সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রোনাল্ড ডাহল এর লেখার সেন্সরশিপ ! / Censoring On Roald Dahl's Writing

series - censorship controversy 

সিরিজ - সেন্সরশিপ কন্ট্রোভার্সি

রোনাল্ড ডাহল এর লেখার সেন্সরশিপ ! / Censoring On Roald Dahl's Writing 


শুধুমাত্র নৈতিকতার দোহাই দিয়ে এবার সেন্সরশিপ ? আর সেন্সরশিপ কিনা রোনাল্ড ডাহল এর লেখার উপর ! লেখকের সবচেয়ে পরিচিত এবং জনপ্রিয় বই, যা কিনা শিশুদের জন্য লেখা, তা সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এই কন্ট্রোভার্সির শুরু ।  কিন্তু এই উদ্দেশ্য কি সফল হয়েছে ? নাকি বিরোধী শিবির ব্যর্থ করে দিতে পারে ? 



রোনাল্ড ডাহল (Ronald Dahl) : ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স (Wikimedia Commons)


যদিও ১৯৬০-এ  বেশ কয়েকটি বিখ্যাত বই প্রথমবার প্রকাশিত হয়,  শিশুদের বই ছিল সেই সবগুলোই;  রোনাল্ড ডাহল আজও তরুণদের , যাদের আমরা বলতে পারি ইয়ং অ্যাডাল্টদের কাছে ইংরেজী সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখকদের মধ্যে অন্য তম।  প্রকাশক পাফিনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত, রোল্ড ডাহল স্টোরি কোম্পানির সাথে একত্রে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা , তার উপন্যাসগুলির নতুন সংস্করণে কয়েকশত সংশোধন করা হবে। আর জন্য সাহিত্যিক সালমান রুশদি তাকে অযথা সেন্সরশিপ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।  ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে এই সংশোধনের সিদ্ধান্ত। 


সংবেদনশীল পাঠকদের দ্বারা প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলির মধ্যে ছিল বেশ কিছু শব্দের উপস্থিতি যোগ করা  যা কিনা বর্ণনাকারী শব্দগুলিকে অপসারণ বা প্রতিস্থাপন করে, এবং কিছু জায়গায় লিঙ্গ-নিরপেক্ষ ভাষা যোগ করাও এর অন্তর্ভুক্ত।  উদাহরণস্বরূপ, চার্লি অ্যান্ড দ্য চকলেট ফ্যাক্টরি গল্পে অগাস্টাস গ্লুপ এখন আর "ফ্যাট" - “fat”  নয় বরং "বিশাল" - “enormous” । মিসেস টুইট, টুইট থেকে, "কুৎসিত এবং জানোয়ার" - “ugly and beastly” না হয়ে "পশুর" -  “beastly” হয়ে উঠেছে।  মাটিল্ডায়, প্রটাগনিস্ট আর রুডইয়ার্ড কিপলিংয়ের লেখা পড়েন না বরং জেন অস্টেন পড়তে পছন্দ করেন।


যদিও "ক্যানসেল কালচার" -“cancel culture”  শব্দবন্ধটিকে সম্পাদকীয় পরিবর্তনগুলিকে বর্ণনা করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে; প্রকৃতপক্ষে  ইয়ং অ্যাডাল্ট দের যা পড়া উচিত এবং তারা এতদিন যা পড়ছে তার একটা বিশ্লেষণ সবসময়ই কাম্য। প্রচলিত সাহিত্য কর্মকে পরিবর্তন করার একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সমসাময়িক প্রত্যাশা পূরণের  কথাও ভাবতে হবে জন্য বা বলতে গেলে কন্টেম্পরারি ইস্যু গুলোকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে, ভাবতে হবে কীভাবে এতদিনের প্রচলিত সাহিত্যকর্মগুলিকে নতুন সামাজিক বিশ্লেষণের আঙ্গিকে বিচার করা যায়। 


কিন্তু একটা কথা আমাদের পুনর্বিবেচনা করতে হবে, শিশু সাহিত্য কি প্রাপ্ত বয়স্ক সাহিত্যের মধ্যেই আসবে? আমাদের কি শিশুসাহিত্যকে প্রাপ্তবয়স্কদের সাহিত্যের সাথে সমানভাবে বিবেচনা করা উচিত, যে প্রাপ্ত বয়স্ক সাহিত্যে লেখকের মূল শব্দগুলিকে পরিবর্তন করা কতটা উপযুক্ত কাজ বলে গৃহীত হবে?  বা আমরা কি স্বীকার করি যে শিশুদের কথাসাহিত্যকে ভিন্নভাবে বিবেচনা করা উচিত কারণ এটা তাদের চিন্তা ভাবনা কে  সমসাময়িক বিশ্বের বিভিন্ন ঘটনার নিরিখে অন্তর্ভুক্ত করার ভূমিকা রাখে?


বোল্ডলারাইজিং সাহিত্য


টমাস বাউডলারের দি ফ্যামিলি শেক্সপিয়র ১৮০৭ সালে প্রকাশিত হয় এবং এতে লেখকের 20টি নাটক ছিল।  এটি আসলে - “words and expressions…which cannot with propriety be read aloud in a family” - "শব্দ এবং অভিব্যক্তি ... যা একটি পরিবারে উচ্চস্বরে পড়া যায় না", বিশেষত নারী ও শিশুদের সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে পড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।


“bowdlerising” - বোল্ডলারাইজিং - প্রায় তখন থেকেই সাহিত্যিক কাজগুলিকে পরিবর্তন করার প্রক্রিয়া হয়ে  এসেছে , আর এই পরিবর্তন হয়েছে নৈতিকতার ভিত্তিতে! মানে সাহিত্য কীর্তি গুলির এক পরিবর্ত সাহিত্য কীর্তি বা অল্টারিং লিটারারি ওয়ার্ক! বিশশতক জুড়ে স্কুলগুলিতে শেক্সপিয়রের বোল্ডলারাইজড সংস্করণগুলি ব্যবহার করা অব্যাহত ছিল।


যদিও শেক্সপিয়ারের কাজগুলি ঠিক শিশুদের জন্য এমন বলা যাবে না,  বিশেষভাবে শিশুদের জন্য লেখার উদ্দেশ্যও  ছিল না, তবে এনিড ব্লাইটনের কথাসাহিত্য শিশু সাহিত্যের ক্লাসিক হিসাবে বিবেচিত কাজের বোল্ডারাইজেশনের  একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ।  বিগত চার দশকে তার বইগুলিতে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ফার অ্যাওয়ে ট্রি  এবং ফেমাস ফাইভ সিরিজ।


(চলবে)






মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

একটি প্রেমের গল্প : অমৃতা প্রীতম এবং সাহির লুধিয়ানভি / The love story of Amrita Pritam and Sahir Ludhianvi

প্রেমের গল্প। প্রেম ভাঙার গল্প। পাত্র-পাত্রী সাহির লুধিয়ানভি এবং অমৃতা প্রীতম। দিকপাল দুই সাহিত্যিক। কেমন ছিল সেই সম্পর্ক ? ''আমি তো জানতাম সাহির, তোমার কোনোদিনই আমার প্রতি প্রতিশ্রুতি রক্ষার কোনো দায় ছিল না । কি যেন বলে আজকাল ! ও হ্যাঁ , কমিটমেন্ট ফোবিয়া।  ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারবে কি না সেই দ্বিধাতেই তো রয়ে গেলে। কেন  যেন মনে হয় আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা  সেই গভীরতর  অতলান্ত  স্পর্শ করে নি কোনোদিন। ছুঁয়ে দেখেনি সেই ভালোবাসার তীব্র টানকে। আচ্ছা সত্যি করে বলো তো, তুমি কি সত্যি আমাকে ভালোবেসেছ  ? যতটা আমি তোমাকে বেসেছি।  "ম্যায়নে টুট  কে প্যায়ার কিয়া তুম সে / ক্যায়া  তুমনে ভী উতনা কিয়া মুঝ সে?'' অমৃতা প্রীতম এবং সাহির লুধিয়ানভি : Image Courtesy : Indian Express  ' ''মোহাব্বত কি পরখ  কা  ইয়েহি  তো রাস্তা  হ্যায় / তেরি  তালাশ মে নিকলু, তুঝে  না  পায়ু  ম্যায় '' । অমৃতা ভালোবাসা খুঁজেছেন, সেই আকুল করা ভালোবাসা,  হৃদয় তন্ত্রীতে সেই তীব্র ঝড় তোলা ভালোবাসা তাকেই তো খুঁজেছেন অমৃতা। পেয়েছেন কি ? খুঁজবো আমরা।  উপরের লাইনদুটি মজহা

এডগার অ্যালান পো সিরিজ ১ l Edgar Allan Poe Series

এডগার অ্যালান পো এর "দ্য মার্ডারস ইন দ্য রু মর্গ"- “The Murders in the Rue Morgue” গোয়েন্দা গল্পের প্রথম আত্মপ্রকাশ হল এবং যাত্রা শুরু হল গোয়েন্দা কাহিনীর।  এডগার অ্যালান পো: Image Courtesy : pixabay  ১৮৪১ সালের প্রথম দিক তখন, এডগার অ্যালান পো (Edgar Allan Poe) ফিলাডেলফিয়ার এক জনপ্রিয় প্রকাশনা গ্রাহামস ম্যাগাজিনের (Graham’s Magazine) সম্পাদক হিসাবে কাজ করছেন, পত্রিকায় একটি গল্প জমা দিয়েছিলেন, বহু খেটে গল্পটি লিখেছেন পো, যার নাম ছিল "মার্ডার্স ইন দ্য রু ট্রায়ানন " - “Murders in the Rue Trianon.” প্যারিসের রাস্তার পাশে একটি বাড়িতে একটি ভয়ঙ্কর জোড়া-খুনের ঘটনা ঘটেছে। বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী নিশ্চিত করেছেন যে বাড়ি থেকে একজনের কণ্ঠস্বর শোনা গেছে, তবে একজন বক্তা ঠিক কী ভাষা ব্যবহার করছেন সে বিষয়ে কেউ একমত হতে পারছে না। ভাষার ধাঁধায় গুলিয়ে যাচ্ছে গোটা ঘটনা। বেশ কিছু ক্লুও পাওয়া গেছে, কিন্তু সেগুলো প্রতিটি পরবর্তীটির চেয়ে আরও বিভ্রান্তিকর। প্রতিবেশীরা আতঙ্কিত। পুলিশ বিভ্রান্ত। কিন্তু সি. অগাস্ট ডুপিন (C. Auguste Dupin) একজন শেভালিয়ার (chevalier) এব

কাকে বলে স্ট্রিম অফ কনসাসনেস বা মগ্নচৈতন্য / What is Stream of Consciousness?

কাকে বলে স্ট্রিম অফ কনসাসনেস ? সাহিত্য ধারায় এটি এক রীতি, বলতে গেলে লেখনীর এক ধরণ। সাহিত্যের আলোচনায়  কিংবা সমালোচনায় 'স্ট্রিম অফ কনসাসনেস'- ‘Stream of Consciousness’  বা মগ্নচৈতন্য শুধুমাত্র এক শব্দ নয়, এ এক অনন্য, এক স্বতন্ত্র জঁর  ।  মগ্নচৈতন্যের   স্রোত সাহিত্যসৃষ্টির এক অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ন ধারা,  যা কিনা  বিংশ শতাব্দীর কিছু বিখ্যাত লেখক   নিযুক্ত এক স্বতন্ত্র লেখন রীতি। নিজেদের লেখনীতে কিছু ঘটনা পরম্পরাকে  বর্ণনা করতে ব্যবহার করেছিলেন তারা ।  কিন্তু '  মগ্নচৈতন্য '  কী?  কেনই বা  এটি একটি 'ধারা' বা ' জঁর' ?  কিছু  পরিচিতি দিলাম বটে শুরুতে কয়েকটি শব্দকে আশ্রয় করে, তবে  বিস্তারিত আলোচনা  এগোবে আস্তে আস্তে।  এই আপাত সাধারণ এবং একইসঙ্গে ব্যাপকভাবে ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা যুক্ত , সাহিত্যিক টার্মটির ধারণা  পরিষ্কার করতে সহায়তা করতে পারে হয়ত এই  আলোচনা ।   Image Courtesy: Steve Jhonson:pixels.com/free image প্রকৃতপক্ষে, ' মগ্নচৈতন্য  '   সাহিত্যের  জঁর  হিসাবে একেবারেই শুরু করেনি    তার  জীবন !  তবে ?   অবাক করা তথ্য এই  যে - সম্ভবতঃ এটি ছিল   এ