সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমেরিকায় ভারতীয় লেখকেরা/Indian writers in america



ভারতীয় ভ্রমণ- লেখক এবং  ১৯ শতকের আমেরিকা ভ্রমণ/ 19th Century America and Early Indian Travel Writers 


ইশুরী দাস এবং জাহাঙ্গীর কোঠারী ,  প্রথম ভারতীয় যাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের  বিবরণ আমরা লিখিত আকারে পাই। কেমন ছিল তাঁদের সেই অভিজ্ঞতা? দাস এবং জাহাঙ্গীর কোঠারী , প্রথম ভারতীয় যাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের বিবরণ আমরা লিখিত আকারে পাই। কেমন ছিল তাঁদের সেই অভিজ্ঞতা?




ভারতীয় ভ্রমণ- লেখক এবং  ১৯ শতকের আমেরিকা ভ্রমণ/ 19th Century America and Early Indian Travel Writers
জাহাঙ্গীর কোঠারী : Image Courtesy : wikimedia common 



42nd street, new york, circa 1880. | Image Courtesy : archives/wikimedia commons. 


 

১৯ শতকের সময়কাল, দু'জন ভারতীয় নাগরিক বেরিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে, তবে এক সঙ্গে নয়, মধ্য দিয়ে পেরিয়ে গেছে চল্লিশ বছর। এই এতো সময়ের  ব্যবধানে ভ্রমণ কাহিনীর মধ্যে কিন্তু কোনো অভূতপূর্ব এলিয়েন উপাদান থাকার সম্ভবনা নেই। যা থাকার তা হল বিদেশের মাটিতে দুজনের প্রায় একই ধরণের  অভিজ্ঞতা । ইশুরী দাস, উত্তর-পশ্চিম প্রদেশের একজন মিশনারী বা ধর্মপ্রচারক, তার আমেরিকা - আগমনের খবর ছড়িয়ে পরার উত্তেজনা বর্ণনা করেছেন এই ভাবে: 

 
“natives of winchester had heard of the arrival of a foreigner from a distant country; and the curiosity of some, especially of the fair sex, was somewhat excited. those that had any acquaintance with the family with whom i lived called to gratify this propensity; and most of them were surprised that i could speak english, or that i did not manifest any signs of savageness about me.” 


উইঞ্চেস্টারের স্থানীয়রা একটি দূর দেশ থেকে এক বিদেশীর আগমনের কথা শুনেছিল; এবং কিছুটা কৌতূহল, কিছুটা উত্তেজনা তাঁদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছিল। বিশেষ করে, যাঁদের সঙ্গে ইশুরী  আমেরিকায় কিছুদিন বসবাস করেন, তাঁদের পরিচিতরা সবাই, প্রায় অধিকাংশই বিস্মিত হয়েছিল তাঁর ইংরেজী ভাষায় কথপোকথনের দক্ষতা দেখে!এবং আরও অবাক হওয়ার মতো ঘটনা যে তিনি জংলীদের মত কোনো অসভ্যতার কোনো লক্ষণ প্রকাশ করেননি!- সেই সময় প্রাচ্য সম্পর্কে এই ধারণাই বলবৎ ছিল যে সেখানে সাপ আর জংলী মানুষ ভর্তি! ভারতে ফিরে আসার ছয় বছর পর ১৮৫১ সালে ইশুরী দাস তাঁর ভ্রমণের এক বিবরণ প্রকাশ করেন, যার শিরোনাম ছিল "এ ব্রিফ অ্যাকাউন্ট অফ আ ওয়ায়েজ টু ইংল্যান্ড অ্যান্ড আমেরিকা"- "A Brief Account Of A Voyage To England And America". 


 এক মিশনারীর গল্প : 


ইশুরী দাস, অনাথ যুবক এবং ফতেহগড় (বর্তমানে উত্তর প্রদেশের ফারুখাবাদ) প্রেসবিটারিয়ান মিশনের (presbyterian mission) যত্নে বড় হয়েছিলেন, এবং আমেরিকান ধর্মপ্রচারক এইচআর উইলসনের (h.r wilson) সাথে তাঁর পশ্চিমে যাত্রার সুযোগ ঘটেছিল। উইলসন এবং তার ঊর্ধ্বতনদের বিশ্বাস ছিল যে,  ঈশুরী দাস একজন  উপযুক্ত শিক্ষক যিনি তাঁর দূরদর্শিতা এবং বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মিশনের অন্যান্য অনাথ শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন। 

ইংল্যান্ডে যাত্রা তখন প্রায় তিন মাস সময় নিত, কারণ জাহাজগুলি তখন কেপ অফ গুড হোপকে  প্রদক্ষিণ করে  আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলের দিকে যাত্রা করত। ১৮৪৬ সালের জুলাই মাসে পৌঁছন ইশুরী দাস। লন্ডন খুব পরিষ্কার একটা শহর, প্রায়ই হঠাৎ করে ঝরে পড়া অল্প বৃষ্টিপাতের শহর- “clean, and subject often to sudden short spells of rain”. ইশুরী দাস,  দেখতে চান শহর লন্ডনকে, চিনে নিতে চান পুরো শহরটা কে।  শহরের চারপাশে ঘুরে বেড়াতেন তিনি,  ব্রিটিশ পার্লামেন্টের  দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাঁর, নিয়ে যায় তাঁকে সেইদিকে, তারপরে অধিবেশনে এবং ব্রিটিশ মিউজিয়ামে, যেখানে তিনি প্রদর্শনীতে মমি এবং স্টাফ (stuffed) করা জন্তু দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। 

এবার ৩৩ বছরেরও বেশি সময় পরে, করাচির একজন ব্যবসায়ী এবং ফিলানথ্রপিস্ট ( philanthropist) বা সমাজসেবী জাহাঙ্গীর কোঠারীর আমেরিকা অনুসন্ধানী হিসেবে সেই দেশের চেহারা আঁকার পালা। হোটেল পামার হাউসে কোঠারিকে দেখে শিকাগো ট্রিবিউনের (chicago tribune) একজন সাংবাদিক তাকে "গ্রীক", "অবশ্যই হিন্দু নন" - “greek”, “definitely not a hindu” বলে বর্ণনা করেছেন। “a man of medium height, thickset, with a very full face, jet-black hair, a short curly black beard,” - "মাঝারি উচ্চতার একজন মানুষ, মোটা, ভর ভরন্ত মুখ, জেট-কালো চুল, ছোট কোঁকড়ানো কালো দাড়ি," এটি ছিল তার চেহারার বর্ণনা যা মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল প্রায় সকলেরই। শিকাগো ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে তাঁর চেহারার বর্ণনা করে আরও বলা হয়েছে, “not exactly swarthy, his skin had a distinct reddish tinge, which was in striking contrast to his hair and whiskers,” - "ঠিক চোখ ধাঁধানো নয়, তার ত্বকে একটি অনি ধরণের লালচে আভা ছিল, যা তার চুল এবং গায়ের রোমের থেকে অনেক টাই আলাদা ।" “his english when he spoke was as pure as any chicago man would have used.” - "তিনি যখন কথা বলতেন তখন তাঁর ইংরেজি ছিল শিকাগোর যে কোনো লোকের মতোই বিশুদ্ধ।" শিকাগো ট্রিবিউনের সাংবাদিকের লেখা থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে তাঁর চেহারা সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়। 


জাহাঙ্গীর কোঠারী ভারত এবং তার অবস্থা সম্পর্কে বলতে গিয়ে যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন -  “spoke intelligently about india and its condition”. জনসাধারণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে , তিনি বিশ্বাস করেছিলেন,“satisfied with the british rule, and that there was no danger of any movement for independence for years to come” - জনগণ বৃটিশ শাসনে সন্তুষ্ট এবং আগামী কয়েক বছরে স্বাধীনতার জন্য কোন আন্দোলনের কোন বিপদ নেই! অথচ এর ঠিক দু' বছর পর, ১৮৮৫ সালে, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস বোম্বেতে প্রথম সভা করে।


জাহাঙ্গীর কোঠারীর বই "Impressions Of A First Tour Around The World"- "ইমপ্রেশনস অফ আ ফার্স্ট ট্যুর অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড" ১৮৮৯ সালে প্রকাশিত হয়, একই বছর প্রকাশিত হয়েছিল শিক্ষাবিদ এবং নারীবাদী পণ্ডিতা রমাবাইয়ের মারাঠি ভাষায় মার্কিন ভ্রমণের বিবরণ । ব্রিটিশ প্রেস থেকে অনুকূল পর্যালোচনা পেয়েছেন জাহাঙ্গীর কোঠারি , কারণ  ঔপনিবেশিক ভারতে নিজেকে নিশ্চিন্ত করতে চেয়েছিলেন তিনি! ঔপনিবেশিকতা বাদে বিশ্বস্ত ছিলেন যে সব ভারতীয়রা, তাঁদের কাছে একটি আকর্ষণীয় বই এটি।  অভিহিত করা হয়-   “author’s complete mastery over the english language”-  "ইংরেজি ভাষার উপর লেখক সম্পূর্ণ দক্ষতা" দেখিয়েছে। যা এটিকে আরও বেশি করে পাঠযোগ্য করে তুলেছে তা হল এর “chatty manner”- "আড্ডাবাজ পদ্ধতি" বা আড্ডার ছলে লেখার ধরণ। 

ইশুরী দাস এবং জাহাঙ্গীর কোঠারী এই দুই ভারতীয় যাঁরা মার্কিন ভ্রমণকাহিনী বা ট্রাভেলগ (travelogues) প্রকাশ করেছিলেন,  তাঁদের পুরো ভ্রমণ পথে ইউরোপে দীর্ঘ স্টপওভার (stopovers)  অন্তর্ভুক্ত ছিল, যেমনটি তখন জাহাজ ভ্রমণের প্রয়োজনে দরকার হত। বিশাল দুই সময়ের সন্ধিক্ষণ তখন, তাঁদের যাত্রাপথ প্রযুক্তির দ্বারা ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে, নতুন প্রযুক্তি আসা শুরু করে দিয়েছে- জাহাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নতুন নতুন প্রযুক্তি; পুরো বিশ্ব এবং আমেরিকা সেই সময় বিভিন্ন বিষয়  প্রাচ্যকে গভীর ভাবে বিবেচনা করতে শুরু করেছে, দেখাতে শুরু করেছে  কৌতূহল। চিরন্তন কৌতূহল। 


এক মাস পরে, আমেরিকায় জাহাঙ্গীর কোঠারী তাঁর যাত্রার সময়,  জাহাজে দরিদ্র মহিলা অভিবাসীদের দুর্দশার প্রত্যক্ষ করেছিলেন যারা নিজেদের জন্য এক সুন্দর জীবন তৈরি করতে বেরিয়েছিল। তারা  ছোট্ট ছোট্ট কোয়ার্টারে বাস করত এবং নিউ ইয়র্কে পৌঁছনোর পরে কী হবে সে সম্পর্কে তাদের কোনও ধারণাই ছিল না

নিউইয়র্কের পরে, ইশুরী দাস পেনসিলভানিয়ার লাফায়েট কলেজে  কয়েক সপ্তাহ কাটিয়েছিলেন, যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল ট্রেন, তাই ট্রেনে করেই পৌঁছেছিলেন তিনি । শ্রী দাস এবং পরে, শ্রী কোঠারি উভয়েই রেলওয়ের বিস্ময়ের প্রশংসা করেছিলেন মুক্ত কণ্ঠে, যা তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে তার নাগাল প্রসারিত করছিল। জাহাঙ্গীর কোঠারি, বিশেষ করে, পুলম্যান ক্যারেজের (pullman carriages) বিলাসিতা দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন, ইউরোপের ডাইনিং সেলুন (dining salons) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্লিপিং কার্স (sleeping cars) গুলির প্রযুক্তি এবং সুযোগ- সুবিধা সম্পর্কে জানতে পেরে অবাক হয়েছিলেন, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তথ্য  সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। বাকপটু তিনি বিশদভাবে বর্ণনা করেছিলেন যে কীভাবে গাড়িগুলি অনায়াসে বিশাল ফেরিতে (ferrie) লোড করা হয়; ফেরিগুলো যেগুলি বিশাল জলাভাগ জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকে। পূর্ব উপকূলে, বোস্টনে ভ্রমণ করার সময়, বা পশ্চিম উপকূলে, যখন তিনি সান ফ্রান্সিসকো পৌঁছেছিলেন যেটা ছিল তার মার্কিন সফরের শেষ গন্তব্য, সর্বত্রই তিনি ফেরি সার্ভিস দেখেছেন। 

লাফায়েট কলেজে, ইশুরী দাস প্রধানত ইংরেজি এবং “some elementary studies” - " প্রাথমিক কিছু শিক্ষা" বিষয়ক ক্লাস নেন। তাঁকে বিস্মিত করেছিল যে, আমেরিকানরা দূরবর্তী ভূমি, বিশেষ করে হিন্দুস্তান সম্পর্কে এতটাই অজ্ঞ: 


“whenever they think of india, they very probably picture in their minds a country covered with jungle or lying waste and barren, miserable and moveable huts, natives dressed in bear and lion skins, and adorned with ornaments of bone, and beset with large herds of wild horses and ferocious animals.” 


" যখনই তারা ভারতের কথা চিন্তা করে, তারা সম্ভবত তাদের মনে, জঙ্গলে আচ্ছাদিত একটি দেশ বা বর্জ্য এবং অনুর্বর, দুর্বিষহ এবং কুঁড়েঘর যা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেওয়া যায়, ভাল্লুক এবং সিংহের চামড়া পরিহিত দেশীয়, এবং হাড়ের অলঙ্কারে সজ্জিত এবং বড় বড় পশুপালের দ্বারা পরিবেষ্টিত একটি দেশ। বন্য ঘোড়া এবং হিংস্র প্রাণী।" 


তার সফরের শেষের দিকে, তিনি ভার্জিনিয়ার উইনচেস্টারে যান।  বৃক্ষের সমারোহ সেখানে, বৃক্ষের ছায়া ঘেরা শহর এক । তিনি লিখেছেন, শতাধিক ক্রীতদাসদের রাখা হত সেখানে তবে, সাধারণত তাদের সাথে ভাল আচরণ করা হত। তিনি একজন ক্রীতদাস - একজন বয়স্ক মহিলাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে সে স্বাধীনতা পছন্দ করে নাকি তার তুলনামূলকভাবে কম কঠিন কাজ। তিনি উত্তর দেন স্বাধীনতা। 


  সাধারণ জীবন: 


১৮৮৩ সালে, যখন জাহাঙ্গীর কোঠারী  প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করেন, তখন গৃহযুদ্ধের সমাপ্তির ১৮ বছর কেটে গেছে এবং ১৩ তম সংশোধনী (13th amendment) পাস হয়ে গেছে যা দাসপ্রথা বিলুপ্তিকরন ঘটিয়েছে। তাঁর যাত্রা নিউইয়র্কে শুরু হয় এবং উত্তর দিকে ফিরে আসার আগে তিনি ফিলাডেলফিয়া, বাল্টিমোর এবং ওয়াশিংটন ডিসির মধ্য-আটলান্টিক শহরগুলিতে  যান। যদিও তার বইটিতে মাঝে মাঝেই লোভনীয় গল্পের স্পর্শ পাওয়া যায়, কিন্তু এর উপাদানটি অন্যত্র রয়েছে। তিনি বিল্ডিং, স্মৃতিস্তম্ভ এবং চিত্তাকর্ষক দর্শনীয় স্থানের বিবরণ দিয়ে বইটি সম্পূর্ন করেছেন। উদাহরণ স্বরূপ, জাহাঙ্গীর কোঠারি উল্লেখ করেছেন যে ব্রুকলিন সেতুর নির্মাণ, যার "বিশাল টাওয়ার" - “massive towers”এবং "পন্ডেরাস ক্যাবল"- “ponderous cables” , এটিকে নিউইয়র্ক হারবার থেকে একটি সুস্পষ্ট ভাবে দৃষ্টি গোচর হতে সাহায্য করে। 


এই ব্রীজের কাজ জেএ রোবলিং (Ja Roebling) শুরু করেছিলেন এবং তার মৃত্যুর পরে তার ছেলে এই ব্রীজ নির্মাণের  কাজ সম্পন্ন করে। নায়াগ্রা জলপ্রপাতের নীচে জলের ঘূর্ণিতে বা ওয়ার্লপুল র‌্যাপিডস (whirlpool rapids)এ সাঁতার কাঁটার চেষ্টা করার সময় তিনি স্টান্টম্যান ম্যাথিউ ওয়েবের (stuntman M athe webb) মৃত্যুর কথা বর্ণনা করেছেন। 


বইতে শিকাগো স্টক ইয়ার্ডের (stock yard ) জবাইখানার একটি বিশদ বিবরণ রয়েছে যাতে কপিকল বা পুলি (pulley) দিয়ে শত শত গবাদি পশু এবং শূকরকে উত্তোলন করার কথা বলা হয়েছে; জবাই করা হতো এবং তাদের পরিস্কার করে  প্যাকেজিং (packeging) করে রেখে দেওয়া হত, তারপরে তা চালান করা হতো সারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ জুড়ে পাঠানোর আগে। তিনি আমেরিকার হোটেল, আমেরিকার রাস্তা এবং আমেরিকার বাজারদোকান -  এসবের উচ্ছাসিত প্রশংশা করে গেছেন! আমেরিকার গণতন্ত্র সম্পর্কে খরচ করেছেন প্রচুর প্রশংশা বাক্য।  বিশেষত তিনি কংগ্রেসের একটি অধিবেশন  (congressional session) এবং হাউস অফ স্পিকারের (house of speaker) নির্বাচন প্রত্যক্ষ করার পরে পূর্ন সমর্থন জানিয়েছিলেন। তবুও, কাঙ্ক্ষিত সেই আমেরিকান জীবনের আশার আলো সেখানকার মানুষজনের কাছে  পৌঁছতে অনেকটা পথ বাকি ছিল তখনও। 


“i have said before, that this land is considered as the ‘free land of liberty,’ but i find that there is too much liberty given or allowed to middle-class people, which i do not in the least like. for instance, a railway conductor or porter sitting and dining in the same car, at the same table, and at the same time, as the first-class passengers. again, these men spoke to passengers in a tone as if they were the directors of the railway; for every hour these magnates come and sit alongside the passengers.” 


"আমি আগেও বলেছি, এই ভূমিকে ‘স্বাধীনতার মুক্ত ভূমি’ হিসাবে বিবেচনা করা হয়, কিন্তু আমি দেখতে পেলাম যে এখানে মধ্যবিত্তদের অত্যধিক স্বাধীনতা দেওয়া  হয়েছে, যা আমি অন্তত পছন্দ করি না। উদাহরণস্বরূপ, একজন রেলওয়ে কন্ডাক্টর বা পোর্টার একই গাড়িতে, একই টেবিলে এবং একই সময়ে প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদের মতো বসে এবং রাতের খাবার খায়। আবার এই ব্যক্তিরা যাত্রীদের সাথে এমন সুরে কথা বলতেন যেন তারা রেলের পরিচালক; প্রতি ঘণ্টায় এই ম্যাগনেটরা এসে যাত্রীদের পাশে বসে থাকে।" খুব শ্রেনী সচেতন ছিলেন, অন্ত্যজ শ্রেণী বিদ্বেষী ছিলেন জাহাঙ্গীর কোঠারী । 


 বিশিষ্ট সাম্রাজ্যবাদী: 

১৮৪৭ সালে ফিরে আসার পর, ইশুরী দাস ফতেহগড়ে থাকতেন। তিনি আরও তিনটি লেখা লিখেছিলেন যার মধ্যে একটি ছিল হিন্দু গার্হস্থ্য আচার-আচরণ ও রীতিনীতির ওপর। ক্রিশ্চান মিশনারী হওয়ার সুবাদে ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের সময় তিনি  পেয়েছিলেন বৃটিশ সরকারের দৌলতে পালাতে পেরেছিলেন - যাকে বলে ন্যারো এসকেপ (narrow escape)। সেই বছর কোঠারির জন্ম হয়েছিল । একজন ধর্মপ্রচারক হিসাবে, ইসূরি দাসকে  ব্রিটিশ শাসনের সমর্থক হিসাবে দেখা গিয়েছিল বরাবরই

ইশুরী দাস আর কখনও ভারত থেকে বের হননি, জাহাঙ্গীর কোঠারীর বিপরীতে তিনি এক ভিন্ন সামাজিক শ্রেণীর প্রতিনিধি ছিলেন। অপরদিকে শ্রী কোঠারী একজন জনহিতৈষী বা ফিলান্থ্রোপিস্ট (philanthropist) এবং অনুসন্ধানকারী বা এক্সপ্লোরার (explorer) হিসাবে  বেশ নাম করেছিলেন। ১৯৩০ সালে, আমেরিকান সংবাদপত্রগুলি জাহাঙ্গীর কোঠারীকে ভারতের "দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি"- india’s “second wealthiest man” হিসাবে বর্ণনা করেছিল যার বিশ্ব ভ্রমণ ব্রিটিশ রাজের প্রতি তাঁর বিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিল

একই বছর, অস্ট্রেলিয়া সফরের সময় - তার ১০ তম বিশ্ব সফর - সিডনি মর্নিং হেরাল্ড (sydney morning herald) তাকে "বিশিষ্ট সাম্রাজ্যবাদী"  - “distinguished imperialist” হিসাবে বর্ণনা করেছিল। সংবাদপত্রটি বলেছে, তার ভ্রমণ দক্ষিণ আমেরিকার "গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চল থেকে আর্কটিক এবং বেরিং প্রণালী থেকে প্যাটাগোনিয়া পর্যন্ত" - “the tropics to the arctic wastes, and from the bering straits to patagonia” বিস্তৃত ছিল। এই ভ্রমণে, মৃত্যুর সাথে বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎ সাক্ষাৎ হয় তাঁর। একবার, তিনি আর্কটিক সার্কেলের (arctic circle) একটি ক্রেভাসে (crevasse) পরে গিয়েছিলেন। আর এক বার,  টোকিওর একটি হোটেলে ভয়ংকর অগ্নিকাণ্ডে কিঞ্চিৎ ক্ষতিগ্রস্ত হন। উত্তর মাঞ্চুরিয়ায়, তার ট্রেন দস্যুরা আটকে রেখেছিল। এটা দুঃখের বিষয় যে তিনি কখনোই এই দুঃসাহসিক কাজগুলিকে ধারাবাহিক ভাবে লিখে যাননি: প্রথম ভ্রমণ স্মৃতিকাহিনী পরে, তিনি আর কখনও কিছুই লেখেননি।  করাচির অন্যতম পরোপকারী এবং বিশ্ব ভ্রমণকারী হিসাবে তাঁর খ্যাতি সুরক্ষিত করে, জাহাঙ্গীর কোঠারী  ১৯৩৪ সালে ইতালির ট্রিয়েস্টে মারা যান।








মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

একটি প্রেমের গল্প : অমৃতা প্রীতম এবং সাহির লুধিয়ানভি / The love story of Amrita Pritam and Sahir Ludhianvi

প্রেমের গল্প। প্রেম ভাঙার গল্প। পাত্র-পাত্রী সাহির লুধিয়ানভি এবং অমৃতা প্রীতম। দিকপাল দুই সাহিত্যিক। কেমন ছিল সেই সম্পর্ক ? ''আমি তো জানতাম সাহির, তোমার কোনোদিনই আমার প্রতি প্রতিশ্রুতি রক্ষার কোনো দায় ছিল না । কি যেন বলে আজকাল ! ও হ্যাঁ , কমিটমেন্ট ফোবিয়া।  ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারবে কি না সেই দ্বিধাতেই তো রয়ে গেলে। কেন  যেন মনে হয় আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা  সেই গভীরতর  অতলান্ত  স্পর্শ করে নি কোনোদিন। ছুঁয়ে দেখেনি সেই ভালোবাসার তীব্র টানকে। আচ্ছা সত্যি করে বলো তো, তুমি কি সত্যি আমাকে ভালোবেসেছ  ? যতটা আমি তোমাকে বেসেছি।  "ম্যায়নে টুট  কে প্যায়ার কিয়া তুম সে / ক্যায়া  তুমনে ভী উতনা কিয়া মুঝ সে?'' অমৃতা প্রীতম এবং সাহির লুধিয়ানভি : Image Courtesy : Indian Express  ' ''মোহাব্বত কি পরখ  কা  ইয়েহি  তো রাস্তা  হ্যায় / তেরি  তালাশ মে নিকলু, তুঝে  না  পায়ু  ম্যায় '' । অমৃতা ভালোবাসা খুঁজেছেন, সেই আকুল করা ভালোবাসা,  হৃদয় তন্ত্রীতে সেই তীব্র ঝড় তোলা ভালোবাসা তাকেই তো খুঁজেছেন অমৃতা। পেয়েছেন কি ? খুঁজবো আমরা।  উপরের লাইনদুটি মজহা

এডগার অ্যালান পো সিরিজ ১ l Edgar Allan Poe Series

এডগার অ্যালান পো এর "দ্য মার্ডারস ইন দ্য রু মর্গ"- “The Murders in the Rue Morgue” গোয়েন্দা গল্পের প্রথম আত্মপ্রকাশ হল এবং যাত্রা শুরু হল গোয়েন্দা কাহিনীর।  এডগার অ্যালান পো: Image Courtesy : pixabay  ১৮৪১ সালের প্রথম দিক তখন, এডগার অ্যালান পো (Edgar Allan Poe) ফিলাডেলফিয়ার এক জনপ্রিয় প্রকাশনা গ্রাহামস ম্যাগাজিনের (Graham’s Magazine) সম্পাদক হিসাবে কাজ করছেন, পত্রিকায় একটি গল্প জমা দিয়েছিলেন, বহু খেটে গল্পটি লিখেছেন পো, যার নাম ছিল "মার্ডার্স ইন দ্য রু ট্রায়ানন " - “Murders in the Rue Trianon.” প্যারিসের রাস্তার পাশে একটি বাড়িতে একটি ভয়ঙ্কর জোড়া-খুনের ঘটনা ঘটেছে। বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী নিশ্চিত করেছেন যে বাড়ি থেকে একজনের কণ্ঠস্বর শোনা গেছে, তবে একজন বক্তা ঠিক কী ভাষা ব্যবহার করছেন সে বিষয়ে কেউ একমত হতে পারছে না। ভাষার ধাঁধায় গুলিয়ে যাচ্ছে গোটা ঘটনা। বেশ কিছু ক্লুও পাওয়া গেছে, কিন্তু সেগুলো প্রতিটি পরবর্তীটির চেয়ে আরও বিভ্রান্তিকর। প্রতিবেশীরা আতঙ্কিত। পুলিশ বিভ্রান্ত। কিন্তু সি. অগাস্ট ডুপিন (C. Auguste Dupin) একজন শেভালিয়ার (chevalier) এব

কাকে বলে স্ট্রিম অফ কনসাসনেস বা মগ্নচৈতন্য / What is Stream of Consciousness?

কাকে বলে স্ট্রিম অফ কনসাসনেস ? সাহিত্য ধারায় এটি এক রীতি, বলতে গেলে লেখনীর এক ধরণ। সাহিত্যের আলোচনায়  কিংবা সমালোচনায় 'স্ট্রিম অফ কনসাসনেস'- ‘Stream of Consciousness’  বা মগ্নচৈতন্য শুধুমাত্র এক শব্দ নয়, এ এক অনন্য, এক স্বতন্ত্র জঁর  ।  মগ্নচৈতন্যের   স্রোত সাহিত্যসৃষ্টির এক অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ন ধারা,  যা কিনা  বিংশ শতাব্দীর কিছু বিখ্যাত লেখক   নিযুক্ত এক স্বতন্ত্র লেখন রীতি। নিজেদের লেখনীতে কিছু ঘটনা পরম্পরাকে  বর্ণনা করতে ব্যবহার করেছিলেন তারা ।  কিন্তু '  মগ্নচৈতন্য '  কী?  কেনই বা  এটি একটি 'ধারা' বা ' জঁর' ?  কিছু  পরিচিতি দিলাম বটে শুরুতে কয়েকটি শব্দকে আশ্রয় করে, তবে  বিস্তারিত আলোচনা  এগোবে আস্তে আস্তে।  এই আপাত সাধারণ এবং একইসঙ্গে ব্যাপকভাবে ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা যুক্ত , সাহিত্যিক টার্মটির ধারণা  পরিষ্কার করতে সহায়তা করতে পারে হয়ত এই  আলোচনা ।   Image Courtesy: Steve Jhonson:pixels.com/free image প্রকৃতপক্ষে, ' মগ্নচৈতন্য  '   সাহিত্যের  জঁর  হিসাবে একেবারেই শুরু করেনি    তার  জীবন !  তবে ?   অবাক করা তথ্য এই  যে - সম্ভবতঃ এটি ছিল   এ