবং ইলোরার প্রসঙ্গ এখানে উল্লেখ্য)।  তিনি সপ্তদশ শতকের তাজমহল সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দিয়ে বক্তৃতাটি শেষ করতেন -  “17 years and involved 40,000 artisans”।


উপন্যাস লেখার পাশাপাশি, শরৎ ঘোষ আমেরিকান জার্নাল অ্যাডভেঞ্চার এবং পিয়ারসনে-এ বেশ কিছু কল্পকাহিনী প্রকাশ করেন। উপন্যাস খুবই পরিচিতি লাভ করে। পিয়ারসন্স-এ তার লেখায় প্রায়ই এক রাজার কথা পাওয়া যায়,  ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন রাজকীয় ব্যক্তিত্ব, যিনি আমেরিকার জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে তৎপর হয়েছিলেন।  উদাহরণস্বরূপ,“The Rajah’s Knight Move” -  "দ্য রাজার নাইট মুভ", একজন লোভী শিল্পপতির গল্প বলে যে দাবা খেলা চালিয়ে গিয়েছিল যখন তার কারখানায় কাজ করা মহিলা এবং শিশুরা  আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিল।  আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো ব্যবস্থাই ছিল না সেখানে। রাজা নিজেকে আধুনিক সময়ের হারুন আল-রশিদ, বাগদাদের কিংবদন্তি খলিফা হিসাবে ভাবতে ভালোবাসতেন।  তাঁর গল্পের অনুসন্ধানে তাকে সহায়তা করেছিলেন তার আমেরিকান বাটলার বা ওয়াজির, রালফ চ্যাটারটন (Ralph Chatterton)। রাম পারশাদ, একজন ভারতীয় জাদুকর এবং জাদুকর এবং রাল্ফের স্ত্রী হেলেনের মতো চরিত্রগুলিকে নিয়ে বিস্তর ভাবনা চিন্তা করেছেন।



হারুন আল-রশিদ একটি গল্পে হাজির হয়েছেন যেটি শরৎ ঘোষ লিখেছিলেন অ্যাডভেঞ্চার জার্নালের জন্য, সাথে আছে মূলরাজ নামে একজন শিকারী।  শরৎ ঘোষ লিখেছেন একটি সূচনা,  রাজপ্রাসাদে কাটানো শৈশব বর্ণনা করেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য অনুসারে,  তিনি নাকি  প্রায়শই ইউরোপ এবং এশিয়ার মধ্যে ভ্রমণ করতেন। একটি ইংরেজি ম্যাগাজিনে বাঘ সম্পর্কিত  দুঃসাহসিক বর্ণনা সম্বন্ধিত একটি গল্প পাঠিয়েছিলেন আর এরপরই তিনি লিখতে  শুরু করেছিলেন প্রচুর বাঘের গল্প (“Some Real Tiger Stories”,  - "সত্যি বাঘের গল্প " -  কর্নহিল ম্যাগাজিন,  ১৮৯৮)।  এটি শুধুমাত্র কল্পকাহিনী হিসাবে গৃহীত হয়েছিল, যদিও শরৎ ঘোষ জোর দিয়েছিলেন যে তার সমস্ত গল্পই নাকি সত্য।  তিনি প্রায়শই শিকারীদের সাথে জঙ্গলে চলে যেতেন এবং শিকারী মূলরাজ নাকি ছিলেন বাস্তব জীবনে এক সত্যিকরের চরিত্র যাকে তিনি চিনতেন!   শরৎ ঘোষ লিখেছেন, ১৫ বছর বয়সের মূলরাজ ছিলেন একজন "শিক্ষার্থী ফরেস্ট রেঞ্জার" -  “apprentice forest ranger”  এবং ২৫ বছর বয়সের মধ্যে তিনি একজন  সর্প বিশেষজ্ঞ/ সাঁপুরে এবং একজন পূর্ণ সময়ের শিকারী উঠেছিলেন,  যিনি দারুশিল্পও জানতেন এবং জঙ্গলকে চিনতেন হাতের তালুর মতো ।



হারুন আল-রশিদ এবং মুলরাজ ঘোষের  মতো  চরিত্ররা  ম্যাগনাম ওপাস, দ্য প্রিন্স অফ ডেসটিনি-তেও উপস্থিত হয়েছিলেন, যা লন্ডনে প্রকাশিত হয়েছিল।  প্রচুর আগ্রহী পাঠক তৈরী হয়েছিল। এই উপন্যাসে ভারত, একজন ইংল্যান্ড-শিক্ষিত ঐতিহ্যশালী রাজপুত্রকে দেখানো হয়েছে,  যিনি তার ছোট রাজ্যকে শান্তিপূর্ণভাবে স্বাধীনতার স্বাদ দিতে বদ্ধপরিকর।  এটি পূর্ব-পশ্চিম সংঘর্ষের বর্ণনা সমৃদ্ধ প্রথম উপন্যাস হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল।


তার অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে দুই ভলিউমে ওয়ান্ডার অফ দ্য জঙ্গলল্যান্ড - Wonders of the Jungleand, 1001 Indian Nights: The Trials of Narayan Lal (1906) - ইন্ডিয়ান নাইটস: দ্য ট্রায়ালস অফ নারায়ণ লাল (১৯০৬) - রাজকন্যাকে প্রেম করার অপরাধে  মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত এক  পরিচারকের গল্প, নিজেকে বাঁচাতে, লালকে ২১ দিনের মধ্যে অসংখ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে একটি বিষাক্ত সাপের সাথে লড়াই করা, কুখ্যাত ঠগদের বিরুদ্ধে লড়াই করা, আগুনের উপর দিয়ে হাঁটা এবং মারাত্মক বিষ খাওয়া।  


শরৎ ঘোষের প্রথম দিকে প্রকাশিত রচনাগুলির মধ্যে ছিল তার নোট যা ১৯০১ সালে প্রকাশিত এডমন্ড ওয়ারেন রাসেলের (Edmund Warren Russell) দ্য আর্টস অফ ইন্ডিয়ার ( The Arts of India ) মধ্যে ছিল। রাসেল, ক্যালিফোর্নিয়ার একজন কবি এবং অভিনেতা, ১৯০০-১৯০১ সালে ভারত সফর করেছিলেন এবং মঞ্চে হ্যামলেট অভিনয় করেছিলেন।  ঝলমলে পোশাক , একটি বিস্তৃত পাগড়ি, আকর্ষণীয় গহনা পরিপূর্ণ পরিধানের এমন ছটা  সম্ভবত শরৎ ঘোষকে আকৃষ্ট করেছিল। তাই পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে বক্তৃতা পেশ  করবার  সময় এমনই অবতারে অবতীর্ণ হতেন ! অনুপ্রেরণা হিসাবে রাসেলকে পেয়েছিলেন! 



জীবনের শেষ রহস্য



যদিও তিনি ইংল্যান্ডে প্রথম দিকে সাফল্য পান, কিন্তু শরৎ ঘোষ সেখানে বেশি দিন থাকেননি।  তিনি সম্ভবত বিশ শতকের প্রথম দিকে লন্ডনে চলে গিয়েছিলেন, যেখানে তিনি অ্যালিস মেনেলের (Alice Meynell) মতো একজন পৃষ্ঠপোষক খুঁজে পেয়েছিলেন, একজন কবি এবং মানবাধিকার কর্মী যিনি ভোটাধিকারের কথা বলতেন,  যিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলতেন।  ১৯১২ সাল নাগাদ, তিনি কলকাতা থেকে হংকং হয়ে সেখানে কিছু সময় ভ্রমণের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার নিজস্ব আস্তানা তৈরী করেন।  অভিনেতা এবং শিল্পী হ্যারিয়েট সোলে-মোর্লের (Harriet Soley-Morle) আমন্ত্রণে শরৎ ঘোষের সাহিত্য আস্তানা  তৈরি হয়েছিল।


১৯১৪ সাল থেকে, শরৎ ঘোষ প্রধানত নিউইয়র্কে থাকতেন, গ্রামারসি পার্কের একটি বোর্ডিং হাউসে থাকতেন তিনি।  তিনি মাঝে মাঝে বক্তৃতা দিতেন সেই সময় ।  মহিলাদের  অনুরাগীনি  তৈরী হয়েছিল তাঁর, তাদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকতেন,  জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।  তিনি “America’s role in the world” - "বিশ্বে আমেরিকার ভূমিকা" এবং “attainment of Nirvana” -  "নির্বাণ অর্জন" এর মতো বিভিন্ন বিষয়ে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তবে “spirit writing”- "আত্মা লেখা" এর মতো জনপ্রিয় বিষয়গুলিতেও আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তাঁর একজন পৃষ্ঠপোষক ও লেখক পার্ল লেনোর কুরান (Pearl Lenore Curran),  দাবি করেছিলেন যে তিনি প্রায় ৩০০ বছর আগে মারা যাওয়া একজন আত্মার সংস্পর্শে থাকাকালীন তার কবিতা লিখেছিলেন!


খুব আবছাভাবে যা শোনা যায় যে, তার মৃত্যুর  কিছুসময় আগে, শরৎ ঘোষ সাইবেরিয়ার বলশেভিক বিরোধী সরকারের পশ্চিম গোলার্ধের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করছিলেন।  ১৯১৮ সাল নাগাদ স্থাপিত এবং অ্যাডমিরাল ভ্যাসিলিভিচ কোলচাকের ( Admiral Vasilyevich Kolchak) নেতৃত্বে সরকার পশ্চিমের সাহায্যে এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু  তা শুধুমাত্র ১৯২০ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল, এবং শরৎ ঘোষের ভূমিকাও তুলনামূলকভাবে অস্পষ্ট, যদিও তিনি ‘Siberia and Asiatic Russia; Marvels of its Natural Resources’ - ‘সাইবেরিয়া এবং এশিয়াটিক রাশিয়া;  এর প্রাকৃতিক সম্পদের বিস্ময়' এর উপর কিছু বক্তব্য রাখেন, যা কিছুটা হলেও অদ্ভুত।


শরৎ ঘোষ মারা যান ১৯২৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে, সারা বিশ্বে স্প্যানিশ ফ্লুতে আক্রান্ত লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু  হচ্ছিল সেই সময়, আর সেই  মৃত্যুর শিকারের একজন ছিলেন তিনি।  কিছু বছর পরে, ১৯২৪ সালে, নিউইয়র্কের একজন আন্ডারটেকার একটি বিজ্ঞাপন জারি করেন এই মর্মে যে, মর্চুয়ারিতে একটি কলসে রাখা শরৎ ঘোষের চিতাভস্ম এর দাবিদারের সন্ধান করা হচ্ছে।  বেশ কয়েকজন নারী তাদের নিজস্ব গল্প নিয়ে এগিয়ে আসেন সেই সময়।  ব্রডওয়ের একজন নৃত্যশিল্পী এবং  ভাস্কর আইরিন মার্সেলাস (Irene Marcellus) প্রকাশ করেছিলেন যে শরৎ ঘোষ একবার তাকে প্রেম প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু আইরিন প্রত্যাখ্যান করেন।  ঘোষ স্পষ্টতই তার ভাগ্য যেন ছেড়ে দিয়েছিলেন আইরিনের জন্য– পরে প্রকাশ পেয়েছিল পাঁচ হাজার ডলার – আইরিন এবং তার বোন ভায়োলেটকে দিয়েছিলেন তিনি।  শিকাগোর একজন কবি নাহামি ক্রুপও (Nahami Krupp) দাবি করেছিলেন যে শরৎ ঘোষ তাকে প্রেমপত্র পাঠিয়েছিলেন।  তাঁর এক পৃষ্ঠপোষক, মিসেস বেহর (Mrs. Behr) তাঁর ইচ্ছানুযায়ী, গঙ্গা নদীতে শরৎ ঘোষের ছাই ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ভারত ভ্রমণের ইচ্ছা পোষণ করেন।  তারপরে, নোনা স্মিথ গোল্ড (Nona Smith Gould), একজন চিকিত্সক এবং ভোটাধিকার কর্মী, যিনি শরৎ ঘোষের ইচ্ছার নির্বাহক হিসাবে তার চিতাভস্মের অধিকার নিজেই নিতে চেয়েছিলেন।


শরৎ ঘোষের জীবনের বাকী অংশের মতো, শেষ জীবনও  রহস্যে আবৃত।  এমনই ভাগ্য যে,  দেহাবশেষটিও দাবি কেউ দাবি করে নি এবং শেষ পর্যন্ত আন্ডারটেকারের দ্বারা সমাহিত করা হয়।   একটা সম্ভাবনা মাত্র,  শরৎ ঘোষ আসলে সেই মানুষ ছিলেন কি যা বলে তিনি নিজেকে দাবি করেছিলেন!  কলকাতা থেকে তার সমসাময়িক এক ব্যক্তি, যিনি তার নাম শরৎ ঘোষ বলে দাবি করেছেন, ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে যোগদানের আগে ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন।  এটা হতে পারে যে শরৎ ঘোষ যখন আমেরিকাতে বক্তৃতা দিচ্ছেন, সংবাদপত্র দুটি নিজেরাই বিভ্রান্ত হয়েছিল, কিংবা ইচ্ছাকৃত ভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল, আর শরৎ ঘোষও এই বিভ্রান্তি কাটানোর চেষ্টাই  করেন নি, কিন্তু এটিও তো অনুমানের বিষয়!

---------------------------------------------------------------------------------------------------------

অন্যান্য নিবন্ধ 


'ইন্ডিয়ান টাইটানিক ' - যা ডুবে গেছিল জাপানীদের দৌলতে / ‘Indian Titanic’ Sunk By The Japanese 




জাপানিরা ডুবিয়ে দিয়েছিল এক ভারতীয় জাহাজকে। সেই ডুবে যাওয়া জাহাজকে কী বলব? 'ইন্ডিয়ান টাইটানিক'   বলা যেতে পারে। ১৯৪২ সালের নভেম্বরে, এস এস তিলাওয়া (ss tilawa) মোম্বাসা যাচ্ছিল আর এই যাওয়ার পথেই ঘটে দুর্ঘটনা। ছিল যখন ইম্পেরিয়াল জাপানি নৌবাহিনীর আই - ২৯ ( i-29) সাবমেরিন  টর্পেডো হানে। প্রাণ হারিয়েছিল ২৮০ জন। 



২৭ শে নভেম্বর, ১৯৪২ সাল, এইচএমএস বার্মিংহাম নামের জাহাজ বোম্বাইয়ের ব্যালার্ড পিয়ারে পৌঁছয়। ৬৭৮ জন  আরোহীকে ভারতে নিয়ে এসেছিল সেই জাহাজ।  ভারত মহাসাগরে একটি ভয়ঙ্কর ট্র্যাজেডি থেকে বেঁচে ফেরার পরে এই জাহাজে আশ্রয় পেয়েছিল তারা;   ট্রমাগ্রস্ত এবং ভয়ংকর ক্লান্তি গ্রাস করেছিল তাদের । তাদের বয়ানানুসারে, এক  জাহাজ যাত্রায় গন্তব্যপথে, যে যাত্রায় তারাও ছিল যাত্রী,   ২৮০  মানুষের জীবন হানি ঘটে। দাবি করা হয়, হত্যা করা হয়েছিল এই নিরপরাধ মানুষগুলোকে। কোনো মতে বেঁচে ফিরেছে শুধু এই এইচ এম এস বার্মিংহামে করে ফেরা যাত্রীরা।


এই ঘটনার মাত্র এক সপ্তাহ আগে, এই যাত্রীরা, যাদের মধ্যে বেশির ভাগই ভারতীয়, আফ্রিকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।  কিছু স্বপ্ন পূরণের জন্যই হয়ত সেই দূর বিদেশে যাত্রা করার ইচ্ছা! হয়ত ভালো রোজগারের সুযোগ এসেছে, হয়ত আরও কিছু কারণ।  বোম্বে থেকে যাত্রা শুরু করেছিল এসএস তিলাওয়াতে, মোট ৭৩২ জন যাত্রী সমেত।   ডারবানে যাওয়ার আগে মোম্বাসা এবং মাপুটো ছুঁয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল জাহাজটি।   বিভিন্ন ধর্ম ও জাতির মানুষজন, ভিন্ন তাদের আশা, ভিন্ন তাদের ভবিষ্যত, উন্নত জীবন গড়ার আশায় একত্রিত হয়েছিল জাহাজঘাটায়,  একটি অন্য রকম সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল বেষ্টিত  অজানা মহাদেশে চলেছিল সবাই। সেটা এমন একটা সময়  যখন পৃথিবীতে  বিশ্ব যুদ্ধে চলছে, আর ভারত তখনও পরাধীন।





ইন্ডিয়ান টাইটানিক ' - যা ডুবে গেছিল জাপানীদের দৌলতে / ‘Indian Titanic’ Sunk By The Japanese
SS Tilawa: Image Courtesy: Wikimedia Commons 





যুদ্ধের কারণে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া স্টিম নেভিগেশন কোম্পানিকে (british india steam navigation company) ১৫ দিনের  পরিষেবা কমিয়ে ছয় বা আট সপ্তাহের মধ্যে একবার করে দিয়েছিল। যুদ্ধের কারণেই  বাধ্য হয়ে তা করা। তাই তিলাওয়াতে টিকিটের চাহিদা ছিল প্রচুর। চুনিলাল নাভসারিয়া (Chunilal Navsaria),  জাহাজের একজন যাত্রী, দক্ষিণ আফ্রিকার সিআইআই (CII) রেডিওকে ২০০৭ সালের একটি সাক্ষাত্কারের বর্ণনা -  “South African residents were becoming frantic as they had to return home within three years or lose their rights to enter South Africa,” - দক্ষিণ আফ্রিকার বাসিন্দারা উন্মত্ত হয়ে উঠছিল কারণ তাদের তিন বছরের মধ্যে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল বা দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবেশের অধিকার হারাতে হয়েছিল । আরও বলা হচ্ছে, “There was a long waiting list and the demand for passage was so great, the sub-agents were bribed to secure passage tickets. Many people were stranded in bombay hi   ng that their name would come up on the waiting list.”- একটি দীর্ঘ ওয়েটিং লিস্ট ছিল এবং টিকিটের চাহিদা এত বেশি ছিল যে সাব-এজেন্টকে টিকিট সুরক্ষিত করার জন্য ঘুষ দেওয়া হতো।  অনেক লোক বোম্বেতে অপেক্ষা করছিল, এই আশায় যে তাদের নাম ওয়েটিং লিস্টে উঠবে।



আফ্রিকার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া যাত্রীদের মধ্যে নভসারিয়া, আগের দিন গুজরাট থেকে দুরন্ত গতির রানি এক্সপ্রেসে চড়ে (বর্তমানে যা অস্তিত্বহীন) ব্যালার্ড পিয়ার মোল রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছন । গুজরাটের অন্যদের মধ্যে যারা  ২০শে নভেম্বর, ১৯৪২-এ বোম্বেতে তিলাওয়ায় চড়েছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন ভাবনগর জেলার মোরবা গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল আলি ধানসে ।




ব্রিটিশ ইন্ডিয়া স্টিম নেভিগেশন দ্বারা চালিত সমস্ত জাহাজের মতো,  তিলাওয়ার ক্ষেত্রেও তার বিভিন্ন যাত্রীদের ভিন্ন ভিন্ন খাদ্য তালিকা প্রস্তুত হতো, প্রত্যক যাত্রীর চাহিদা অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করা হতো। নীচের ডেকগুলিতে হিন্দু নিরামিষ এবং মুসলিম আমিষ রান্নাঘর এবং খাবারের জায়গা ছিল। যদিও  প্রথম শ্রেণির  ইউরোপীয় যাত্রীরা একটু বেশিই যত্ন পেত। সেই অনুযায়ী উৎকৃষ্ট খাদ্য ও পানীয়, আর্দালি পরিষেবাগুলি একচেটিয়াভাবে  তাদের জন্যই রক্ষিত থাকত ।  




বিকাল ৫টায়, তিলাওয়া বোম্বে থেকে রওনা হয় ২২২ জন  সদস্য বা ক্রু মেম্বার,  ৭৩২ জন যাত্রী, ৪ জন বন্দুকধারী নিরাপত্তারক্ষী সহ, আর ছিল ৬,৪৭২ টন কার্গো, যার মধ্যে ছিল ৬০ টন সিলভার বুলিয়ন।  নাভসারিয়ার মতো বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের বিবরণ থেকে জানা যায় যে, সব যাত্রীরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারত মহাসাগরে জাহাজ চালানোর সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে মোটামুটিভাবে সচেতন ছিল।



সেই প্রসঙ্গে নাভসারিয়া বলছেন, “Once at sea, a boat drill was carried out and we were told not to light matches or torches on the upper deck,” - সমুদ্রে, একটি বোট ড্রিল করছিল এবং আমাদের বলা হয়েছিল যে উপরের ডেকে ম্যাচ বা টর্চ জ্বালাবেন না। নাভসারিয়ার আরও বক্তব্য, “There was a blackout on the ship. The portholes were painted black and kept shut at night. There was a constant fear amongst passengers and crew of an enemy submarine attack. I made sure that i kept a life jacket close at hand.”- জাহাজে একটি ব্ল্যাকআউট ছিল.  পোর্টহোলগুলি কালো রঙ করা হয়েছিল এবং রাতে বন্ধ রাখা হয়েছিল।  শত্রুর সাবমেরিন আক্রমণের ভয় যাত্রী ও ক্রুদের মধ্যে ক্রমাগত বাড়ছিল।  আমি নিশ্চিত করেছিলাম যে  একটি লাইফ জ্যাকেট যেন হাতের কাছে  রাখা থাকে।



১২ নট সর্বোচ্চ গতিতে যাত্রা শুরু করে এস এস তিলাওয়া। সমুদ্রযাত্রার প্রথম কয়েক দিনে অবশ্য তেমন ঘটনাবহুল কিছুই ঘটেনি।



আক্রমণের রাত


২৩ শে নভেম্বর, তিলাওয়াকে সেশেলসের কাছে ইম্পেরিয়াল জাপানি নৌবাহিনীর আই - টোয়েন্টি নাইন (i-29) সাবমেরিন দ্বারা টর্পেডো হানা হয়।  tilawa1942.com নামে একটি ওয়েবসাইটে (ট্র্যাজেডির স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য ওয়েবসাইট) প্রকাশিত একটি সাক্ষাত্কারে ইসমাইল আলি ধনসে-এর নাতি, গুলাম ধনসে (goolam dhansay) বক্তব্য অনুযায়ী, “late at night the people on board were awoken by a loud bang,”  -  গভীর রাতে জাহাজে থাকা মানুষজন একটি বিকট শব্দে জেগে উঠেছিল।



সেই রাতের ঘটনা গুলাম ধনসে তার আত্মীয়ের কাছ থেকে জানতে পারেন। “this was the sound of a torpedo being shot at the ship by a japanese submarine,” -  এটি জাপানি সাবমেরিন দ্বারা জাহাজে টর্পেডো ছোঁড়ার শব্দ ছিল। তার আরও বক্তব্য - “a sos was sent by the first officer.everybody panicked. realising that the ship was sinking, all the people on board rushed to the lifeboats. however, there was not enough space. many were unfortunate and fell into the sea and drowned. the remaining few who were still alive managed to stay afloat by holding onto wreckage of the ship.” - প্রথম অফিসার  একটি এসওএস পাঠিয়েছিল।  সবাই আতঙ্কিত তখন।  জাহাজটি ডুবে যাচ্ছে বুঝতে পেরে জাহাজে থাকা সমস্ত লোক লাইফবোটের দিকে ছুটে গেল।  তবে পর্যাপ্ত জায়গা ছিল না।  অনেকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সমুদ্রে পড়ে ডুবে মারা যায়।  বাকি কয়েকজন যারা তখনও জীবিত ছিল তারা জাহাজের ধ্বংসাবশেষের  টুকরো ধরে ভেসে থাকতে পেরেছিল।



নভসারিয়ার স্পষ্টভাবে মনে আছে ঠিক কী হয়েছিল : “there was chaos and panic among the passengers and indian crews (khalasis) as they all headed to the upper boat saloon decks. everyone was scrambling and stamping about as they tried to climb up the stairs, i was pushed and jolted from one end to the other. before i knew it, i was hurling down the stairs and injured myself. the ship’s indian crew and deck passengers were all panic strickened. the chaos, hysteria and panic were causing the rescue operation to be hampered.”  -  যাত্রী এবং ভারতীয় ক্রুদের  বা খালাসিদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল । তারা সবাই উপরে বোটের সেলুন ডেকের দিকে যাচ্ছিল।  সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার চেষ্টা করাছিল সবাই।  সবাই ধাক্কাধাক্কি করছিল আর আমাকে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল। কিছু বোঝার আগেই, আমি সিঁড়ি দিয়ে নিচে পড়ে গিয়েছিলাম।  আহত হয়েছিলাম।  জাহাজের ভারতীয় ক্রু এবং ডেকের যাত্রীরা সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।  বিশৃঙ্খলা, হিস্টিরিয়া এবং আতঙ্কের কারণে উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছিল।



নভসারিয়া একটি অর্ধ-পূর্ণ লাইফবোটে উঠতে সক্ষম হয়, কিন্তু সেই প্রক্রিয়ায়ও  নিজেকে আহত করে ফেলে।  তার নৌকা, যাতে যাত্রী এবং ক্রু সদস্য উভয়ই ছিল, আস্তে আস্তে দূরে চলে যেতে থাকে।


tilawa1942.com দ্বারা প্রকাশিত অন্য একটি সাক্ষাত্কার। প্রভিন জীবন (Pravin Jivan) যার বাবা মোরার সমুদ্র যাত্রায় গিয়েছিল, আর যে জাহাজের যাত্রীরা মহামারির কবলে পড়েছিল। নিজের সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন-  “[as] my father started wandering from deck to deck, he noticed that passengers on [the] upper deck with cabins were locked in their cabins as the locks got jammed due to [the] torpedo,” - আমার বাবা এক ডেক থেকে অন্য ডেকে ঘুরে বেড়াতে শুরু করেছিল, আর লক্ষ্য করেছিল যে  টর্পেডোর কারণে তালাগুলি জ্যাম হয়ে যাওয়ায় কেবিন সহ উপরের ডেকের যাত্রীরা তাদের কেবিনে তালাবন্দী হয়ে গেছিল।



জীবন আরও বলেছেন, “my father took the fire axe and tried to smash the doors; it took him [a] long time to open [a] couple of cabins. in panic, he left to search for his escape. then he saw a crew member pushing a raft out.” - আমার বাবা কুড়াল নিয়ে দরজা ভাঙার চেষ্টা করেছিল;  দুয়েকটি কেবিন খুলতে তার  দীর্ঘ সময় লেগেছিল।  আতঙ্কে, সে তখন পালানোর রাস্তার সন্ধান করতে থাকে।  তারপর তিনি দেখলেন একজন ক্রু সদস্য একটি ভেলাকে ধাক্কা দিয়ে জাহাজ থেকে বের করে দিচ্ছে। তার বাবা সাগরে ঝাঁপ দেয়। জীবন বলছেন,  “at first, he went straight in but floated back up as he was wearing a life jacket,” - প্রথমে,  সরাসরি জলের ভিতরে চলে গেলেও  লাইফ জ্যাকেট পরা থাকায় আবার ভেসে উঠতে পারল সে।  জীবন যোগ করেছে,  “luckily the raft was at arm’s length. with great struggle he managed to climb on it.” -  ভাগ্যক্রমে ভেলাটি দৈর্ঘ্যে এক বাহু  ছিল।  প্রচণ্ড সংগ্রাম করে  তাতে আরোহণ করতে সক্ষম হয় সে।


প্রথম টর্পেডো উৎক্ষেপণের এক ঘন্টা পরে, জাপানি সাবমেরিন আবার গুলি চালায়। আর  এটি তিলাওয়া ডোবানোর জন্য যথেষ্ট ছিল।


এই টর্পেডো হানার পেছনে জাপানি ইম্পেরিয়াল নৌবাহিনীর আসল উদ্দেশ্য আজও অস্পষ্ট। সেই দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা মানুষজনের অনুমান  যে  জাহাজে ধনরত্ন থাকার জন্য সেটি আক্রান্ত হয়েছিল।  তবে জাপানিরা কেন তিলাওয়াকে দখল করার পরিবর্তে এটিকে ডুবিয়েছিল তার কোনও ব্যাখ্যা নেই।


ট্র্যাজেডিতে দুশ আশি জন লোক মারা গিয়েছিল, ভারত মহাসাগরের গভীরে যেন একটি জলাবদ্ধ কবর তৈরি  হয়েছিল।  তাদের মধ্যে ছিলেন ইব ডানকান (Eb Duncan) জাহাজের প্রথম রেডিও অফিসার, তিলাওয়া থেকে প্রথম এসওএস বার্তা প্রেরণ হয়েছিল এর হাত দিয়েই। 


সমুদ্রে ভেসে যায় 

বেঁচে যাওয়া আর উদ্ধার হওয়া মানুষেরা ভারত মহাসাগরে  দু'দিন বোটে ভেসেছিল । সেই সম্পর্কে এক বেদনাদায়ক কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। ইসমাইল আলী ধানসে ( Ismail Ali Dhansay ) কাঠের বিম ধরে ভেসেছিল। তার নাতি লিখেছে, “it was discovered that his legs had been bitten by barracudas. these are predatory fish with sharp teeth.” - পরে দেখা গেল তার পা ব্যারাকুডাস (Barracudas) কামড়েছে, ধারালো দাঁতওয়ালা শিকারী মাছ।


২৫ নভেম্বর, সকালের দিকে,  এইচএমএস বার্মিংহাম  উদ্ধার না করা পর্যন্ত  বেঁচে থাকা মানুষগুলো খাবার আর জল ছাড়া ভেসেছিল। নভসারিয়া ভাগ্যবান  যে নৌকায় সে ছিল তাতে পানীয় জলের ব্যারেল এবং কিছু বিস্কুট ছিল। নভসারিয়া বলেছে, “arguments arose between the crew as to which direction to follow,” - কোন দিকটি অনুসরণ করতে হবে তা নিয়ে ক্রুদের মধ্যে তর্ক শুরু হয়েছিল। আরও বলেছে,  “the tension among all of us was rising. we drifted for an entire day and night. the sea was choppy and a cold wind was blowing. all i had to keep me warm was the pajamas i was wearing. during the day, rain came and the sea developed a considerable swell, tossing our life boat perilously.” - আমাদের সবার মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছিল।  আমরা একটি পুরো দিন এবং রাত ভেসেছিলাম,  সমুদ্র উত্তাল ছিল এবং ঠান্ডা বাতাস বইছিল।  আমি যে পাজামা পরেছিলাম তা  আমাকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করবে।  দিনের বেলা, বৃষ্টি হচ্ছিল আর সমুদ্রের জল উথাল পাথাল করছিল, স্ফীত সমুদ্র আমাদের লাইফ বোটটিকে বিপজ্জনকভাবে নিক্ষেপ করছিল ।



তিলাওয়া ডুবে যাওয়ার বিষয়ে এইচএমএস বার্মিংহামকে সতর্ক করা হয়েছিল । জীবিতদের উদ্ধার করার জন্য  গতিপথ পরিবর্তন করেছিল জাহাজ,  ৬৭৪ জনের প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয়।  আরও চারজনকে একদিন আগে উদ্ধার করা হয়েছিল, সাহায্য করেছিল আরএমএস কার্থেজ (RMS SS Carthage)।  ২৭ নভেম্বর, এইচএমএস বার্মিংহাম (HMS Birmingham) ব্যালার্ড পিয়ারে (ballard pier) পৌঁছেছিল, যেখানে উদ্বিগ্ন আত্মীয়রা অপেক্ষা করছিল, তাদের পরিবারের সদস্যরা যারা বেঁচে ফিরেছে তাদের জন্য অপেক্ষা। বাকী যারা মারা গেছে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য অপেক্ষা!


তিলাওয়া সম্পর্কে তথ্য পাওয়া কঠিন। যা তথ্য পাওয়া যায়, তার প্রায় সবই জানা যায় লিসেস্টার-ভিত্তিক কাশ কুমার মুকেশ সোলাঙ্কি (Kash Kumar Mukesh Solanki) এবং তার ছেলে এমিলের প্রচেষ্টার জন্য, যারা গত ১৫ বছর ধরে এই দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং বেঁচে ফিরে আসা মানুষজনের  সাক্ষ্য সংগ্রহের জন্য উত্সর্গ করেছে।  কাশ কুমারের দাদু নিছাভাই চিবাভাই (Nichhabhai Chibabhai) এই ট্র্যাজেডিতে নিহতের তালিকায় আছে।



স্মৃতি সংরক্ষণ 

২৩শে নভেম্বর, ২০২২-এ, মুম্বাইয়ের ব্যালার্ড এস্টেটের গ্র্যান্ড হোটেলে তিলাওয়া ডুবে যাওয়ার ৮০ তম বার্ষিকী উপলক্ষে একটি স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়।  অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছিল সোলাঙ্কি পরিবার এবং মেরিটাইম মুম্বাই মিউজিয়াম সোসাইটি (Maritime Mumbai Museum Society)।


অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে বেঁচে কেবল মাত্র অরবিন্দভাই জানি (Arvindbhai Jani), তখনও পর্যন্ত তাই জানা গেছিল। ঘটনার সময়ে  জানির বয়স ছিল মাত্র তিন এবং তাই ঘটনার কোনো স্মৃতি সেরকমভাবে নেই, কিন্তু তার মনে আছে  তার মাকে কীভাবে “wrapped him in her sari and jumped into a lifeboat” - "সে শাড়িতে জড়িয়ে একটি লাইফবোটে ঝাঁপ দিয়েছিল",  সে সম্পর্কে বক্তব্যও শুনেছে দর্শকেরা ।  গুজরাটে তাদের পরিবার ধরে নিয়েছিল যে তারা মারা গেছে, এমনকি মৃত্যু পরবর্তী ১৪ দিনের নিয়ম আচার গুলো পালন করে ফেলেছিল। আর তারপরে মা ও ছেলে গ্রামে ফিরে আসে ।



খুব সম্প্রতি, জানিকে এসএস তিলাওয়া ট্র্যাজেডির শেষ জীবিত ব্যক্তি বলে মনে করা হয়েছিল, তবে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে , সিনসিনাটিতে বসবাসকারী ৯০ বছর বয়সী তেজপ্রকাশ কৌর (Tejparkash Kaur) সোলাঙ্কিদের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন।  সেই দুর্ভাগ্যের রাতে তেজপ্রকাশ কৌর তার পরিবারের সাথে জাহাজে ছিলেন।  তেজপ্রকাশ ও তার বাবা প্রীতম সিং বেঁচে ফিরলেও  তার মা ও তিন ভাই আর ফিরে আসে নি।


এসএস তিলাওয়া ডুবে যাওয়ার ঘটনা বা বিষয়টিতে এখনও অনেক উত্তরবিহীন প্রশ্ন রয়ে গেছে, তবে ভুলে যায়নি মানুষ সেই ট্রাজেডিকে।  ঘটনাটি স্মরণ করার প্রচেষ্টায় ভারত, আফ্রিকা, ব্রিটেন এবং উত্তর আমেরিকার ছড়িয়ে পড়া  লোকেদের একত্রিত করা হয়। একই দুর্ভাগ্যের শিকার সবাই।  দুঃখই একত্রিত করেছে তাদের সবাইকে। জাহাজ দুর্ঘটনায়  যারা নিহত হয়েছে তাদের স্মৃতি রক্ষার উদ্দেশ্যে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন। নিজেদের হারিয়ে যাওয়া নিকটজনদের  স্মরণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে সবাই।


----------------------------------------------------------------------------------------------------------


সামুদ্রিক হাঁস: একটা অদ্ভুত পাখি,১৭০০ সালে দেখা গিয়েছিল / Sea Duck: The Peculiar Bird Spotted In 1700



১৭০০ সালে ভারতের দিকে যাত্রা করেছিল এক জাহাজ, আর এক অদ্ভুত পাখির দেখা পেয়েছিল সেই জাহাজের যাত্রীরা! 


স্যামুয়েল গুডম্যান (Samuel Goodman) বিস্ময়ের সাথে একদল অদ্ভুত পাখির বর্ণনা দিয়েছেন - প্রচন্ড বিস্ময়কর সেই বর্ণনা! পাখনা নেই, কোনো পাও দেখা যাচ্ছে না এমন   কালো এবং সাদা প্রাণী! 


ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জাহাজ মার্থা ক্যাপ্টেন টমাস  রেইন্স এর অধীনে ১৭০০ সালের এপ্রিল মাসে ইংল্যান্ড থেকে বোম্বের অধুনা মুম্বাইয়ের দিকে যাত্রা করে। সোজা রাস্তা নেয়নি এই জাহাজ, এঁকে বেঁকে, বিভিন্ন রাস্তা ধরে চলেছিল জিগ জ্যাগ যাকে বলে; ব্রাজিলের উপকূলে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ, কেপ ভার্দে এবং বাহিয়া দে টোডোস ওস স্যান্টোস (অল সেন্টস বে) হয়ে চলেছিল, বাতাস ছিল অনুকূলে , এইভাবে মার্থা ছুঁয়েছিল আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্ত। সুমাত্রা পেরিয়ে ভারতের অভিমুখে আসছিল জাহাজটি।


১৭০১ সালের জানুয়ারী নাগাদ, জাহাজটি কোচিন, কারওয়ার এবং গোয়া হয়ে বোম্বের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে মালাবার উপকূলে পৌঁছেয়।   পৌঁছানোর পর, মার্থা বোম্বেতে ফিরে যাওয়ার আগে গোমব্রুন (বান্ডার আব্বাস) বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং তারপরে সুরাটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।



Image Courtesy: pixabay.com




ইন্ডিয়া অফিদের রেকর্ড এবং কিছু ব্যক্তিগত কাগজপত্রে সঙ্গী স্যামুয়েল গুডম্যানের লেখা মার্থার সমুদ্রযাত্রার এই শেষ অংশের জার্নালের উল্লেখ আছে।  এটি আসলে সমুদ্রযাত্রার একটি দৈনিক লিপি, যা বেশিরভাগই ন্যাভিগেশন তথ্য, বাতাস, আবহাওয়া এবং সমুদ্রের অবস্থার বিশদ বিবরণ দেয় – ১৮ শতকের প্রথম দিকে একটি পালতোলা জাহাজে থাকা নাবিকদের কাছে এই তথ্যগুলি ছিল অমূল্য, সারাক্ষণ তাদের চিন্তা দখল করে থাকত। জাহাজের কাগজপত্রে পাওয়া তথ্যগুলি থেকে দেখা যায় উপকূলরেখার মাঝে একটি রেখা স্কেচের সাথে ছেদ করেছে। জাহাজ থেকেও নাকি এই রেখা বাস্তবিকই দেখা গেছে!


কিন্তু ১৭০০ সালের ২৭শে অক্টোবর রবিবার সকালে, কেপ অফ গুড হোপ ছেড়ে ভারতের দিকে রওনা হওয়ার পরে, কিছুদূর যেতেই, গুডম্যান এমন কিছু লক্ষ্য করেছিলেন যা অবশ্যই খুব অন্য রকম ছিল, সাধারণত যা দেখা যায় না এমন,  তিনি এটি বিস্তারিতভাবে লিপিবদ্ধ করার কথা ভেবেছিলেন।  তিনি একদল অদ্ভুত পাখির মুখোমুখি হয়েছিলেন - কালো এবং সাদা প্রাণী যাদের পাখনা নেই এবং কোন পাও দৃশ্যমান নয়, তাদের মাথায় রয়েছে একটি হলুদ রেখা।  এমনকি তিনি একটি পাখির স্কেচ তৈরি করেছিলেন এবং ক্যাপশন দিয়েছিলেন "সমুদ্র হাঁস" -  “Sea Duck”।


গুডম্যান লিখছেন: “I saw beetwene 15 and 16 fishes or fowells ass it may bee termed, the[y] Came close too the ships side, the[y] had A head and neck And A yallow bill like A Duck And Ass well formed Ass A land fowel Is, And A bodey ass bigg Ass A midling Duck two fins like A turtell, butt A fishes tayle Ass you may see by the figer the[y] lay a pretty while upon the surface of the Watter Soe thatt I had A full vew And Saw them oute of the watter as the[y] playd too and froo: and one particuler thing I Observed Ass the[y] Came Close to the side the would stare you in the face: the[y] had all of them too yallow strakes upon there heds, the back parte wass blacke And the belley all White butt had Noe Leggs: wee Could not distinguish them from A Blacke duck butt by the fishes tayle and There finns.”


“আমি ১৫ এবং ১৬ টি মাছ বা ফাওয়েলস অ্যাস  বলা যেতে পারে, জাহাজের পাশ দিয়েও কাছে এসেছিল,তাদের একটি মাথা এবং ঘাড় ছিল এবং একটি হাঁস এবং গাধার মতো একটি হলুদ দাগ ছিল, একটি জমির পাখি, এবং একটি বড় গাধা, বড় গাধা, একটি মাঝারি হাঁসের মতো, তবে একটি মাছের মতো বা দুটি মাছ দেখতে । জলের উপরিভাগে একটি সুন্দরভাবে শুয়েছিল যাতে আমি একটি পূর্ণ দৃশ্য দেখেছিলাম এবং তাদের জলের বাইরে দেখেছিলাম যখন তারা খুব খেলা করছিল: এবং একটি বিশেষ জিনিস যা আমি লক্ষ্য করেছি যে গাধার কাছে এসে যেন কেউ  মুখের দিকে তাকিয়ে আছে: তাদের সমস্তই ছিল খুব হলুদ এবং পিছনের সমস্ত অংশ ছিল কালো, কিন্তু সাদা ছিল না। পায়ের কাছটা পুঁচকে মাছের লেজ যেন এবং একটি রেখা  দ্বারা একটি ব্ল্যাক হাঁসের পিছন থেকে আলাদা করতে পারেনি।"




তাহলে স্যামুয়েল গুডম্যান কেপের জলে কোন প্রাণীকে খেলা করতে দেখেছিলেন?  পাখিদের সম্পর্কে তিনি যে গঠনগত বর্ণনা দিয়েছেন, সেইসাথে তাদের যে আচরণের বর্ণনা পাওয়া যায়, তাতে বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস যে, গুডম্যানের  “Sea Duck” - "সি ডাক" মোটেও হাঁস ছিল না, আসলে তা হয়ত পেঙ্গুইন ছিল!

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------


ইউকে এর জাতীয় পতাকা কীভাবে ব্যবসা বাড়াতে পারে ! / How An UK’s National Flag Grow The business


কীভাবে ইউকে এর জাতীয় পতাকার একটি প্রাথমিক সংস্করণ বোম্বাইএর ব্যবসায়ীদের নিজেদের ব্যবসা বাড়াতে সাহায্য করেছিল!


ফোর্ট বোম্বেতে বাঘের ছাপ দেওয়া জাহাজে, যে জাহাজে চড়ে 'মনোক পার্সি' - ‘monnock parsee’ এবং 'পার্সিয়া প্যাটেল'- ‘pendia pattell’ বিদেশে গিয়েছিলেন, এর জন্য 'ইউনিয়ন সিল'-  ‘union seale’ এর ছাপ যুক্ত একটি পাস জারি করা হয়েছিল । খুব অবাক করার মতো বিষয় যে ১৬৮৪ সালে বোম্বেতে জারি করা একটি পাসে যুক্তরাজ্যের ইউনিয়ন পতাকার একটি প্রাথমিক প্রতিনিধিত্ব রয়েছে।


তখনকার বোম্বেতে, ১৬৬১ সালে, যখন সমগ্র ভারতবর্ষই ছিল ইংরেজ উপনিবেশ, দ্বিতীয় চার্লসকে  বিয়ে করেন  ক্যাথরিন অফ ব্রাগানজা (catherine of braganza), বিয়ের তারিখ ১১ ই মে, যৌতুকের অংশ হিসাবে পাওয়া বোম্বাই এর পরিচালনার ভার ২৭শে মার্চ, ১৬৬৪  রাজা ১০ পাউন্ড বার্ষিক ভাড়ায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে লিজ দেন।


১৬৮৩ সাল নাগাদ কোম্পানির শাসনের প্রতি অসন্তোষ বিদ্রোহে পরিণত হয়, বোম্বাইতে দ্বিতীয় চার্লস  এর পক্ষে শাসনের জন্য ক্যাপ্টেন রিচার্ড কিগউইনকে (Richard Keigwin) নিযুক্ত করা হয়।  কিগউইন স্থানীয় বণিকদের কাছে পাস ইস্যু করেছিলেন যাতে তারা বোম্বের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অংশগ্রহণ করতে পারে, উৎসাহিত করতে চেয়েছিলেন ব্যবসা বাণিজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে, কোম্পানির একচেটিয়া ব্যবসাগুলোর বাইরে যেকোনো ক্ষেত্রের ব্যবসা শুরু করার পথ প্রশস্ত করে- বাণিজ্য নীতির নির্ধারন অংশ বা পলিসি তৈরির জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া।


রিচার্ড কেইগউইন কর্তৃক জারি করা পাসটি জাহাজ টাইগারের জন্য, যার মালিকানা 'মনোক পার্সি' বোম্বে, যার ছাপ ছিল 'হিজ ম্যাজেস্টি' এর ইউনিয়ন সিল : Image Courtesy: British library ior/e/3/43 f. 323 (public domain)




"মনোক পার্সি" -  “monnock parsee” এবং "পেন্ডিয়া প্যাটেল" -  “pendia pattell” এর টাইগার নামক পাল তোলা জাহাজের জন্য একটি পাস ৬ই জানুয়ারি, ১৬৮৪ সালে ফোর্ট বোম্বেতে জারি করা হয়েছিল। 


এক বছরের জন্য বৈধ, দ্বিতীয় চার্লসের এর পক্ষে গভর্নর কিগউইন দ্বারা স্বাক্ষরিত হয়েছিল।  জাহাজের কমান্ডার এবং ব্রিটিশ নাগরিকদের অনুরোধ করা হয়েছিল যে,  বাঘ নামক জাহাজ এবং এর যাত্রীদের যাতে কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই যাত্রা সমাপ্তি করতে দেওয়া হয় -  “to passe without seizure, molestation or trouble, nor offering any abuse or incivility”।  পাসটি কিগউইন এবং তার সচিবের স্বাক্ষর ছাড়াও তার ব্রিটিশ শাসনের চিনহ বহনকারী “union seale” -  "ইউনিয়ন সিল" এর ছাপ ছিল পাসটিতে।


সীলমোহরের নকশায় সেন্ট অ্যান্ড্রু এবং সেন্ট জর্জের ক্রস যুক্ত একটি বড় পতাকা ছিল যা প্রকারান্তরে ইংল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডের একতাকেই নির্দেশ করে।  অনানুষ্ঠানিকভাবে ২৪শে মার্চ, ১৬০৩ থেকে, বলতে গেলে স্কটল্যান্ডের রাজা ষষ্ঠ জেমস এর প্রথম জেমস হিসাবে ইংল্যান্ড এর সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে, ১৭০৭ সালের ইউনিয়নের আইন বলবৎ হওয়া পর্যন্ত এটি একটি আইনি এবং রাজনৈতিক বাস্তবতা ছিল না।  তা সত্ত্বেও, ১২ই এপ্রিল, ১৬০৬ সালে রাজকীয় শোভা বর্ধনের জন্য একটি ফরমান জারি করা হয়, সেই ফরমানে ব্রিটিশ এবং স্কটিশ জাহাজগুলির, প্রধান জাহাজগুলির শীর্ষে প্রদর্শনের জন্য একটি ইউনিয়ন পতাকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়।  ১৭ শতক জুড়ে বিভিন্ন ডিজাইনের পুনরাবৃত্তি, কিছু ফ্যাশনে থাকা বা না থাক ডিজাইন এর মকশো চলে;  সামুদ্রিক দুনিয়াতে  পতাকাগুলিকে "জ্যাক" - “jacks” বলা হয়, এই পতাকাগুলি "ইউনিয়ন জ্যাক" -   “union jack” খেতাব অর্জন করে।  ১৭০৭ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের জাতীয় পতাকা হিসেবে পরিচিত লাভ করতে শুরু  করে এই ইউনিয়ন জ্যাক, আর বর্তমান নকশাটি ১৮০১ সাল থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে।











তথ্যসূত্র: British Library’s Untold Lives Blog Scroll, The Conversation 



























মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কাকে বলে স্ট্রিম অফ কনসাসনেস বা মগ্নচৈতন্য / What is Stream of Consciousness?

কাকে বলে স্ট্রিম অফ কনসাসনেস ? সাহিত্য ধারায় এটি এক রীতি, বলতে গেলে লেখনীর এক ধরণ। সাহিত্যের আলোচনায়  কিংবা সমালোচনায় 'স্ট্রিম অফ কনসাসনেস'- ‘Stream of Consciousness’  বা মগ্নচৈতন্য শুধুমাত্র এক শব্দ নয়, এ এক অনন্য, এক স্বতন্ত্র জঁর  ।  মগ্নচৈতন্যের   স্রোত সাহিত্যসৃষ্টির এক অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ন ধারা,  যা কিনা  বিংশ শতাব্দীর কিছু বিখ্যাত লেখক   নিযুক্ত এক স্বতন্ত্র লেখন রীতি। নিজেদের লেখনীতে কিছু ঘটনা পরম্পরাকে  বর্ণনা করতে ব্যবহার করেছিলেন তারা ।  কিন্তু '  মগ্নচৈতন্য '  কী?  কেনই বা  এটি একটি 'ধারা' বা ' জঁর' ?  কিছু  পরিচিতি দিলাম বটে শুরুতে কয়েকটি শব্দকে আশ্রয় করে, তবে  বিস্তারিত আলোচনা  এগোবে আস্তে আস্তে।  এই আপাত সাধারণ এবং একইসঙ্গে ব্যাপকভাবে ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা যুক্ত , সাহিত্যিক টার্মটির ধারণা  পরিষ্কার করতে সহায়তা করতে পারে হয়ত এই  আলোচনা ।   Image Courtesy: Steve Jhonson:pixels.com/free image প্রকৃতপক্ষে...

একটি প্রেমের গল্প : অমৃতা প্রীতম এবং সাহির লুধিয়ানভি / The love story of Amrita Pritam and Sahir Ludhianvi

প্রেমের গল্প। প্রেম ভাঙার গল্প। পাত্র-পাত্রী সাহির লুধিয়ানভি এবং অমৃতা প্রীতম। দিকপাল দুই সাহিত্যিক। কেমন ছিল সেই সম্পর্ক ? ''আমি তো জানতাম সাহির, তোমার কোনোদিনই আমার প্রতি প্রতিশ্রুতি রক্ষার কোনো দায় ছিল না । কি যেন বলে আজকাল ! ও হ্যাঁ , কমিটমেন্ট ফোবিয়া।  ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারবে কি না সেই দ্বিধাতেই তো রয়ে গেলে। কেন  যেন মনে হয় আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা  সেই গভীরতর  অতলান্ত  স্পর্শ করে নি কোনোদিন। ছুঁয়ে দেখেনি সেই ভালোবাসার তীব্র টানকে। আচ্ছা সত্যি করে বলো তো, তুমি কি সত্যি আমাকে ভালোবেসেছ  ? যতটা আমি তোমাকে বেসেছি।  "ম্যায়নে টুট  কে প্যায়ার কিয়া তুম সে / ক্যায়া  তুমনে ভী উতনা কিয়া মুঝ সে?'' অমৃতা প্রীতম এবং সাহির লুধিয়ানভি : Image Courtesy : Indian Express  ' ''মোহাব্বত কি পরখ  কা  ইয়েহি  তো রাস্তা  হ্যায় / তেরি  তালাশ মে নিকলু, তুঝে  না  পায়ু  ম্যায় '' । অমৃতা ভালোবাসা খুঁজেছেন, সেই আকুল করা ভালোবাসা,  হৃদয় তন্ত্রীতে সেই তীব্র...

ভারতে পিকনিকের খাবারের বৈচিত্র্যময় ইতিহাস / The Diverse History Of Picnic Food In India

  ভারতে পিকনিকের খাবারের বৈচিত্র্যময় ইতিহাস / The Diverse History Of Picnic Food In India ভারতে  কিরকম ভাবে হয় পিকনিক। কিভাবেই বা হতো ব্রিটিশ আমলের পিকনিক? মহাভারতের যুগেও কি হতো পিকনিক?  পিকনিক: Image Courtesy: Getty Image  মহাভারত থেকে ব্রিটিশ রাজ - বাড়ির বাইরে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া , না, না কোনো রেস্তোরাঁর কথা বলছি না, বলছি পিকনিকের (picnic) কথা,  বাংলায় চড়ুইভাতি বলি যাকে। ছোটবেলার পিকনিকের স্মৃতি রাজত্ব করছে এখনও,আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বহু যুগের ঐতিহ্য এই চড়ুইভাতি এখনও টিকে আছে বহু বদলের পরেও।  শুধুমাত্র মেনু পরিবর্তিত হয়েছে,পরিবর্তিত হয়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর চরিত্র, ভৌগলিক দূরত্বের সাথে আলাদা হয়েছে বিভিন্ন  চড়ুইভাতির রকম - সকম, খাবারের মেনুর। আশি কিংবা নব্বই দশকের প্রকাশিত হওয়া কোনো গল্পের সিরিজে, সিরিয়ালে, উপন্যাসে, কিংবা রম রম করে  হল গুলোতে চলা সিনেমাতে  পক্ষে মেয়েদের রঙিন মাসিক পত্রিকাতে  পিকনিকের উল্লেখ , ছবি থাকতই থাকত। বড় বেলায় দেখে ছোটবেলার পিকনিকের ছবি। কিন্তু  একটা জিনিস নিয়ে দুঃখ আমার বরাবরই থেকে...