সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সিলভিয়া প্লাথ :এক অন্ধকার নিয়ে বেঁচে থাকার নাম / Sylvia Plath on Living with the Darkness












x

এক গভীরতর অন্ধকার নিয়ে বেঁচে থাকা আর হালকা আলোর সুড়ঙ্গে শিল্পের আবছায়া দেখতে থাকা, যদি মাথার মধ্যে সেই বারবার করে উত্তেজিত করে চলা অংশগুলিকে বন্ধ করতে পারি এবং চলে যেতে পারি সেই সময়কালকে পেরিয়ে, সাহসের সঙ্গে পেরিয়ে যেতে পারি সেই সময়কে, তখন মুখোমুখি হতে হবে এক গভীর দর্শনের।


সিলভিয়া প্লাথ :এক অন্ধকার নিয়ে বেঁচে থাকার নাম / Sylvia Plath on Living with the Darkness
সিলভিয়া প্লাথ : Image Courtesy : Wikimedia Common 



বাইশ বছর বয়সী সিলভিয়া প্লাথ (২৭ অক্টোবর, ১৯৩২ - ফেব্রুয়ারী ১১, ১৯৬৩) তার মাকে  লিখছেন, এক শীতের ওমে মোড়া জানুয়ারি মাস, লিখছেন সিলভিয়া, তারা উভয়েই এক অন্ধকারের মধ্যে বিরাজ করছেন, আত্মার শুদ্ধতার এক অপরিসীম অন্ধকার। অন্ধকার আরও তীক্ষ্ণতর হচ্ছে। প্রবেশ করছেন তারা সেই অন্ধকারে। তার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছেন তারা দুজনেই। যেন পৃথিবীর জন্ম হয়নি তখনও, যেন তার আগের এক সূক্ষ্ম আলোর সন্ধান করছেন তারা। যেন সূক্ষ্ম আলোর রেখার থেকে যাবার কথা ছিল।



বিজ্ঞান কেবলমাত্র সেই মাধ্যম,  যার টুল বা সরঞ্জামগুলির একে অপরের সাথে একত্রিত হতে  শুরু করেছিল আমাদের ইতিহাসের প্রেক্ষাপট তৈরী করবার জন্য।  যার সাহায্যে আমরা কী, আমরা কে, বা আমরা কিভাবে এসেছি পৃথিবীতে, কি ই বা আমরা আর কেনই বা আমরা তার মৌলিক রহস্যটি ছড়িয়ে দেওয়া শুরু করছিল: ডিসেকশন বা ব্যবচ্ছেদ হচ্ছিল আমাদের মৌলিক উপাদানগুলোর, মনোবিজ্ঞানই বা কোথায় তখন ? মনের বিজ্ঞানের কতটুকু খবর আমরা রাখি আমরা ?  আমরা আমাদের ব্যক্তি হিসাবে কী অভিজ্ঞতা লাভ করি, কীভাবেই বা তৈরী হচ্ছে আমাদের ব্যাক্তিত্ব - আমরা একে স্ব বা আত্মা বা সেলফ বলব নাকি স্পিরিট বলবো সেটা নিয়ে বিতর্কে মগ্ন ছিলাম - নাকি এটি একটি  আমাদের শারীরিক গঠনতন্ত্রের উৎপাদন প্রক্রিয়া যা আমাদের জৈবিক রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলির আধার, যে আমাদের পদার্থ হিসাবে, আমাদের দেহ হিসাবে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাকে বিশেষ অবকাঠামো মধ্যবর্তীতে তার ব্যাপ্তি ঘটাতে থাকে।  



স্নায়ুবিজ্ঞান তখন নেহাৎই তার যাত্রা শুরু করেছে - এবং হেলিক্সের বংশগতির সূত্র সবেমাত্র আবিষ্কার হয়েছে, প্রকৃতি বনাম পরিবেশের প্রভাব আমাদের মধ্যে কীভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে সেই বিষয়ে নতুন স্পষ্টতর এক  প্রতিশ্রুতির উত্থাপন করা হচ্ছে। বিজ্ঞানে নতুন সম্ভাবনা, নতুন ইঙ্গিত বহন করছে । প্রাচীন এক ধাঁধা আরো এক নতুনতর গোলকধাঁধায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে যেন। আমাদের মনোবিজ্ঞানের কতটা জৈবিক উত্তরাধিকার তার সম্পর্কে নতুন অন্তর্দৃষ্টি উন্মোচিত হচ্ছে, বারবার ভেসে আসছে biological inheritance এর প্রসঙ্গ, এবং  একটি কম্পোজিশনের মতো জীবনধারা কিংবা জীবন রচনাটি ক্রমাগত কতটা সম্ভাবনার দিকে যাচ্ছে এবং তা পছন্দের সংমিশ্রণ দ্বারা সংশোধিত হওয়াটাও একমাত্র প্রধান এবং মুখ্য বিষয় হতে চলেছে কিনা, তার মোটমাট বিষয় গুলিকে  আমরা অভিজ্ঞতাকে বলে ডাকতে শুরু করেছি কিনা তাও আলোচ্য হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে।


এই সব কিছুকে মাথায় রেখেই সিলভিয়া প্লাথের জীবনের এই টুকরোটা নিয়ে লিখব । বেশ কয়েক বছর আগে, কিশোরী প্লাথ তার conscious বা চেতনাকে কনট্যুর করা শুরু করেছেন এবং এর মনস্তাত্ত্বিক ঘাত গুলোকে বা বলতে গেলে psychological  promontories  ম্যাপিং করা শুরু করেছেন, তার আলোকিত পৃষ্ঠগুলি আর তার অন্ধকার প্রান্তকে চিহ্নিত করা শুরু করেছিল - এক অন্ধকার আধারের ধারাপত্রে লেখা আলোর গুল্মলতাআনন্দ সম্পর্কে এক অমোঘ জিজ্ঞাসা উদ্রেক করে, free will বা স্বাধীন ইচ্ছা সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তাভাবনার উদ্রেক করে, আমরা কে এবং আমরা কী? কোথায় আমাদের শুরু আর কোথায়ই বা শেষ?  একটি ছোটখাটো  দুর্ঘটনার জবাবে করুণ বিষন্ন  কবিতার সৃষ্টি, তার এই ঘনীভূত মনকে আরো সন্নিবিষ্ট করেছে, সৃষ্টি করেছে ছড়ানো ছেটানো ছদ্মবেশী মুহুর্তগুলি। “The Disquieting Muses” এক অতলান্ত অন্ধকারে পরিণত হওয়ার, ছায়া নেওয়ার আরও গভীর বিষাদ যা দু'বছর আগে তিনি মাকে চিঠিতে লিখে গেছিলেন,  সংগৃহীত চিঠিপত্রে রক্ষিত আছে যা :১৯৫০-১৯৬৩ (পাবলিক লাইব্রেরি) একটি চিঠিতে তার মাকে লিখেছেন: 


" I don’t know whether it is an hereditary characteristic, but our little family is altogether too prone to lie awake at nights hating ourselves for stupidities — technical or verbal or whatever — and to let careless, cruel remarks fester until they blossom in something like ulcer attacks — I know that during these last days I’ve been fighting an enormous battle with myself."


তবে তারপরে, চিন্তন এবং চেতনার অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে জীবনের বাকি বছরগুলি কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন সিলভিয়া - যে বছরগুলি সবচেয়ে বেশি নিরন্তর অত্যাশ্চর্য, গভীরতর এবং সর্বকালের সেরা লেখাতে ভরে উঠেছিল - তিনি নিজের কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে যোগ করেছেন:


''But beyond a point, fighting only wears one out and one has to shut off that nagging part of the mind and go on without it with bravo and philosophy… Your present life is the important thing.''


 একটি বিপজ্জনক অবজ্ঞান রয়েছে - একটি জৈবিক মিথ্যাচার, সহানুভূতির নরম ক্ষত, আড়ালে রাখা দুর্বলতা, একটি নৈতিক ব্যর্থতা - এই দৃষ্টিভঙ্গিই কি ছিল সিলভিয়ার? মানসিক অসুস্থতা নিয়ে বেঁচে থাকার পরে আত্মহত্যা করা, জীবন কি বলবে একে? কোনওরকম ব্যর্থতার দায়ী হতে চায় কি ? নাকি ব্যর্থতার খাদ ঘেঁষে চলে যেতে চায় নিজের ভিতরে ? সেই ক্ষতির ট্র্যাজেডিকে গভীরভাবে অনুভব করা, আর তাদের নিজস্ব স্ট্রাগলের সময় তাদের জন্য যে সহায়তা উপযুক্তরূপে পাওয়া যায় না, তা অনুভব করা এক বিষয়।  এক চেতনার জগতে যদি আলো ফেলি তাহলে কি সত্যিই অন্য কোনও মানুষের অভ্যন্তরীণ স্থানে আসলে কি চলতে থাকে তার তল পাওয়া সম্ভব ? তার জায়গার নিজেকে  দেখতে হয়,  তা যে আসলে কেমন তা জানা যায় না বোধ হয়, এক  জন্মের  পক্ষে তা অসম্ভব - আমরা এই দেহ-মনে বেঁচে থাকার মতো একে অপরকে জড়িয়ে মরিয়ে থাকি, দেখানোর চেষ্টা ছেঁচে সুখ বার করব।  শিল্প ও কবিতা, গান তৈরী হতে থাকে তাদের নিজেদের মতো করেই।   


,

হতাশার নিরাময়ের জন্য মে সার্টনের (May Sarton) সাথে পরিপূরক এবং লরেন হ্যানসবেরি ( Lorraine Hansberry) - প্লাথের প্রজন্মের আরেক স্বপ্নদর্শী শিল্পী, যিনি আরও বেশি অন্ধকারের গভীরতায় তল খুঁজতে চেয়েছিলেন এবং তৈরি করতে চেয়েছিলেন - ডিপ্রেশনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রতিষেধক বা antidote।


প্লাথের অত্যাশ্চর্য “Morning Song” এবং  তাঁর স্বল্প-পরিচিত চিত্রগুলির মাধ্যমে কবির অভ্যন্তরীণ জগতের বিরল এক ঝলক খুঁজে নিতে শুরু করেছি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

এডগার অ্যালান পো সিরিজ ১ l Edgar Allan Poe Series

এডগার অ্যালান পো এর "দ্য মার্ডারস ইন দ্য রু মর্গ"- “The Murders in the Rue Morgue” গোয়েন্দা গল্পের প্রথম আত্মপ্রকাশ হল এবং যাত্রা শুরু হল গোয়েন্দা কাহিনীর।  এডগার অ্যালান পো: Image Courtesy : pixabay  ১৮৪১ সালের প্রথম দিক তখন, এডগার অ্যালান পো (Edgar Allan Poe) ফিলাডেলফিয়ার এক জনপ্রিয় প্রকাশনা গ্রাহামস ম্যাগাজিনের (Graham’s Magazine) সম্পাদক হিসাবে কাজ করছেন, পত্রিকায় একটি গল্প জমা দিয়েছিলেন, বহু খেটে গল্পটি লিখেছেন পো, যার নাম ছিল "মার্ডার্স ইন দ্য রু ট্রায়ানন " - “Murders in the Rue Trianon.” প্যারিসের রাস্তার পাশে একটি বাড়িতে একটি ভয়ঙ্কর জোড়া-খুনের ঘটনা ঘটেছে। বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী নিশ্চিত করেছেন যে বাড়ি থেকে একজনের কণ্ঠস্বর শোনা গেছে, তবে একজন বক্তা ঠিক কী ভাষা ব্যবহার করছেন সে বিষয়ে কেউ একমত হতে পারছে না। ভাষার ধাঁধায় গুলিয়ে যাচ্ছে গোটা ঘটনা। বেশ কিছু ক্লুও পাওয়া গেছে, কিন্তু সেগুলো প্রতিটি পরবর্তীটির চেয়ে আরও বিভ্রান্তিকর। প্রতিবেশীরা আতঙ্কিত। পুলিশ বিভ্রান্ত। কিন্তু সি. অগাস্ট ডুপিন (C. Auguste Dupin) একজন শেভালিয়ার (chevalier) এব

বাংলা অণুগল্প- অনুগল্প সিরিজ /Bengali Story

অসীম আর মাধবীলতা অসীম.....এই যে এই দিকে, মাধবীলতা আবার ডাক দিলো,....... হ্যাঁ একদম ঠিক যাচ্ছ,......আমার হাতটা লক্ষ্য করে আস্তে আস্তে এগিয়ে এস, না না ওদিকে নয়.......ওদিকে কাঁটার ঝোপ......গায়ে ফুটে গেলে কেলেঙ্কারির একশেষ.....মাধবীলতা আর ভরসা রাখতে পারলো না, নিজেই এগিয়ে গিয়ে অসীমের হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে হাঁটতে লাগলো। অসীমের জামাকাপড় ভিজে জবজব করছে। একজায়গায় থামলো তারা, বেশ নির্জন, একটা বাড়ির ভিতরে ঢুকে এল। একটু পুরোনো বাড়ি কিন্তু বসবাসের যোগ্য। মাথাটা মুছে নাও, বেশ ভিজেছ, ঠান্ডা ব'সে গেলে জ্বর আসতে পারে....মাধবীলতা হাতের মুঠো ছেড়ে দিয়ে একটা গামছা এগিয়ে দিল। .অসীম গামছাটা নিয়ে সামনে খোলা জানালার বাইরের পুকুরটার দিকে তাকিয়ে রইল একদৃষ্টে। মাধবীলতার শাড়ির আঁচলের একটা অংশ একটু দেখা যাচ্ছে। ওদিকটায় বোধহয় কাঁটাঝোপ ছিল. কালকের মধ্যে দুটো লাশ ই ভেসে উঠবে আশা করা যায় । -------------------------------------------- ছ'য়ে ছটাক : অনুগল্প ১. জানালাটার গ্রিলের মধ্যে দিয়ে নিজের চার হাত পা বের করে দিল সে, এবার শেকল দিয়ে বাঁধার কাজ শুরু হবে। ২.আমার পেনের কালিটা ধীরে ধীরে শেষ

একটি প্রেমের গল্প : অমৃতা প্রীতম এবং সাহির লুধিয়ানভি / The love story of Amrita Pritam and Sahir Ludhianvi

প্রেমের গল্প। প্রেম ভাঙার গল্প। পাত্র-পাত্রী সাহির লুধিয়ানভি এবং অমৃতা প্রীতম। দিকপাল দুই সাহিত্যিক। কেমন ছিল সেই সম্পর্ক ? ''আমি তো জানতাম সাহির, তোমার কোনোদিনই আমার প্রতি প্রতিশ্রুতি রক্ষার কোনো দায় ছিল না । কি যেন বলে আজকাল ! ও হ্যাঁ , কমিটমেন্ট ফোবিয়া।  ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি রাখতে পারবে কি না সেই দ্বিধাতেই তো রয়ে গেলে। কেন  যেন মনে হয় আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা  সেই গভীরতর  অতলান্ত  স্পর্শ করে নি কোনোদিন। ছুঁয়ে দেখেনি সেই ভালোবাসার তীব্র টানকে। আচ্ছা সত্যি করে বলো তো, তুমি কি সত্যি আমাকে ভালোবেসেছ  ? যতটা আমি তোমাকে বেসেছি।  "ম্যায়নে টুট  কে প্যায়ার কিয়া তুম সে / ক্যায়া  তুমনে ভী উতনা কিয়া মুঝ সে?'' অমৃতা প্রীতম এবং সাহির লুধিয়ানভি : Image Courtesy : Indian Express  ' ''মোহাব্বত কি পরখ  কা  ইয়েহি  তো রাস্তা  হ্যায় / তেরি  তালাশ মে নিকলু, তুঝে  না  পায়ু  ম্যায় '' । অমৃতা ভালোবাসা খুঁজেছেন, সেই আকুল করা ভালোবাসা,  হৃদয় তন্ত্রীতে সেই তীব্র ঝড় তোলা ভালোবাসা তাকেই তো খুঁজেছেন অমৃতা। পেয়েছেন কি ? খুঁজবো আমরা।  উপরের লাইনদুটি মজহা