সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

চা- বাণিজ্য নীতি-:কিভাবে চা ছড়িয়ে পড়ল ভারতবর্ষে/ Tea-Trade Policy: How Britishers created Tea market in India


চা- বাণিজ্য নীতি-:কিভাবে চা ছড়িয়ে পড়ল ভারতবর্ষে/ Tea-Trade Policy: How Britishers created Tea market in India 


ঠিক কিভাবে ব্রিটিশরা ভারতবর্ষে চায়ের প্রসার এবং প্রচার করেছিল? কি কি বাণিজ্যিক কৌশল ব্যবহার করেছিল তারা? 

ব্রিটিশরা ভারতীয় রেলপথকে ব্যবহার করেছিল চায়ের বাণিজ্যিক প্রসার এবং প্রচারের জন্য, বিনামূল্যে দেওয়া হ'ত চা খাবার কাপ, মহিলারাই ছিলেন প্রধানতম লক্ষ্য উপভোক্তা বা টার্গেট কাস্টমার  (target customer) - টেস্ট ওফ টাইম এর ‘Taste of Time’ এর লেখক মোহনা কাঞ্জিলাল লিখেছেন যে ব্রিটিশদের আসার আগে ভারতে চা  পান করা হতো না সেভাবে।  চীনের সাথে আফিম যুদ্ধ বা Opium Wars এর পরে আজ,  ভারত চীনের পরে বিশ্বের বৃহত্তম চা উৎপাদনকারী দেশ। এবং এর জন্য  ব্রিটিশদের এক গুরুত্ত্বপূর্ন ভূমিকা ছিল। ব্রিটিশরা শুধু আসাম এবং দার্জিলিংয়ে চা বাগান চালু করেনি বরং ভারতের উত্তর -পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণে অন্যান্য অঞ্চলে চা উৎপাদন শুরু করেছিল।

ব্রিটিশদের মধ্যে ভারতীয় চায়ের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এই শিল্পের ক্রমাগত সম্প্রসারণকে উৎসাহিত করেছিল।চা গাছ লাগানো সংখ্যায় বাড়ছিল।  এই প্রসঙ্গে অরূপ কে চ্যাটার্জি লিখছেন যে ১৮৮৮ সালের মধ্যে আসাম, দার্জিলিং এবং অন্যান্য পার্বত্য অঞ্চল থেকে ব্রিটেনে চা রপ্তানি চীনকে ছাড়িয়ে যায়, ভারতের তখন রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৬ মিলিয়ন পাউন্ডরও বেশী, আর চিন রপ্তানি করতো ৮৬ মিলিয়ন পাউন্ড।


চা- বাণিজ্য নীতি:কিভাবে চা ছড়িয়ে পড়ল ভারতবর্ষে/ Tea-Trade Policy: How Britishers created Tea market in India
চা বাণিজ্য নীতি : Image Courtesy : pixabay  


লেখিকা এরিকা রপ্পাপোর্ট (Erika Rappaport ) তাঁর বই, আ থারস্ট ফর এম্পায়ার: হাউ টি শেপড দি মডার্ন ওয়ার্ল্ড A Thirst for Empire: How Tea Shaped the Modern World (2017) তে উল্লেখ করেছেন যে, ভিক্টোরিয়ান লন্ডনে অভিজাত সমাজে চীনের চায়ের নিন্দেমন্দ করা হত নিয়মিতভাবে। আর তুলে ধরা হত ভারতীয় চায়ের গুণাবলী । প্রশংসা করা হত জমিয়ে। প্রচুর পরিমাণে চীনা চা কাস্টমস কর্তৃক অপসৃত বা সিজ করা হত, চীনকে  জব্দ করার জন্য টেমসে ফেলে দেওয়া হত।  বিপরীতে, ভারতীয় চা চীনা চায়ের চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যকর এবং সুগন্ধযুক্ত হওয়ার বিজ্ঞাপনে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল বরাবরই। ভারতীয় চা কে বিশুদ্ধ, কড়া স্বাদ যুক্ত, সস্তা এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই উৎকৃষ্ট মানের  বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।  দার্জিলিং এবং আসামের চা সুন্দর কাঠের বাক্সে ভরে লন্ডনের চায়ের দোকানে বিক্রি হত।


ভারতে ফিরে আসি এবার একটু,  ভারতীয় উপভোক্তাদের কাছে চা পৌঁছেছিল  ব্রিটিশ সরকারের হাত ধরে, ভারতীয় চা ভারতে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছিল অনেক পরে।  ফিলিপ লুটজেনডর্ফ (Philip Lutgendorf), তাঁর প্রবন্ধ 'মেকিং ইন ইন্ডিয়া: চায়ে, ক্যাপিটালিজম, কালচার', Making tea in India: Chai, capitalism, culture’, academic journal Thesis Eleven: Critical Theory and Historical Sociology, 113(1): 11–31, (December 2012) writes,একাডেমিক জার্নাল থিসিস ইলেভেন: ক্রিটিক্যাল থিওরি অ্যান্ড হিস্টোরিকাল সোসিওলজি, 113 (1): 11–31, (ডিসেম্বর ২০১২) লিখেছেন,


"The tea[…] was intended solely for export to the West, though it passed through the port and (after 1861) the auction market of Calcutta, where a tiny fraction of the native population—principally the Anglophile bhadralok elite as well as ‘office babus’ employed by British firms— began to partake of the foreign beverage, produced by steeping in china pots and usually supplemented by hot milk (considered essential to reduce the ‘bite’ of the strong-liquoring Assam leaves) and sugar. (p. 13) " 


চা  শুধুমাত্র পশ্চিমে রপ্তানির উদ্দেশ্যে ছিল, আর বন্দর দিয়েই এই চা রপ্তানি হত এবং ১৮৬১ সালের পরে কলকাতার নিলাম বাজার, যেখানে স্থানীয় জনসংখ্যার একটি ছোট অংশ - প্রধানত অ্যাংলো অভিজাত শ্রেণী এবং বৃটিশ সংস্থাতে কাজ করা 'অফিস বাবুরাই' চা নামক এই বিদেশী পানীয় খাওয়া শুরু করে ঘন দূধ ও চিনি সহযোগে, চীনা মাটির পাত্রে ;  সাধারণত সেই সময় কড়া স্বাদের আসাম চা খাওয়া হত। 


যাইহোক, লন্ডনে নিলামের দাম ওঠানামা এবং দূরপাল্লার পরিবহনের অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলি মাঝেমধ্যে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তাদের এবং চা বাগান মালিকদের পণ্যের জন্য একটি দেশীয় বাজারের সম্ভাবনা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছিল।  ১৯০১ সালে, ভাইসরয় কার্জন একটি নিরীক্ষা চলায়, নির্বাচিত কিছু এলাকায় ভারতীয়দের জন্য চা-পান করার ব্যবস্থা করা হয়।  কিন্তু, সাধারণভাবে সাময়িক কিছু সাফল্য লাভ সত্ত্বেও, প্রচেষ্টাটি ১৯০৪ সালে বাতিল করা হয়।


১৮৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশন, তার বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে তিন বছরের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ফলাফল হিসেবে ভারতে শক্তিশালী চায়ের বাজার তৈরী হয়ে ওঠার মতো কোনো আশাব্যঞ্জক দিক নির্দেশ করে নি, যথেষ্ট ভাল ছিল না পরিকাঠামোও।  শরবত, দইয়ের ঘোল ইত্যাদি পানীয় ইতিমধ্যেই প্রচলিত ছিল ভারতীয় সমাজে, ঐতিহ্যবাহী পানীয়গুলির সুপ্রতিষ্ঠিত আয়তনে চা এবার নিজের জায়গা করে নিতে চলেছিল। খাদ্য কিংবা পানীয় এক সাংস্কৃতিক সময়ের ছবি, সেই সময়কার সমাজের ছবি, ধীরে ধীরে ভারতীয় সংস্কৃতিতে অগ্রাধিকার পেতে চলেছিল চা, সাধারণ মানুষের চা পান করার প্রবণতা নিয়ে ব্যবসায়ীদের আকাঙ্খা প্রত্যাশায় পরিণত হচ্ছিল ।


লুটজেনডর্ফ (Lutgendorf) আরও উল্লেখ করেছেন, ‘Advertising during the first three decades of the twentieth century […] was largely aimed at resident Britishers and the Anglophone elite who aspired to their lifestyle. It celebrated tea as a natural product of a colonized and “tamed” jungle, raised in geometrically arrayed and manicured “gardens” and picked by dark-skinned, subaltern women, who offered it at a gleaming white table to equally white consumers […]’ (pp. 13–14). 


বিশ শতকের প্রথম তিন দশকে বিজ্ঞাপনের মূল লক্ষ্য ছিল ভারতের বাসিন্দা ব্রিটিশরা এবং অ্যাংলোইন্ডিয়ানরা, মূলত উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভিজাতশ্রেণী - যাদের লক্ষ্য ছিল উন্নত থেকে উন্নততর জীবনযাত্রার। চা হয়ে উঠেছিল ঔপনিবেশিক ভারতীয় অভিজাত জীবনযাত্রার প্রাত্যহিক প্রয়োজন, জঙ্গলের প্রাকৃতিক পণ্য হিসাবে উত্থান ঘটেছে এর, কালো চামড়ার, সাবঅল্টার্ন মহিলারা বপণ করেছে, বাছাই করেছে, আর অবশেষে পরিবেশিত হয়েছে সাদা চামড়ার অভিজাত ভোক্তাদের দামী পোরসলিনের বাসনে।


যতদিন রফতানি থেকে আর্থিক আয় লাভজনক ছিল, ততদিন অভ্যন্তরীণ বাজারকে অর্থাৎ ভারতের অভ্যন্তরীন বাজারকে লাভ অনুসারী করে তোলার জন্য সামান্যই প্ররোচনা ছিল, কারণ তা অনিবার্যভাবে কম রিটার্ন বা ফেরতযোগ্য লাভ দেবে।


ভাইসরয় কার্জন ১৯০৩ সালে ভারতীয় চা বাণিজ্য কর (Tea Cess Bill) তহবিল সংগ্রহ এবং বিপণনকে উৎসাহিত করার জন্য  প্রবর্তন করে । টি সেস কমিটি (The Tea Cess Committee) অল্প সংখ্যক লোকজন জমায়েত হয় এমন কিছু জায়গাকে চায়ের প্রচারের জন্য নির্বাচনী তালিকাতে আনা হয়, বিক্ষিপ্ত এবং ছোট আকারের প্রচেষ্টা চালানো হয় চায়ের প্রচারের জন্য।  প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান যেখানে এই ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা গুলি পরিচালিত হয়েছিল তা হল ভারতীয় রেলওয়ে।  শুধু কলকাতার হাওড়া রেলওয়ে স্টেশনে জনসাধারণের জন্য বিনামূল্যে প্রস্তুত চায়ের কাপের পর কাপ বিতরণ করা হতে থাকে, কিন্তু অল্প চা ভর্তি কাগজের প্যাকেটগুলি (এতো অল্প পরিমাণ যা নিলামে খরচ তোলা যাবে না) তাদের কাছে এক পয়সায় বিক্রি করা হয়েছিল (সবথেকে কম আর্থিক একক যা ব্রিটিশ ভারতে স্বল্পমূল্য)।


চা তৈরির ব্রিটিশ পদ্ধতি - চীনা মাটির কিংবা পর্সেলিনের টি পটে রাখা চা পাতার উপর গরম জল ঢালা হয়, এর কিছুক্ষন পরে, চা ভিজানো জল  ছেঁকে নেওয়া হয়, এবং তাতে কিছু দুধ এবং চিনি যোগ করা হয় - চায়ের স্টলেও এইভাবেই জনসাধারণের কাছে প্রদর্শিত বা ডেমোন্সট্রেশন করা হয়েছিল  হাওড়ার রেল স্টেশনে চায়ের স্টল স্থাপন করে।  এই প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ১৯৩০ সালের মধ্যে, ভারতীয় জনসংখ্যার কেবলমাত্র একটি ছোট অংশেরই চায়ের প্রতি অনুরাগ গড়ে উঠছিল, তখনও ৯০ শতাংশেরও বেশি ফসল রপ্তানি করা অব্যাহত রাখা হয়েছিল।


১৯২৯ সালে শুরু হওয়া মহামন্দার সূত্রপাতের সাথে সাথেই দেশীয় বাজার হঠাৎ করে আরও আকর্ষণীয় বলে মনে হতে শুরু করে।  ১৯৩০ এর দশকের গোড়ার দিকে আন্তর্জাতিক চায়ের দাম দ্রুত হ্রাস পায়।  ১৯৩৫ সালে, চা বাগান মালিকরা এক সমস্যার মুখোমুখি হয়, আর তা হল একশ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি অবিক্রিত, উদ্বৃত্ত চা কে বাজারজাত করতে না পারার সমস্যা।  এই সময়ে, চা সেস কমিটি (Tea Cess Committee) ভারতীয় চা বাজারের পুনর্গঠনের কাজ শুরু করে, সম্প্রসারণ শুরু হয় , বোর্ডকেও পুনর্গঠিত করা হয়েছিল ইন্ডিয়ান টি মার্কেট এক্সপানশন বোর্ড (Indian Tea Market Expansion Board) নামে , যা বর্তমান ভারতের টি বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (Tea Board of India) এর পূর্বসূরি।


 লুটজেনডর্ফ (Lutgendorf) এই চায়ের ক্যাম্পেনের সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছেন, ‘[…] “tea propagandists” were now dispatched in the hundreds, sometimes in motorized “tea vans”, equipped to dispense millions of cups of free tea and comparable numbers of “pice packets”, and to display colourful, vernacular-language signage produced by leading commercial artists’ (p. 15).


 বর্ধিত বাজেটে সজ্জিত,  ভারতীয় চা শিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে আগ্রেসিভ মার্কেটিং বা আগ্রাসী বিপণন অভিযান শুরু হয়। 'কয়েকশ "চা প্রচারকারী" বা চা প্রপাগণ্ডিস্টদের কখনও কখনও মোটরচালিত "চা ভ্যানে" প্রেরণ করা হয়েছিল, আর ভ্যানগুলো লক্ষ লক্ষ কাপ বিনামূল্যে চা এবং "পিস প্যাকেট" এর তুল্যমূল্য সংখ্যায় সরবরাহ করার জন্য সজ্জিত ছিল, শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্যিক শিল্পীদের দ্বারা চিত্রিত রঙিন প্যামফ্লেট আঞ্চলিক ভাষার চিহ্ন প্রদর্শন করত।


রেল স্টেশন, দোকান বাজার এবং উৎসবে এনামেল প্ল্যাকার্ড লাগানো হত যা কেবল চা এবং এই বিষয়ক উপকারিতার বিজ্ঞাপনই দিত না বরং এটি তৈরির সঠিক ব্রিটিশ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশিকাও দিত। একই উদ্দেশ্যে এই জায়গাগুলিতে একটি দলও উপস্থিত থাকত যারা চা তৈরির পদ্ধতি দেখাত।  ১৯৩০ এবং ১৯৪০ এর দশকে, বড় বড় কেটলি এবং চা দিয়ে সজ্জিত বাহনগুলি বাংলার শহুরে এবং আধা-শহুরে অঞ্চলে ভ্রমণ করে চায়ের বিজ্ঞাপন দিত এবং তার প্রস্তুতির পদ্ধতি প্রদর্শন করতে।


বিজ্ঞাপনগুলোতে চা এখন নাকি নারী জাগরণের মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। খাবারের পুষ্টি নিয়ে ওয়াকিবহাল, স্বাস্থ্য সচেতন স্মার্ট, আধুনিক গৃহকত্রীদের জন্য একটি প্রগতিশীল এবং ক্ষমতায়নের হাতিয়ার হিসাবে প্রচার পাচ্ছে, হয়েছিল। 


 ইন্ডিয়ান টি মার্কেট এক্সপেনশন বোর্ড (The Indian Tea Market Expansion Board) কারখানার মালিক কতৃপক্ষ ম্যানেজারদের এবং শ্রমিকদের দুপুরের চা বিরতির প্রস্তাব দেয়, এর প্রেক্ষিতে বলা হয় যে, এর ফলে আরও সতর্ক বা alert এবং দক্ষ বা উৎপাদনশীল কর্মী বাহিনী তৈরি হবে বলে মনে করা হতো। স্বাধীনতা আন্দোলনের চেতনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে, চা এখন ভারতের সর্বজনগ্রাহ্য় পানীয় হিসাবে পরিগণিত হয়েছে যা দেশের বিভিন্ন ধর্মীয়, ভাষাগত এবং বর্ণ গোষ্ঠীকে একীভূত করেছে।


এই প্রচার বা ক্যাম্পেইন জনসাধারণের মধ্যে চা সম্পর্কে ব্যাপক ব্যাপক রকমের ধারনা তৈরি করছিল।  প্রস্তুত চায়ের বিনামূল্যে নমুনা বা ফ্রি স্যাম্পেল এবং কম দামের সিঙ্গেল ইউজ প্যাকেজ প্রদানের বিপণন কৌশল এতটাই সফল ছিল যে এটি ব্রুক বন্ড, লিপটন এবং এ তোশ অ্যান্ড সন্স (Brooke Bond, Lipton and A. Tosh & Sons.) এর মতো বেসরকারি চা কোম্পানিগুলি গ্রহণ করেছিল।  ব্রুক বন্ড (আর্থার ব্রুক ১৮৬৯ সালে ইংল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত) এবং লিপটন (স্যার টমাস জনস্টোন লিপটন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি ব্রিটিশ সংস্থা যা ১৮৮৮ সালে চায়ের ব্যবসা শুরু করেছিল) দুটি বিদেশী কোম্পানি ছিল, যা বিংশ শতাব্দীতে ভারতে চায়ের ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তার করেছিল। Brooke Bond (founded in England in 1869 by Arthur Brooke) and Lipton (a British firm founded by Sir Thomas Johnstone Lipton that ventured into tea business in 1888) were the two foreign companies, which dominated the tea trade in India in the twentieth century. 


ব্রুক বন্ড কার্টগুলি (Brooke Bond carts) কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াত এবং যারা চা পান করতে আগ্রহী তাদের জন্য বিনামূল্যে চা পরিবেশন করত।  প্যাকেটজাত চায়ের ফ্রি স্যাম্পল এই দুটি কোম্পানি গ্রামে গ্রামে বিতরণ করত।  সম্পূর্ন বিনামূল্যে যাতে চায়ের নমুনাগুলিও সব জায়গায় ছড়িয়ে পরতে পারে তার জন্যই এই প্রচেষ্টা। চা কে জনপ্রিয় পানীয় হিসেবে ভারতীয় সমাজে পরিচয় করানোর দায়িত্ত্ব নিয়েছিল  কলিকাতার এ. তোশ অ্যান্ড সন্স (A.Tosh & Sons) (১৮৯৭ সালে আশুতোষ ঘোষ এবং তাঁর বড় ছেলে প্রভাস চন্দ্র ঘোষের প্রতিষ্ঠিত) -এর মতো ভারতীয় সিনেমা পরিবেশক সংস্থাগুলি, ‘Be Indian, Buy Indian!’ সেন্টিমেন্টকে পুঁজি করে চা স্বদেশী পণ্য হিসেবে বাজারজাত হয়।


এত প্রচারের ফল শিগগিরই ফলল, আশ্চর্যজনকভাবে, এত বিজ্ঞাপন দিয়ে, শহরের বাসিন্দাদের বিনামূল্যে চা পান করিয়ে চায়ের প্রচার আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পেতে শুরু করল।  বাঙালিরা একে 'চা' বলা শুরু করে দিয়েছে।  চা খাওয়ার এই বৃদ্ধিকে সাক্ষী করে, অনেক স্থানীয় উদ্যোক্তা চা পাতা বিক্রির ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পরে।  ব্রিটিশদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, স্টোভ ও কেটলি দিয়ে সজ্জিত স্থানীয় বিক্রেতারা হাওড়ার ঐতিহাসিক রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে, এমনকি রাস্তার ধারে চা বিক্রি শুরু করে, ছোট কাচের গেলাসে পানীয় পরিবেশন করত।


যাইহোক, স্থানীয়দের অধিকাংশই দুধ, চিনি এবং মশলা দিয়ে চা তৈরী করত, মশলার মধ্যে ব্যবহৃত হত কুচানো আদা বা সবুজ এলাচ শুঁটি, দুধ দেওয়া হত অত্যন্ত বেশী পরিমাণে। এখন কিভাবে যে এই দুধ দিয়ে চা তৈরি করা শুরু হয় তার  উৎস সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। তা খুঁজে বের করা কঠিন এখন। হতে পারে চা তৈরির এই পদ্ধতি উদ্ভূত হয়েছে রাস্তার ধারের চায়ের দোকানে কিংবা রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মের চা বিক্রেতার কাছে, কিংবা গৃহস্থ বাড়ির রান্নাঘরে।  কিন্তু ওদিকে ব্রিটিশরা কিঞ্চিৎ আতঙ্কিত হয়েছিল কারণ তারা নাকি  ভারতীয়দের কীভাবে চা কিভাবে 'সঠিক উপায়' বানানো যায় তা শেখাতে ব্যর্থ হয়েছিল।


কেবলমাত্র শহরের অভিজাত ব্যক্তিরাই যারা ব্রিটিশ পদ্ধতিতে চা তৈরি করতে পছন্দ করত তাদের জন্য বিভিন্ন ধরণের দার্জিলিং চাই ছিল প্রথম পছন্দ, ভিন্ন ভিন্ন ধরণের চায়ের মিশ্রণ দিয়ে তৈরি হত 'চায়ের শ্যাম্পেন'।  যেহেতু দার্জিলিং চা একটু হালকা রঙের এবং পাতলা হয়, তাই  দুধ ছাড়াই সবচেয়ে ভাল খেতে হয়,  তাই দুধ, চিনি এবং মশলা দিয়ে এটিকে মশলা চা বানানোর  কোন মানে হয় না। দার্জিলিং চা খুব ফাইন কোয়ালিটির এবং স্বাদে- সুগন্ধে বা অ্যারোমা তে গুণগত মানের উন্নতি সাধন ঘটানো হতে থাকে।  বিপরীতে, আসাম চা কড়া ধরণের চা সম্পূর্ন ভাবে ফুটিয়ে যা দুধ ছাড়া পান যায় না।

 

এই চায়ের দাম আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা গ্রাহক সংখ্যা নির্ধারণ করে।  আসামের চায়ের তুলনায় দার্জিলিং চায়ের বিভিন্ন ভারাইটির ফলন হওয়া কঠিন।  মাটি এবং জলবায়ুর পরিস্থিতি, যে উচ্চতায় এটি জন্মায়, হয়ে ওঠে স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় তার বৃদ্ধি কিন্তু হয় অত্যন্ত ধীরগতিতে। দার্জিলিং চায়ের চাষের মৌসুম খুব কম সময়ের জন্য এবং উৎপাদনও হয় অল্প পরিমাণে।


এই সমস্ত কারণগুলি ছাড়াও, দার্জিলিং চা গুণমানে সবচেয়ে ভাল এবং  সাথে সাথে এটি হয়ে উঠেছে আরও ব্যয়বহুল।  বিপরীতে, আসামের চা বরাবরই দামের ভিত্তিতে অধিকতর সহজলভ্য ভারতীয় মধ্যবিত্ত সমাজের কাছে এবং যারা ভারতীয় রীতিতে চা তৈরি করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য পছন্দসই নানা বৈচিত্র্য নিয়ে এসেছে।  ১৯৩০ সালে, ব্রুক বন্ড (Brooke Bond) ভারতের বাজারে রেড লেবেল (Red Label) চালু করেছে, যা এখনও আসামের চায়ের একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড।


তথ্যসূত্র: ‘Taste of Time: A Food History of Calcutta’ by Mohona Kanjilal’s  from Speaking Tiger Books 2021.


---------------------------------------------------------------------------------------------------------------


ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির  জাহাজ ভর্তি  নতুন বছরের উপহার / East India Company's Ship full of  New Year’s Gift to India 


এক জাহাজ ভর্তি নতুন বছরের উপহার এসেছিল মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছে  ১৬১৩ সালে। 


ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির  জাহাজ ভর্তি  নতুন বছরের উপহার/ East India Company's Ship full of  New Year’s Gift to India
 আবু-আল-হাসানের ( ১৫৮৯-১৬৩০) চিত্রিত মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের ছবি: Image Courtesy : Wikimedia Commons


কোনো উপহার কিভাবে আপনার কাছে আসে ? রঙিন কাগজে মুড়ে তার উপর সুন্দর  রিবন জড়িয়ে সাধারণত আমরা উপহার নিতে অভ্যস্ত, তাই তো ? আচ্ছা যদি এমন হয়, এক জাহাজ ভর্তি রং-বেরঙের উপহার আপনার কাছে এল? ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এমনই একটি জাহাজ যা ১৬১৩ সালে ইংল্যান্ড থেকে সুরাটের জন্য যাত্রা করে। হেক্টর, হোপ, বান্টাম এবং সলোমনের ঘুরে ভারতে এসে পৌঁছেছিল সেই জাহাজ।  এই বিরাট নৌবহরটি  বহন করে এনেছিল ভারতবর্ষের তৎকালীন মুঘল সম্রাটের  জন্য বাছাই করা বহুমূল্য উপহার সামগ্রী; ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্যই এই উদ্যোগ অবশ্য।  


  মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের জন্য নির্বাচিত উপহারগুলির মধ্যে ছিল রৌপ্যমন্ডিত একটি স্কারলেট ক্লোক (scarlet cloak )  স্পিরিট ভর্তি মখমলে জড়ানো চেস্ট অফ বটল  ( chest of bottles ) এবং এসেছিল প্রচুর ছবি - ছবিগুলি ছিল কিং জেমস, তাঁর স্ত্রী কুইন অ্যান, টেমরলেন -স্বয়ং সম্রাট, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নর স্যার টমাস স্মিথ এবং তিনজন ইংরেজ মহিলার।

 

দীর্ঘ ভ্রমণে পেইন্টিংগুলিতে কী প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।   রঙগুলি কি বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে বা অন্যান্য ক্ষতি হতে পারে কি? সেইজন্য তারা শিল্পকর্ম সংরক্ষণ বা preservation ও অল্পস্বল্প ক্ষয়ক্ষতি হলে মেরামতের জন্য বিস্তারিত নির্দেশিকা সমেত এক পুস্তিকাও দিয়েছিল নাবিকদের। নববর্ষের উপহারের প্রধান কারিগর এডওয়ার্ড গলকে এই কাজ সম্পাদনের দায়িত্ত্ব দেওয়া হয়েছিল। কোনো ছবির ফ্রেম নষ্ট হয়ে গেলে নতুন  ফ্রেম তৈরির দায়িত্বও ছিল গল এর উপরে। 


জাহাজটি চশমাও নিয়ে যাচ্ছিল। কোম্পানির আশঙ্কা ছিল যে এত দীর্ঘ যাত্রায় এগুলির হয়ত ক্ষতি হতে পারে তাই তারা রবার্ট ইয়ংকে ফয়েলিং ( foiling )এর দায়িত্ব দিয়েছিল। এমনকি প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্বও ছিল তাঁর উপর । ইয়ং কে তাঁর চার বা পাঁচজন সহকর্মীকে এই ফয়েলিং এর কাজ শেখাতে হয়েছিল যাতে জাহাজে যত্রাকালিন ইয়ং

মারা গেলে তারা মেরামতির কাজ চালিয়ে নিতে পারে। 


সমুদ্রযাত্রায় মৃত্যু :

 

সেই সময় দীর্ঘ সমুদ্র যাত্রায় শারীরিক অসুস্থতা ইত্যাদি অনেক কারণে নাবিকদের মৃত্যু ঘটত, রবার্ট ইয়ং  ১৬১৪ সালের নভেম্বর মাসে ভারতে মারা যায় । এডওয়ার্ড গল মারা গিয়েছিল এবং লন্ডনে তাঁর স্ত্রী ইলিয়েনরের কাছে সমস্ত কিছু রেখে উইল করে গিয়েছিল। এর প্রমাণ পাওয়া যায়।  ১৬১৩ সাল থেকে ১৬১৬ সাল পর্যন্ত  সমুদ্রযাত্রার সময় মৃত্যু ঘটেছে এরকম অনেক নাবিকদের উইল আছে জাতীয় আর্কাইভগুলিতে, ক্যানটারবেরির প্রেরোগেটিভ কোর্টে  উইলগুলি প্রমাণিতও হয়েছে। 


যারা জাহাজে মারা গিয়েছিল তারা এশিয়া থেকে নিয়ে আসা জিনিষপত্রগুলিকে উইল করেছিল: চীনা কোমরবন্ধ, পোর্সোলিনের বাসন, সিল্ক টেক্সটাইল এবং মশলা - মশলার মধ্যে ছিল মরিচ, জয়ত্রি এবং জায়ফলের মতো মশলা। নাবিক উইলিয়াম ক্র্যান্ডল মারা গিয়েছিল জাহাজেই, সেই সময় তাঁর কাছে ছিল ১৫৯ পাউন্ড মরিচ । নাবিক অ্যান্টনি ওয়েনের কাছে ছিল ব্যারেল যার মধ্যে  ছিল ১০০ পাউন্ড জায়ফল। 


মৃত নাবিকদের পোশাক এবং বিছানাপত্রের মতো ব্যক্তিগত জিনিসগুলি প্রায়ই অন্যান্য সদস্যদের কাছে রেখে দেওয়া হত। অন্যথায়, এগুলি পরের বন্দরে আসলে সেখানে বিক্রি করা হত এবং উপার্জনটি এস্টেটে যুক্ত হত। নাবিক ক্রিস্টোফার টারপিন তার সরঞ্জামগুলি তাঁর সঙ্গী রিচার্ড ডিকসনের কাছে রেখেছিল, একটি দামি গাউন এবং স্ট্রাইপড দামি ট্যাফেটা (taffeta) স্যুট ছিল তার মধ্যে। কিন্তু নাবিক রিচার্ড ব্র্যাবসন সেগুলিকে নিজের বলে দাবি করে। টারপিনের কাছে তিনটি ওয়েস্ট কোট এবং একটি লেসযুক্ত স্যুটও ছিল। 


কখনও কখনও কোনো নাবিকের অসুস্থতার সময় তাঁর সহকর্মী অন্য নাবিকেরা সেবা - যত্ন করলে সেই নাবিকদের উইল করে ব্যক্তিগত জিনিসপত্র দান করার চলন ছিল। যে সব নাবিকদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল - দীর্ঘদিনের ভ্রমণ সূত্রে গড়ে ওঠা সম্পর্কের ক্ষেত্রেই এই উইল করে ব্যক্তিগত জিনিসপত্র দান কিংবা দামি জিনিসপত্রের রক্ষনাবেক্ষণ করাবার অনুরোধ ইত্যাদি দেখা যেত। উইলিয়াম ক্র্যান্ডল তার "ভাল বন্ধু" ক্যাপ্টেন মার্টিন প্রিংকে ক্রেন্ডলের মেয়ে এলিজাবেথের ভবিষ্যতের জন্য ২০ পাউন্ড বিনিয়োগ করতে বলেছিল, যাতে এলিজাবেথ সাবালিকা হলে একটা মোটা অংকের টাকা পেতে পারে। 

 প্রধান নাবিকের সঙ্গী লরেন্স স্পুনার ৩০ টুকরো সাটিন বিক্রি করেছিলেন, এবং এই অর্থ মূলতঃ প্রিংয়ের পাঁচ সন্তানের ভবিষ্যতের সুবিধার্থেই গচ্ছিত রাখা হয়েছিল। স্পুনার তার ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে তরোয়াল, বই (euclid’s elements), পোশাক এবং লিনেন বিক্রি করে তার মূল্যও প্রিং এর পরিবারকে দিয়েছিলেন। একটা আংটি বিক্রি করে প্রিংয়ের স্ত্রী জোয়ান পোর্সেলিনের বাসন এবং একটি ওয়েস্ট কোট এবং তাঁর মা ২০ শিলিং পেয়েছিলেন। 

শোকগ্রস্ত, লরেন্স স্পুনার টামওয়ার্থে মার্টিন প্রিং এর স্ত্রী এবং কন্যার কবর পুনরুদ্ধার করে, সেই স্মৃতিস্তম্ভের উপরে লাতিন শিলালিপি খোদাই করান হয়, সেখানে লেখা ছিল “quisquis eris qui transieris, perlege, plora” – “whoever you are who pass by, read, weep”. 








মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কাকে বলে স্ট্রিম অফ কনসাসনেস বা মগ্নচৈতন্য / What is Stream of Consciousness?

কাকে বলে স্ট্রিম অফ কনসাসনেস ? সাহিত্য ধারায় এটি এক রীতি, বলতে গেলে লেখনীর এক ধরণ। সাহিত্যের আলোচনায়  কিংবা সমালোচনায় 'স্ট্রিম অফ কনসাসনেস'- ‘Stream of Consciousness’  বা মগ্নচৈতন্য শুধুমাত্র এক শব্দ নয়, এ এক অনন্য, এক স্বতন্ত্র জঁর  ।  মগ্নচৈতন্যের   স্রোত সাহিত্যসৃষ্টির এক অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ন ধারা,  যা কিনা  বিংশ শতাব্দীর কিছু বিখ্যাত লেখক   নিযুক্ত এক স্বতন্ত্র লেখন রীতি। নিজেদের লেখনীতে কিছু ঘটনা পরম্পরাকে  বর্ণনা করতে ব্যবহার করেছিলেন তারা ।  কিন্তু '  মগ্নচৈতন্য '  কী?  কেনই বা  এটি একটি 'ধারা' বা ' জঁর' ?  কিছু  পরিচিতি দিলাম বটে শুরুতে কয়েকটি শব্দকে আশ্রয় করে, তবে  বিস্তারিত আলোচনা  এগোবে আস্তে আস্তে।  এই আপাত সাধারণ এবং একইসঙ্গে ব্যাপকভাবে ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা যুক্ত , সাহিত্যিক টার্মটির ধারণা  পরিষ্কার করতে সহায়তা করতে পারে হয়ত এই  আলোচনা ।   Image Courtesy: Steve Jhonson:pixels.com/free image প্রকৃতপক্ষে, ' মগ্নচৈতন্য  '   সাহিত্যের  জঁর  হিসাবে একেবারেই শুরু করেনি    তার  জীবন !  তবে ?   অবাক করা তথ্য এই  যে - সম্ভবতঃ এটি ছিল   এ

একটি প্রেমের গল্প : অমৃতা প্রীতম এবং সাহির লুধিয়ানভি / The love story of Amrita Pritam and Sahir Ludhianvi

প্রেমের গল্প। প্রেম ভাঙার গল্প। পাত্র-পাত্রী সাহির লুধিয়ানভি এবং অমৃতা প্রীতম। দিকপাল দুই সাহিত্যিক। কেমন ছিল সেই সম্পর্ক ? ''আমি তো জানতাম সাহির, তোমার কোনোদিনই আমার প্রতি প্রতিশ্রুতি রক্ষার কোনো দায় ছিল না । কি যেন বলে আজকাল ! ও হ্যাঁ , কমিটমেন্ট ফোবিয়া।  ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারবে কি না সেই দ্বিধাতেই তো রয়ে গেলে। কেন  যেন মনে হয় আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা  সেই গভীরতর  অতলান্ত  স্পর্শ করে নি কোনোদিন। ছুঁয়ে দেখেনি সেই ভালোবাসার তীব্র টানকে। আচ্ছা সত্যি করে বলো তো, তুমি কি সত্যি আমাকে ভালোবেসেছ  ? যতটা আমি তোমাকে বেসেছি।  "ম্যায়নে টুট  কে প্যায়ার কিয়া তুম সে / ক্যায়া  তুমনে ভী উতনা কিয়া মুঝ সে?'' অমৃতা প্রীতম এবং সাহির লুধিয়ানভি : Image Courtesy : Indian Express  ' ''মোহাব্বত কি পরখ  কা  ইয়েহি  তো রাস্তা  হ্যায় / তেরি  তালাশ মে নিকলু, তুঝে  না  পায়ু  ম্যায় '' । অমৃতা ভালোবাসা খুঁজেছেন, সেই আকুল করা ভালোবাসা,  হৃদয় তন্ত্রীতে সেই তীব্র ঝড় তোলা ভালোবাসা তাকেই তো খুঁজেছেন অমৃতা। পেয়েছেন কি ? খুঁজবো আমরা।  উপরের লাইনদুটি মজহা

বাংলা অণুগল্প- অনুগল্প সিরিজ /Bengali Story

অসীম আর মাধবীলতা অসীম.....এই যে এই দিকে, মাধবীলতা আবার ডাক দিলো,....... হ্যাঁ একদম ঠিক যাচ্ছ,......আমার হাতটা লক্ষ্য করে আস্তে আস্তে এগিয়ে এস, না না ওদিকে নয়.......ওদিকে কাঁটার ঝোপ......গায়ে ফুটে গেলে কেলেঙ্কারির একশেষ.....মাধবীলতা আর ভরসা রাখতে পারলো না, নিজেই এগিয়ে গিয়ে অসীমের হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে হাঁটতে লাগলো। অসীমের জামাকাপড় ভিজে জবজব করছে। একজায়গায় থামলো তারা, বেশ নির্জন, একটা বাড়ির ভিতরে ঢুকে এল। একটু পুরোনো বাড়ি কিন্তু বসবাসের যোগ্য। মাথাটা মুছে নাও, বেশ ভিজেছ, ঠান্ডা ব'সে গেলে জ্বর আসতে পারে....মাধবীলতা হাতের মুঠো ছেড়ে দিয়ে একটা গামছা এগিয়ে দিল। .অসীম গামছাটা নিয়ে সামনে খোলা জানালার বাইরের পুকুরটার দিকে তাকিয়ে রইল একদৃষ্টে। মাধবীলতার শাড়ির আঁচলের একটা অংশ একটু দেখা যাচ্ছে। ওদিকটায় বোধহয় কাঁটাঝোপ ছিল. কালকের মধ্যে দুটো লাশ ই ভেসে উঠবে আশা করা যায় । -------------------------------------------- ছ'য়ে ছটাক : অনুগল্প ১. জানালাটার গ্রিলের মধ্যে দিয়ে নিজের চার হাত পা বের করে দিল সে, এবার শেকল দিয়ে বাঁধার কাজ শুরু হবে। ২.আমার পেনের কালিটা ধীরে ধীরে শেষ