সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সাহিত্যিক এমিলি ডিকিনসনের চিঠিপত্র : একান্ত ভালোবাসা - সুসান গিলবার্ট/ Emily Dickinson’s Love Letters to Susan Gilbert

 

এমিলির প্রেম, তাঁর কবিতার মতোই পবিত্র  সুন্দর। তাঁর একমাত্র প্রেম, তার কবিতার মতোই বহমান। 

" আমাদের হৃদয়ের মধ্যে যে  গির্জা আছে, আজ সকালে আমার সঙ্গে সেখানে এস, যেখানে ঘণ্টা সবসময় বাজতে থাকে, এবং সেখানে একজনই প্রচারক থাকেন - যার নাম প্রেম - তিনি আমাদের জন্য সুপারিশ করবেন!"


এমিলি তার ভালোবাসাকে খুঁজে পেয়েছেন , তাই তো তার জন্য তৈরী হয়েছে হাজার হাজার কবিতা।  এমিলি ডিকিনসন ( ডিসেম্বর ১০,   ১৮৩০ -  মে ১৫ ১৮৮৬) দেখা পেয়েছেন তার পরম আকাঙ্খিত প্রাণের মানুষের। কুড়ি বছরে পা দিতে আর মাত্র চার মাস  বাকি। এই কি তবে জন্মদিনের শ্রেষ্ঠ উপহার ? জীবনের  থেকে শ্রেষ্ঠ উপহার ?  তার কুড়ি বছরের  জন্মদিনের চার মাস আগে, এমিলি  সেই ব্যক্তির সাক্ষাৎ পাবেন, যিনি হয়ে উঠবেন তাঁর  প্রথম প্রেম, তাঁর  মতে তাঁর জীবনের সর্বকালের সেরা নারী - সুসান গিলবার্ট- এক  অনাথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গণিতবিদ, পুরো নয় দিনের  ছোট, কবির পুরো জীবন জুড়ে -পুরো হৃদয় জুড়ে আবাস; সুসান তাঁর জীবনীশক্তির আভাস, তাঁর পরামর্শদাতা, তাঁর লেখার  প্রাথমিক পাঠক এবং সম্পাদক, তাঁর জীবনকালের প্রবল সংযুক্তি, তাঁর মতে -বিশ্বের একমাত্র নারী। 

সে প্রেম বড়  সুন্দর, হৃদয়বিদারক, ব্যাখ্যাহীন, অবকাশহীন সম্পর্কের জন্য পরিপূর্ণতা লাভ করেছে, যা মানবতার মাঝে লালিত করেছে অমর এবং মৌলিক কবিতাগুলিকে, প্যারাডাইম শিফট হয়েছে এক। 


সাহিত্যিক এমিলি ডিকিনসনের চিঠিপত্র : একান্ত ভালোবাসা - সুসান গিলবার্ট / Emily Dickinson’s Love Letters to Susan Gilbert

 সপ্তদশী এমিলি ডিকিনসন : Image Courtesy :Amherst College Archives & Special Collections, gift of Millicent Todd Bingham, 1956

সেই সময়ের মহিলাদের জন্য উপলব্ধ যে অল্পসংখ্যক যথাযথ একাডেমিক কঠোরতর  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল তার মধ্যে একটি ছিল  উটিকা ফিমেল একাডেমি, সেখান থেকেই স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনা শেষ করেন  সুসান গিলবার্ট।  তারপর  বোনের কাছাকাছি  আমহার্স্টে স্থায়ী হ'ন। এরপর শুরু হয় এক পরম ভালোবাসার কাহিনী। ১৮৫০ সালের এক গ্রীষ্মবকাশ,  ডিকনসনের জীবনে প্রেমের প্রবেশ, যা কবি পরে বলেছেন, এক পরিপূর্ন আয়ামে-  "যখন প্রথম প্রেম শুরু হয়েছিল, প্রথম দরজার ধাপে এবং চিরসবুজের  অধীনে"“when love first began, on the step at the front door, and under the Evergreens.”

শান্ত এবং স্থিতধী, নিজের মধ্যে আবেগের গুম হয়ে থাকা আবেগ, কুড়ি  বছর এমিলি যাপন করছিলেন এক নিভৃত জীবন। বোন মারা  গিয়েছে কিছুদিন আগে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে, সেই বোনের জন্য পরছেন কালো পোশাক। সেই বোন যিনি  যারা তাদের বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর থেকে তাঁর মাতৃসত্তা দিয়ে ঘিরে  রেখেছিলেন; বড় একা হয়ে  গেলেন এমিলি, বড় ভালোবাসার, এক নিশ্চিন্ত মানসিক আশ্রয়ের দরকার হয়ে পরেছিল এমিলির। সুসান এমিলি এবং তাঁর ভাই অস্টিন ডিকিনসনের উপর যেন দ্বৈতরূপে  জাদু করছিলেন! সুসানের আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ত্ব বশীভূত করছিল দুই ভাই-বোনকেই।  এমিলি দেখলেন সুসানকে। মগ্ন, গভীর, গম্ভীর পান্ডিত্যের ঝলকানি ব্যক্তিত্বে, ইউরেনিয়ান সৌন্দর্য্য- তাঁর  সমতল, পুরুষ্ট  ঠোঁট এবং গভীর চোখের তারা একেবারেই  পুরুষালি নয়, কিন্তু তাঁর কাটাকাটা  ডিম্বাকৃতি মুখ এবং ছোট্ট  কপাল ঠিক মেয়েলিও  নয়। এমিলির মনের মধ্যে এক শিহরণ, এক অন্যরকম অনুভূতি। 

 এমিলি ডিকিনসন  লিখছেন, "সেরা জাদুবিদ্যা হ'ল জ্যামিতি।''-“Best Witchcraft is Geometry .”  জ্যামিতির মতো জটিল সম্পর্কের জন্যই কি একথা বলা ? এমিলি আরো লিখছেন,  এখন সে এবং তাঁর  ভাই উভয়ই ত্রিভুজের জ্যামিতিক চিত্রের মতো চালিত হচ্ছেন, এবং এক বিন্দুতে রেখেছেন সুসানকে, জীবনের এই পর্যায় এক মোহ-মুগ্ধকর  জাদুকরীতে সম্মোহিত অবস্থায় নিজেদের খুঁজে পেয়েছেন, এবং সাথে সুসানকে।  এমিলির  মোহাচ্ছন্নতা তীব্রতর হচ্ছিল । সুসানের হৃদয়ে প্রবেশের প্রায় দুই দশক পরে তিনি নিরবচ্ছিন্ন আকাঙ্ক্ষা নিয়ে লিখতেন: ''To own a Susan of my own/  Is of itself a Bliss/ —Whatever Realm / forfeit, Lord,Continue me in this!''

সুসান তাঁর জীবনে এসেছে, বড্ড নিজের করে পেয়েছেন সুসানকে, সুখী এমিলি, হারানো সম্পর্ক-হারানো স্মৃতির-হারানো বন্ধুতার মধ্যে আবার ফিরিয়ে এনেছেন এমিলি। ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। এভাবেই যেন থাকতে পারেন তাঁরা তেমনই প্রার্থনা। ডিকিনসনসের জীবনে সুসানের আগমনের পরে আঠারো মাস পূর্ণ হয়েছে, ঘনিষ্ঠতার চরম পর্যায়, ভালোবাসার ঝড় উঠেছে। দুই যুবতীর একসাথে বনপথে  দীর্ঘক্ষণ ভ্রমণ,  বই আদান-প্রদান, একে অপরের কাছে কবিতা পাঠ, বড় অনুভূতিপ্রবণ  এই পথচলা; নিবিড়, অন্তরঙ্গ চিঠিপত্রের সূচনা হয়েছিল, বিকশিত হয়েছিল এই ভালোবাসার  এবং স্থায়ী হয়েছিলো এমিলির সমগ্র জীবনকালে। এমিলি সুসানকে বলেছিলেন, "আমরা একমাত্র কবি, এবং বাকি সবাই গদ্য।"- “We are the only poets,” “and everyone else is prose.”

:১৮৫২ সালের প্রথম দিকে কবি শব্দের বাইরে বেরোতে চাইলেন, ধারণ করতে চাইলেন এক ছদ্মবেশ। বুঁদ হতে চাইলেন নতুন শব্দের মোড়কে। কিংবা শব্দকে ছাপিয়ে যেতে থাকে ভাবনার পাখনারা !এক রবিবার বার্তা পাঠালেন  তিনি সুসানের কাছে, ক্ষণিক ইশারায় জুরলেন আবদার: “Come with me this morning to the church within our hearts,

where the bells are always ringing, and the preacher whose name is Love — shall intercede for us!”


১৮৫১ সালের এক শরৎকালের  সুসান বাল্টিমোরে গণিত শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হলেন, কার্যকালের সময়সীমা দশ মাস।  প্রচণ্ড কষ্ট পেলেন এমিলি এই বিচ্ছেদে, নিজের ভিতরে হলেন বিধ্বস্ত, বুঝতে দিলেন না কাউকে, আনন্দে আছেন এমনই দেখালেন বাইরে, মুখে এক প্রফুল হাসি বজায় রাখার চেষ্টা করে চলেছেন সারাটা সময় ধরে। লিখলেন ঈষৎ তির্যক চিঠি: “I fancy you very often descending to the schoolroom with a plump Binomial Theorem struggling in your hand which you must dissect and exhibit to your uncomprehending ones,”- সুসানের গাণিতিক অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা নিয়ে কোনো সন্দেহই ছিল না এমিলির।


সুসান ছিলেন বিজ্ঞান মনষ্ক মানুষ, সবকিছুর মূলে আছে ''বিজ্ঞান'' এমন মনে করা মানুষ তিনি; "কবিতা" হিসাবে দশকের পর  দশক ধরে ডিকিনসনের কবিতাগুলি যে আসলে এক বৈজ্ঞানিক ধীশক্তি পরিচয়বাহী তা অনুভব করেছিলেন তিনি ।


(চলবে)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কাকে বলে স্ট্রিম অফ কনসাসনেস বা মগ্নচৈতন্য / What is Stream of Consciousness?

কাকে বলে স্ট্রিম অফ কনসাসনেস ? সাহিত্য ধারায় এটি এক রীতি, বলতে গেলে লেখনীর এক ধরণ। সাহিত্যের আলোচনায়  কিংবা সমালোচনায় 'স্ট্রিম অফ কনসাসনেস'- ‘Stream of Consciousness’  বা মগ্নচৈতন্য শুধুমাত্র এক শব্দ নয়, এ এক অনন্য, এক স্বতন্ত্র জঁর  ।  মগ্নচৈতন্যের   স্রোত সাহিত্যসৃষ্টির এক অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ন ধারা,  যা কিনা  বিংশ শতাব্দীর কিছু বিখ্যাত লেখক   নিযুক্ত এক স্বতন্ত্র লেখন রীতি। নিজেদের লেখনীতে কিছু ঘটনা পরম্পরাকে  বর্ণনা করতে ব্যবহার করেছিলেন তারা ।  কিন্তু '  মগ্নচৈতন্য '  কী?  কেনই বা  এটি একটি 'ধারা' বা ' জঁর' ?  কিছু  পরিচিতি দিলাম বটে শুরুতে কয়েকটি শব্দকে আশ্রয় করে, তবে  বিস্তারিত আলোচনা  এগোবে আস্তে আস্তে।  এই আপাত সাধারণ এবং একইসঙ্গে ব্যাপকভাবে ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা যুক্ত , সাহিত্যিক টার্মটির ধারণা  পরিষ্কার করতে সহায়তা করতে পারে হয়ত এই  আলোচনা ।   Image Courtesy: Steve Jhonson:pixels.com/free image প্রকৃতপক্ষে, ' মগ্নচৈতন্য  '   সাহিত্যের  জঁর  হিসাবে একেবারেই শুরু করেনি    তার  জীবন !  তবে ?   অবাক করা তথ্য এই  যে - সম্ভবতঃ এটি ছিল   এ

একটি প্রেমের গল্প : অমৃতা প্রীতম এবং সাহির লুধিয়ানভি / The love story of Amrita Pritam and Sahir Ludhianvi

প্রেমের গল্প। প্রেম ভাঙার গল্প। পাত্র-পাত্রী সাহির লুধিয়ানভি এবং অমৃতা প্রীতম। দিকপাল দুই সাহিত্যিক। কেমন ছিল সেই সম্পর্ক ? ''আমি তো জানতাম সাহির, তোমার কোনোদিনই আমার প্রতি প্রতিশ্রুতি রক্ষার কোনো দায় ছিল না । কি যেন বলে আজকাল ! ও হ্যাঁ , কমিটমেন্ট ফোবিয়া।  ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারবে কি না সেই দ্বিধাতেই তো রয়ে গেলে। কেন  যেন মনে হয় আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা  সেই গভীরতর  অতলান্ত  স্পর্শ করে নি কোনোদিন। ছুঁয়ে দেখেনি সেই ভালোবাসার তীব্র টানকে। আচ্ছা সত্যি করে বলো তো, তুমি কি সত্যি আমাকে ভালোবেসেছ  ? যতটা আমি তোমাকে বেসেছি।  "ম্যায়নে টুট  কে প্যায়ার কিয়া তুম সে / ক্যায়া  তুমনে ভী উতনা কিয়া মুঝ সে?'' অমৃতা প্রীতম এবং সাহির লুধিয়ানভি : Image Courtesy : Indian Express  ' ''মোহাব্বত কি পরখ  কা  ইয়েহি  তো রাস্তা  হ্যায় / তেরি  তালাশ মে নিকলু, তুঝে  না  পায়ু  ম্যায় '' । অমৃতা ভালোবাসা খুঁজেছেন, সেই আকুল করা ভালোবাসা,  হৃদয় তন্ত্রীতে সেই তীব্র ঝড় তোলা ভালোবাসা তাকেই তো খুঁজেছেন অমৃতা। পেয়েছেন কি ? খুঁজবো আমরা।  উপরের লাইনদুটি মজহা

পৃথিবীর দীর্ঘতম বাস রুট - কলকাতা থেকে লন্ডন / The World’s Longest Bus Route- From London To Kolkata

পৃথিবীর দীর্ঘতম বাস রুট - কলকাতা থেকে লন্ডন / The World’s Longest Bus Route- From London To Kolkata কলকাতা থেকে লন্ডনে যাবেন? বাসে চেপে ? ঠিক এইরকমই এক পরিকল্পনা করা হয়েছিল একবার... লন্ডন - কলকাতা - কলকাতা - লন্ডন , বাস সার্ভিস তাও    আবার লাক্সারি    বাস সার্ভিস। চমকে  উঠলেন    নাকি ? তা চমক লাগানো কথা বটে ! খাস কলকাতা থেকে বাস নিয়ে যাবে কিনা সুদূর লন্ডন ! হ্যাঁ , সত্যি।   বাস বটে একখানা। নাম তার এলবার্ট।   খাসা ট্যুর প্ল্যান হয়েছিল। কি দুঃখ হচ্ছে ? যেতে পারবেন না তাই ?  এত দুঃখ করার কিচ্ছু    নেই , সেই বাসে    এখনও চড়তে পারেন আপনি। কি বলছেন , তাই আবার হয় নাকি ? খুব    হয়। কিন্তু একটু টাইম মেশিনে চড়ে বসতে হবে যে !  Image  Courtesy: reddit.com  ১৯৬০   সালে   কলকাতা   থেকে ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডন যাওয়ার জন্য একটি বাস সার্ভিস। ডবল ডেকার সমস্ত রকমের লাক্সারি সুবিধাযুক্ত বাস। এলবার্ট ট্যুর।