সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সিলভিয়া প্লাথ: জীবন ও সাহিত্য / Life of Sylvia Plath

হারিয়ে যাওয়া কথা গুলো হওয়াতে উড়তে থাকে, সারাদিন মানের ক্লান্ত ঘাম একা একাই পুড়তে থাকে। সিলভিয়া প্লাথ, বিশ শতকের সবচেয়ে  প্রশংসিত কবিদের একজন।  আত্মহত্যা করেন সিলভিয়া, মাত্র ৩০ বছর বয়সে। নিজের জীবন দিয়ে নিজের গোলাপ কবিতা গাছকে বুনে বানিয়ে পথ করে দিয়েছিল সিলভিয়া। 



সিলভিয়া প্লাথ: জীবন ও সাহিত্য / Life of Sylvia Plath
সিলভিয়া প্লাথ: Image Courtesy: Wikimedia Commons 



সিলভিয়া প্লাথ। তাঁর জীবন, তাঁর সাহিত্য। Catalogue তৈরি করতে থাকেন নিজের মধ্যে। Singular verse তৈরি হয়, violent emotion এর ঘূর্ণন ওঠে, মৃত্যুর প্রতি তীব্র obsession, হতাশার আবেশ ঘিরে ধরতে থাকে।   নিউইয়র্ক টাইমস বুক রিভিউতে, জয়েস ক্যারল ওটস (Joyce Carol Oates) প্লাথকে  “one of the most celebrated and controversial of postwar poets writing in English.”  বলে বর্ণনা করেছেন।


তীব্রভাবে আত্মজীবনীমূলক, প্লাথের কবিতাগুলি তার নিজের মানসিক যন্ত্রণা, সহকবি টেড হিউজের ( ted hughes) সাথে তার কাটাছেঁড়া বিবাহ, তার পিতামাতার সাথে তার অমীমাংসিত দ্বন্দ্ব এবং নিজের সম্পর্কে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি অন্বেষণ করে।  ওয়ার্ল্ড সোশ্যালিস্ট (world socialist) ওয়েব সাইটে, মার্গারেট রিস (margaret rees) বলেছেন, “whether plath wrote about nature, or about the social restrictions on individuals, she stripped away the polite veneer. she let her writing express elemental forces and primeval fears.in doing so, she laid bare the contradictions that tore apart appearance and hinted at some of the tensions hovering just beneath the surface of the american way of life in the post war period.” ।


প্ল্যাথ প্রকৃতি সম্পর্কে লিখেছেন,  ব্যক্তিদের উপর সামাজিক বিধিনিষেধ সম্পর্কে লিখেছেন,  ভদ্র ব্যাহ্যবরণটিকে সরিয়ে নিয়েছেন, লিখেছেন।  তাঁর লেখা  মৌলিক শক্তি,  আদিম শক্তি ঘনীভূত করে, ভয়কে প্রকাশ করতে দেন তিনি। নিজের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলেছিল সিলভিয়ার,   বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল নিজের মনের কাছ থেকেই।  যুদ্ধোত্তর সময়ে আমেরিকান জীবনযাত্রার ইঙ্গিত সারা লেখা জুড়ে পাই আমরা। কাটা ছেড়া গুলো সারফেস এ চলে আসতে থাকে। সেই টানাপোড়েন উঁকি দিয়ে যায়। ইঙ্গিত দিয়ে যায় এর পরবর্তীতে ঘনিয়ে ওঠা ক্রাইসিস গুলোর। 


ওটস (Oates) Plath has inspired countless readers and influenced many poets since her death in 1963."    আরও সহজভাবে ব্যাখ্যা করেছেন ,  যখন তিনি লিখেছেন যে প্লাথের সবচেয়ে পরিচিত কবিতাগুলো আসলে, “many of them written during the final, turbulent weeks of her life, read as if they’ve been chiseled, with a fine surgical instrument, out of arctic ice.”  কবিতাগুলো  তার জীবনের চূড়ান্ত, অশান্ত সময়ে লেখা । ১৯৬৩ সালে তার মৃত্যুর পর থেকে প্লাথ অসংখ্য পাঠককে, অসংখ্য কবিকে অনুপ্রাণিত করেছেন, করেছেন প্রভাবিত।


নিউইয়র্ক টাইমস বুক রিভিউতে,  মার্কিন কবি  রবার্ট পিনস্কি (Robert Pinsky) লিখেছেন, “Thrashing, hyperactive, perpetually accelerated, the poems of Sylvia Plath catch the feeling of a profligate, hurt imagination, throwing off images and phrases with the energy of a runaway horse or a machine with its throttle stuck wide open. All the violence in her work returns to that violence of imagination, a frenzied brilliance and conviction.”।


কাঁধ ধরে জোরে একটা ঝাঁকুনি দেবার মত  অতিসক্রিয়, অতিদ্রুত এক ক্ষোভ যেন কাজ করে সিলভিয়ার লেখায়। চিরতরে, চিরদিনের বুকে চাপ চাপ অস্বস্তি, অসুবিধা  ত্বরান্বিত হতে থাকে। অপ্রীতিকর অনুভূতি যেন এক কল্পনাকে আঘাত করে, জীবন থেকে পালিয়ে যাবার মুহূর্তের শক্তি দিয়ে এক টুকরো কঠিন ছবি এবং বাক্যাংশ ছুঁড়ে দেয় পাঠকের দিকে।   সমস্ত সহিংসতা, কল্পনার সেই সহিংসতায়, এক উন্মত্ত দীপ্তি এবং প্রত্যয় নিয়ে যেন ফিরে ফিরে আসে।


ডেনিস ডনোগু (Denis Donoghue) নিউ ইয়র্ক টাইমস বুক রিভিউতেও অনুরূপ পর্যবেক্ষণ করেছেন: “Plath’s early poems, many of them, offered themselves for sacrifice, transmuting agony, ‘heart’s waste,’ into gestures and styles.” ।

প্ল্যাথের প্রথম দিকের কবিতা,  অনেকগুলিই আত্মত্যাগকে, যন্ত্রণাকে, হৃদয়ের নিষ্কাম বর্জ্যকে উৎসর্গ করে। জীবন ভঙ্গি যেন কবিতা শৈলীতে স্থানান্তরিত করেছে।


তিনি আরও যোগ করেছেন যে  “she showed what self-absorption makes possible in art, and the price that must be paid for it, in the art as clearly as in the death.” ডিকশনারি অফ লিটারারি বায়োগ্রাফি এর (Dictionary of Literary Biography) প্রাবন্ধিক টমাস ম্যাকক্লানহান (Thomas McClanahan) লিখেছেন, “At her most articulate, meditating on the nature of poetic inspiration, [Plath] is a controlled voice for cynicism, plainly delineating the boundaries of hope and reality. At her brutal best—and Plath is a brutal poet—she taps a source of power that transforms her poetic voice into a raving avenger of womanhood and innocence.”।


তিনি দেখিয়েছেন শিল্পে কীভাবে আত্ম-শোষণ সম্ভব করে তোলা যায়,  এবং এর জন্য যে মূল্য দিতে হবে, শিল্পে  মৃত্যুর মতো  সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাওয়ার মতো সিদ্ধান্তের সমতুল। কাব্যিক অনুপ্রেরণায় প্রকৃতির উপর এক ধরণের নির্ভরতা দেখা দেয়, সিনিকদের জন্য একটি নিয়ন্ত্রিত কণ্ঠস্বর, খুব স্পষ্ট এক  নিরাশা এবং বাস্তবতার সীমারেখা বর্ণনার মাঝখানে হারিয়ে গেছে প্লাথের কবিতা । ব্রুটাল - সত্যি, ভয়ংকর সত্যি, এবং প্লাথ যেন একজন ব্রুটাল পোয়েট-তিনি শক্তির এক উৎসকে হনন করে নেন । যা তার কাব্যিক কণ্ঠকে করে তোলে নমনীয়।  রূপান্তরিত করে এক গভীর নির্মল সুধায়।


১৯৩২ সালে বোস্টনে জন্মগ্রহণ করেন সিলভিয়া।  জার্মান  কলেজের অধ্যাপক, অটো প্লাথ (Otto Plath) এবং তার ছাত্রী অরেলিয়া শোবারের (Aurelia Schober) কন্যা।  অটো প্লাথ তার ছাত্রীকে বিয়ে করেন। কবির জীবনের প্রথম বছরগুলি সমুদ্রতীরের কাছে অতিবাহিত হয়েছিল, কিন্তু ১৯৪০ সালে সিলভিয়ার  বাবা মারা গেলে তাঁর জীবন হঠাৎ বদলে যায়।   কিছু কবিতা, যার মধ্যে রয়েছে সুপরিচিত "ড্যাডি" তার কন্ট্রোলিং বাবার সঙ্গে তাঁর সমস্যাবহুল সম্পর্ক। তাঁর অনুভূতি,  বিশ্বাসঘাতকতার বোধ হয় সিলভিয়ার - সবই যেন খুজেঁ খুজেঁ দেখি।


আর্থিক পরিস্থিতি প্লাথ পরিবারকে ওয়েলেসলি -  ম্যাসাচুসেটসে চলে যেতে বাধ্য করে, যেখানে অরেলিয়া প্লাথ বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে অ্যাডভান্স সেক্রেটারিয়াল স্টাডিজ বিষয় অধ্যাপনা করতেন।  সিলভিয়া প্লাথ একজন প্রতিভাধর ছাত্রী ছিলেন, যিনি বহু পুরষ্কার জিতেছিলেন এবং কিশোর বয়সে ন্যাশনাল ম্যাগাজিনে গল্প ও কবিতা প্রকাশ করেছিলেন।  স্কলারশিপ পেয়ে স্মিথ কলেজে যোগ দেন সিলভিয়া, অসম্ভব ভালো ছিলেন লেখাপড়ায়। এক বছরের মধ্যেই ম্যাডেমোইসেল কথাসাহিত্য বা ফিকশন প্রতিযোগিতা (Mademoiselle Fiction C) জিতে নেন এবং পরবর্তী গ্রীষ্মে কলেজের ম্যাগাজিনের  অতিথি সম্পাদক এর মতো মর্যাদাপূর্ণ পদ অর্জন করেন।  শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন সিলভিয়া।


চলবে 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

একটি প্রেমের গল্প : অমৃতা প্রীতম এবং সাহির লুধিয়ানভি / The love story of Amrita Pritam and Sahir Ludhianvi

প্রেমের গল্প। প্রেম ভাঙার গল্প। পাত্র-পাত্রী সাহির লুধিয়ানভি এবং অমৃতা প্রীতম। দিকপাল দুই সাহিত্যিক। কেমন ছিল সেই সম্পর্ক ? ''আমি তো জানতাম সাহির, তোমার কোনোদিনই আমার প্রতি প্রতিশ্রুতি রক্ষার কোনো দায় ছিল না । কি যেন বলে আজকাল ! ও হ্যাঁ , কমিটমেন্ট ফোবিয়া।  ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারবে কি না সেই দ্বিধাতেই তো রয়ে গেলে। কেন  যেন মনে হয় আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা  সেই গভীরতর  অতলান্ত  স্পর্শ করে নি কোনোদিন। ছুঁয়ে দেখেনি সেই ভালোবাসার তীব্র টানকে। আচ্ছা সত্যি করে বলো তো, তুমি কি সত্যি আমাকে ভালোবেসেছ  ? যতটা আমি তোমাকে বেসেছি।  "ম্যায়নে টুট  কে প্যায়ার কিয়া তুম সে / ক্যায়া  তুমনে ভী উতনা কিয়া মুঝ সে?'' অমৃতা প্রীতম এবং সাহির লুধিয়ানভি : Image Courtesy : Indian Express  ' ''মোহাব্বত কি পরখ  কা  ইয়েহি  তো রাস্তা  হ্যায় / তেরি  তালাশ মে নিকলু, তুঝে  না  পায়ু  ম্যায় '' । অমৃতা ভালোবাসা খুঁজেছেন, সেই আকুল করা ভালোবাসা,  হৃদয় তন্ত্রীতে সেই তীব্র ঝড় তোলা ভালোবাসা তাকেই তো খুঁজেছেন অমৃতা। পেয়েছেন কি ? খুঁজবো আমরা।  উপরের লাইনদুটি মজহা

এডগার অ্যালান পো সিরিজ ১ l Edgar Allan Poe Series

এডগার অ্যালান পো এর "দ্য মার্ডারস ইন দ্য রু মর্গ"- “The Murders in the Rue Morgue” গোয়েন্দা গল্পের প্রথম আত্মপ্রকাশ হল এবং যাত্রা শুরু হল গোয়েন্দা কাহিনীর।  এডগার অ্যালান পো: Image Courtesy : pixabay  ১৮৪১ সালের প্রথম দিক তখন, এডগার অ্যালান পো (Edgar Allan Poe) ফিলাডেলফিয়ার এক জনপ্রিয় প্রকাশনা গ্রাহামস ম্যাগাজিনের (Graham’s Magazine) সম্পাদক হিসাবে কাজ করছেন, পত্রিকায় একটি গল্প জমা দিয়েছিলেন, বহু খেটে গল্পটি লিখেছেন পো, যার নাম ছিল "মার্ডার্স ইন দ্য রু ট্রায়ানন " - “Murders in the Rue Trianon.” প্যারিসের রাস্তার পাশে একটি বাড়িতে একটি ভয়ঙ্কর জোড়া-খুনের ঘটনা ঘটেছে। বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী নিশ্চিত করেছেন যে বাড়ি থেকে একজনের কণ্ঠস্বর শোনা গেছে, তবে একজন বক্তা ঠিক কী ভাষা ব্যবহার করছেন সে বিষয়ে কেউ একমত হতে পারছে না। ভাষার ধাঁধায় গুলিয়ে যাচ্ছে গোটা ঘটনা। বেশ কিছু ক্লুও পাওয়া গেছে, কিন্তু সেগুলো প্রতিটি পরবর্তীটির চেয়ে আরও বিভ্রান্তিকর। প্রতিবেশীরা আতঙ্কিত। পুলিশ বিভ্রান্ত। কিন্তু সি. অগাস্ট ডুপিন (C. Auguste Dupin) একজন শেভালিয়ার (chevalier) এব

কাকে বলে স্ট্রিম অফ কনসাসনেস বা মগ্নচৈতন্য / What is Stream of Consciousness?

কাকে বলে স্ট্রিম অফ কনসাসনেস ? সাহিত্য ধারায় এটি এক রীতি, বলতে গেলে লেখনীর এক ধরণ। সাহিত্যের আলোচনায়  কিংবা সমালোচনায় 'স্ট্রিম অফ কনসাসনেস'- ‘Stream of Consciousness’  বা মগ্নচৈতন্য শুধুমাত্র এক শব্দ নয়, এ এক অনন্য, এক স্বতন্ত্র জঁর  ।  মগ্নচৈতন্যের   স্রোত সাহিত্যসৃষ্টির এক অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ন ধারা,  যা কিনা  বিংশ শতাব্দীর কিছু বিখ্যাত লেখক   নিযুক্ত এক স্বতন্ত্র লেখন রীতি। নিজেদের লেখনীতে কিছু ঘটনা পরম্পরাকে  বর্ণনা করতে ব্যবহার করেছিলেন তারা ।  কিন্তু '  মগ্নচৈতন্য '  কী?  কেনই বা  এটি একটি 'ধারা' বা ' জঁর' ?  কিছু  পরিচিতি দিলাম বটে শুরুতে কয়েকটি শব্দকে আশ্রয় করে, তবে  বিস্তারিত আলোচনা  এগোবে আস্তে আস্তে।  এই আপাত সাধারণ এবং একইসঙ্গে ব্যাপকভাবে ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা যুক্ত , সাহিত্যিক টার্মটির ধারণা  পরিষ্কার করতে সহায়তা করতে পারে হয়ত এই  আলোচনা ।   Image Courtesy: Steve Jhonson:pixels.com/free image প্রকৃতপক্ষে, ' মগ্নচৈতন্য  '   সাহিত্যের  জঁর  হিসাবে একেবারেই শুরু করেনি    তার  জীবন !  তবে ?   অবাক করা তথ্য এই  যে - সম্ভবতঃ এটি ছিল   এ