ভিয়েতনামের যুদ্ধ। কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে একটা যুদ্ধ। যারা কোনোদিন দেখিনি তারা এর প্রভাব ঠিক বুঝতেও পারবো না। প্রার্থনা করি যেন দেখতেও না হয়। ভিয়েতনামের যুদ্ধের কিছু ছবি নিয়ে আজ এই লেখা। সঙ্গের যুদ্ধের ছবি।
আজকে দেখবো কিছু ছবি। না যা ভাবছেন একদম নয়, সুন্দর কিছু দেখতে বসিনি আজকে। যুদ্ধের ছবি দেখাবো। দুটো রাষ্ট্র লড়াই করছে , আর মাঝখান থেকে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষ ভগবানের ভরসায় নিজেদের জীবনের বাজি ধরে বসে আছে। অনেক গপ্প পাবেন মশাই যুদ্ধের। ওই বিষয় তো এক। পুঁজিবাদী শক্তির সারা পৃথিবীতে নিজের ক্ষমতা কায়েম করার গল্প। আর বেশি কথায় যাচ্ছি না। আজকের ছবি আর লেখা ভিয়েতনাম যুদ্ধের। তাহলে ঢুকে পড়া যাক যুদ্ধের খবরে।
ভিয়েতনামের যুদ্ধ হয় দক্ষিণ ভিয়েতনাম আর উত্তর ভিয়েতনামের মধ্যে, ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত। তারপরে যুক্ত হয় আমেরিকা, যথারীতি। মূল কারণ সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার। উত্তর ভিয়েতনাম কমিউনিজম প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী , কিন্তু পুঁজিবাদী দক্ষিণ ভিয়েতনাম। শুরু হয় সাথে গৃহযুদ্ধ। দক্ষিণ ভিয়েতনামকে সমর্থন করতে নেমে পরে আমেরিকা।
এবারেই যুদ্ধের চেহারা ভয়াবহ রূপ নিতে শুরু করে । ১৯৬৫ সালে আমেরিকা দক্ষিণ ভিয়েতনামের জন্য সৈন্য পাঠায়। কিন্তু তাতে লাভ হয় না কোনো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সাম্রাজ্যবাদের কামড় দিতে সমর্থ হয় না শেষপর্যন্ত । কুড়ি বছরের যুদ্ধের শেষে ১৯৭৫ সালে দুই ভিয়েতনাম এক হয়ে যায় ।
ভিয়েতনাম যুদ্ধে প্রচুর ছবি আছে। আজকে আমরা ছবিতে শুধু ছবিতে দেখবো যুদ্ধ কে। প্রার্থনা করি এমন সংকট যেন কোনোদিন কারো জীবনে না আসে। ছবিতে দেখুন আর কল্পনা করুন এর ভয়াবহতা।
১. ভিয়েতনামের সবচেয়ে বড় শহর সায়গন। ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ ভিয়েতনামের রাজধানী ছিলো এই সায়গন । যুদ্ধশেষে , ভিয়েতকং গেরিলাদের বদ্যতায় এই শহরকে ভিয়েতনাম কমিউনিস্ট পার্টির নেতা হো চি মিন-এর নামে নামকরণ করা হয় । যুদ্ধে আমেরিকান সেনারা ভিয়েতনামে ২,০০০ থেকে ১৬,০০০ সৈন্য এবং সামরিক উপদেষ্টাদের ওপর নির্বিচারে বন্দুক চালিয়েছিল । ছবিটি সেই যুদ্ধবিধ্বস্ত সায়গন শহরের। যে শহরে একদিন ছিল মানুষের বাস। তাদের প্রতিদিনকার দিনগুলি হারিয়ে গেছে এই যুদ্ধের ভয়ঙ্কর অভিশাপে ।
২. ১৯৬৭ সালে, ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার আগাসন তখন তুঙ্গে - কিন্তু সবাই এই যুদ্ধকে সমর্থন করেনি, যুদ্ধবিরোধী মানুষেরা রুখে দাঁড়িয়েছিল । এই ছবিটিতে প্রায় এক লক্ষ প্রতিবাদী মানুষ ওয়াশিংটন ডিসির হোয়াইট হাউজের সামনে জমায়েত হয়। দাবি যুদ্ধবিরতির । অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিও যুদ্ধবিরতির দাবি তুলেছিলেন। সমবেত হন তারা । ছিলেন বক্সার মোহাম্মদ আলি, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ড. বেঞ্জামিন স্পক, ভিয়েতনামের ভবিষ্যত সিনেটর এবং রাষ্ট্রপতি প্রার্থী জন কেরিও ছিলেন সেই তালিকায় । জনগণের এহেন প্রবল বিরোধিতার সম্মুখীন হয়ে ১৯৭৩ সালের আগস্ট মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন বাধ্য হয়ে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন।
৩. আমেরিকার ৫৮,২০০ সৈনিক নিহত হয় এই যুদ্ধে ; ১৬,০৯০ জন নিখোঁজ, ৩,০৩,৬৩০ সৈনিক আহত হয়েছিলো। অন্যদিকে, ভিয়েতনামিদের জীবনের ক্ষতি কিছু কম হয় নি, রক্তাক্ত হয়েছে দেশের মাটি, রক্তাক্ত হয়েছে মানুষের জীবন, রণক্ষেত্রে প্রায় ২০,০০,০০০ লক্ষ ভিয়েতনামের সাধারণ মানুষ সহ প্রায় ৪০,০০,০০০ লক্ষ সৈনিক শহীদ হয় টানা ২০ বছরের যুদ্ধে।
![]() |
Image Courtesy : Wikimedia Commons |
৪. ভিয়েতনাম যুদ্ধ হয়েছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রেইনফরেস্টে । একদম অন্যরকম পরিবেশ, একদম অচেনা পরিবেশ মার্কিন সেনাদলের কাছে। তাই জঙ্গলের পথে নিজেদের চলাচলের জন্য রাস্তা বানানোর চেষ্টা চলেছে ।
![]() |
Image Courtesy : Pinterest |
৫. ভিয়েতনাম যুদ্ধে ৩,৯১,০০০ মার্কিন মেরিনার যোগ দেয় । এর মধ্যে প্রায় ১৫,০০০ সৈন্য মারা যায়। জঙ্গলের অপরিচিত পরিবেশ, বিভিন্ন রকম রোগের প্রাদুর্ভাব সমস্যা তৈরি করতে শুরু করেছিল । অবস্থা বেগতিকে প্রায় ১১,০০০ সৈন্য জঙ্গলেই মারা যায় ।
![]() |
Image Courtesy : BBC |
৬. দক্ষিণ ভিয়েতনামের সাইগনে ভিয়েতকংদের যুদ্ধবন্দী করা হয়। সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র কেড়ে নেওয়া হয় তাদের কাছ থেকে । এই ছবিটিতে যুদ্ধবন্দীরা বসে আছে তাদের অস্ত্রের সামনে। আত্মসমর্পন ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না যে। এই ঘটনা ১৯৬৮ সালের।
৭. যুদ্ধের সময়ে কমিউনিস্ট বাহিনী ভিয়েতনামের পূর্ব রাজধানী হিউকে পরাস্ত করেছিল। দক্ষিণ ভিয়েতনামের উত্তরের অংশে অবস্থিত, যুদ্ধে প্রথম দখলকৃত শহরগুলির মধ্যে হিউ ছিল অন্যতম। সবথেকে শেষে এই স্বাধীন অংশ অধিগ্রহণ করা হয়। এই ছবিতে দেখছি মানুষজন শহরে ফিরে আসছে। ফেলে রাখা বাড়িঘর, রেখে যাওয়া সংসারে আবার তার পুরোনো মানুষেরা আস্তে শুরু করেছে। যুদ্ধের সময় হিউয়ের বাড়িঘর সহ বাকি শহর ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল।
![]() |
Image Courtesy : Wikimedia Commons |
৮. এই নারীকে সম্ভবত ভিয়েতকং বা উত্তর ভিয়েতনামের সহযোগী বলে সন্দেহ করা হয়েছিলো। ভিয়েতকংরা গেরিলা যোদ্ধা ছিল। এরা আলাদা কোনো স্থানে বসবাস করত না। এরা সবসমই সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে কিংবা কোনো আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে থাকত। ফলত বিরোধী শক্তির পক্ষে এদের আলাদা করা কঠিন হয়ে পরত।সহযোগিতার অভিযোগে প্রচুর সাধারণ মানুষকে আটক এবং নির্যাতন করা হত। কখনও কখনও মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হত।
১৪. ১৯৭২ সালে এই ছবি তোলা হয়েছিল। দক্ষিণ ভিয়েতনামের একটি গ্রাম। দূরে দেখা যাচ্ছে কুখ্যাত নাপাম বোমার ধোঁয়া। যন্ত্রণায় চিৎকার করতে করতে দৌড়চ্ছে নয় বছরের একটি মেয়ে। তার সঙ্গে প্রাণ বাঁচাতে পালাচ্ছে আরো কিছু বাচ্চা। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের এক চিত্রসাংবাদিকের তোলা এই ছবি সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়ে গেছিল, বিব্রত হয়েছিলেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনও। ভিয়েতনাম জুড়ে তখন ‘নাপাম বোমা’ আর কুখ্যাত রাসায়নিক বিষ ‘এজেন্ট অরেঞ্জ’ ঢালছে মার্কিন সেনারা। গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে রওনা দিচ্ছিল মানুষেরা। বোমারু বিমান রেহাই দেয়নি তাদেরও । ওপর থেকে ফেলতে থাকে নাপাম বোমা এবং সেই বোমায় জ্বলে যায় বাচ্চাটির দেহের একটা অংশ। “জ্বলে যাচ্ছে! জ্বলে যাচ্ছে!” এই চিৎকার করতে করতেই দৌড়তে থাকে মেয়েটি । সেই মুহূর্তেই লেন্সবন্দী করেছিলেন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের চিত্রসাংবাদিক নিক উট।
![]() |
Image Courtesy : Wikimedia Commons |
৯. এনগো দিনহ দিয়েম ছিলেন দক্ষিণ ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট। ১৯৫৪ সালে ফরাসি ঔপনিবেশিক থেকে মুক্ত হওয়ার পর, ডিয়েম ভিয়েতনাম প্রেসিডেন্ট পদ লাভ করেন।ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত কাছের মিত্র। ১৯৫৭ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে যান। ছবিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডুইট ডি আইজেনহওয়ার, দিয়েমকে স্বাগত জানাচ্ছেন। মিত্রতার হাত।
১০. ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার ভূমিকা ছিল এটা সবাই জানি। ৩,০০,০০০ এরও বেশি আমেরিকান সেনা আহত হয়েছিল। আহত হয়েছিল ১০,০০,০০০ দক্ষিণ ভিয়েতনামি এবং ৬,০০,০০০ উত্তর ভিয়েতনামি সেনা।
১১. যুদ্ধে, মার্কিন বিমানবাহিনী ১ম লেফটেন্যান্ট জেরাল্ড সান্টো ভেনানজি উত্তর ভিয়েতনামি এক মহিলা- সৈনিকের দ্বারা বন্দী হয় । এটা সেই বন্দী হবার দৃশ্য, যা ধরা পড়েছে ক্যামেরায় । ১৯৭৩ সালে যখন প্যারিস পিস অ্যাকর্ডে সম্মতি জানানো হয়, উত্তর ভিয়েতনামিরা ৫৯১ আমেরিকান যুদ্ধবন্দীকে মার্কিন - হাতে ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু আরও ১,৩৫০ যুদ্ধবন্দীকে কোনোদিনই ফেরত পাঠানো হয়নি। প্রায় ১,২০০ আমেরিকানের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল কিন্তু তাদের মরদেহ চিরকালের মতো হারিয়ে গিয়েছিল। নিখোঁজ সেনারা বেশিরভাগই লেফটেন্যান্ট ভেনানজির মতো পাইলট ছিল। তারা উত্তর ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া বা লাওসে ভিয়েতনামিদের গুলিতে নিহত হয় কিংবা কমিউনিস্ট বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে।
![]() |
Image Courtesy : Wikimedia Commons |
১০. ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার ভূমিকা ছিল এটা সবাই জানি। ৩,০০,০০০ এরও বেশি আমেরিকান সেনা আহত হয়েছিল। আহত হয়েছিল ১০,০০,০০০ দক্ষিণ ভিয়েতনামি এবং ৬,০০,০০০ উত্তর ভিয়েতনামি সেনা।
![]() |
Image Courtesy : Wikimedia Commons |
১১. যুদ্ধে, মার্কিন বিমানবাহিনী ১ম লেফটেন্যান্ট জেরাল্ড সান্টো ভেনানজি উত্তর ভিয়েতনামি এক মহিলা- সৈনিকের দ্বারা বন্দী হয় । এটা সেই বন্দী হবার দৃশ্য, যা ধরা পড়েছে ক্যামেরায় । ১৯৭৩ সালে যখন প্যারিস পিস অ্যাকর্ডে সম্মতি জানানো হয়, উত্তর ভিয়েতনামিরা ৫৯১ আমেরিকান যুদ্ধবন্দীকে মার্কিন - হাতে ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু আরও ১,৩৫০ যুদ্ধবন্দীকে কোনোদিনই ফেরত পাঠানো হয়নি। প্রায় ১,২০০ আমেরিকানের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল কিন্তু তাদের মরদেহ চিরকালের মতো হারিয়ে গিয়েছিল। নিখোঁজ সেনারা বেশিরভাগই লেফটেন্যান্ট ভেনানজির মতো পাইলট ছিল। তারা উত্তর ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া বা লাওসে ভিয়েতনামিদের গুলিতে নিহত হয় কিংবা কমিউনিস্ট বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে।
![]() |
Image Courtesy : Wikimedia Commons |
১২. ঐতিহ্যবাহী ভিয়েতনামি কনফুসিয়ান সংস্কৃতি মতে, নারীরা দুর্বল এবং বিশ্বাসঘাতক উভয়ই ! বিবেচনা করা হতো, নারীরা কখনোই উপযুক্ত সৈনিক হতে পারবে না। এই বিশ্বাস পুরানো ভিয়েতনামি ঐতিহ্যের উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, আদতে, ভিয়েতনামের ট্রুং সিস্টার্সের মতো নারী যোদ্ধারা ছিলেন সম্মানিত । চীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নারীরা সেনাবাহিনীতে এক গুরুত্ত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছিল অতীতে, নেতৃত্ব দিয়েছিল তারা। কমিউনিজমের অন্যতম ধারণা হলো- শ্রমিক শ্রমিকই। এখানে লিঙ্গের কোনো ভূমিকা থাকতে পারে না। উত্তর ভিয়েতনাম এবং ভিয়েতকং, উভয়েরই সেনাবাহিনীত নুগুইন থি হাইয়ের মতো নারীরা মূল ভূমিকা পালন করেছিল।
![]() |
Image Courtesy : Wikimedia Commons |
১৩. ১৯৭০ সালের এই ছবিতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর প্রথম লেফটেন্যান্ট এল. হিউজকে দেখা যাচ্ছে। হিউজ যুদ্ধবন্দী। আমেরিকান যুদ্ধবন্দীদের প্রায়শই উত্তর ভিয়েতনামিরা গুলি করে হত্যা করা হতো। তার আগে পরে শহরের রাস্তায় প্যারেড করে নিয়ে যাওয়া হতো।
![]() |
Image Courtesy : BBC |
১৪. ১৯৭২ সালে এই ছবি তোলা হয়েছিল। দক্ষিণ ভিয়েতনামের একটি গ্রাম। দূরে দেখা যাচ্ছে কুখ্যাত নাপাম বোমার ধোঁয়া। যন্ত্রণায় চিৎকার করতে করতে দৌড়চ্ছে নয় বছরের একটি মেয়ে। তার সঙ্গে প্রাণ বাঁচাতে পালাচ্ছে আরো কিছু বাচ্চা। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের এক চিত্রসাংবাদিকের তোলা এই ছবি সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়ে গেছিল, বিব্রত হয়েছিলেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনও। ভিয়েতনাম জুড়ে তখন ‘নাপাম বোমা’ আর কুখ্যাত রাসায়নিক বিষ ‘এজেন্ট অরেঞ্জ’ ঢালছে মার্কিন সেনারা। গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে রওনা দিচ্ছিল মানুষেরা। বোমারু বিমান রেহাই দেয়নি তাদেরও । ওপর থেকে ফেলতে থাকে নাপাম বোমা এবং সেই বোমায় জ্বলে যায় বাচ্চাটির দেহের একটা অংশ। “জ্বলে যাচ্ছে! জ্বলে যাচ্ছে!” এই চিৎকার করতে করতেই দৌড়তে থাকে মেয়েটি । সেই মুহূর্তেই লেন্সবন্দী করেছিলেন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের চিত্রসাংবাদিক নিক উট।
![]() |
Image Courtesy : BBC |
১৫. ছবির ফ্রেমে বাঁদিকে দাঁড়িয়ে এক সৈন্য। তার হাতে পিস্তল। ডানপাশের মানুষটির পিস্তলের নিশানায় দাঁড়িয়ে। একটু পরে বুলেট ঢুকে যাবে তার মাথার মধ্যে। বিশ্বকে নাড়া দেওয়া ভিয়েতনাম যুদ্ধের এই ছবিটির নাম ‘সায়গন এক্সিকিউশন’। ১৯৬৮ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি সায়গনের রাস্তায় ছবিটি তোলা হয়। ছবিতে যাকে গুলি করতে দেখা যাচ্ছে, সে হল দক্ষিণ ভিয়েতনামের সামরিক গোয়েন্দা প্রধান বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নুয়েন নক লোয়ান। আর যে বন্দুকের নিশানায় আছে সে হ'ল ভিয়েতকং গেরিলা গ্রুপের নেতা নুয়েন ভ্যান লেম। ভিয়েতনাম যুদ্ধের নিষ্ঠুরতা এবং নৈরাজ্য প্রকট।
![]() |
Image Courtesy : Pinterest.com |
১৬. দীর্ঘমেয়াদী রক্তাক্ষয়ী এই যুদ্ধে আমেরিকানরা রাসায়নিক অস্ত্র- এজেন্ট অরেঞ্জ ব্যবহার করেছিলো। উত্তর ভিয়েতনামিদের ক্যাম্প, সৈন্য এবং তাদের কর্মকাণ্ডকে স্পষ্ট ভাবে প্রত্যক্ষ করতে মার্কিনরা বন-জঙ্গলে ঘেরা ভিয়েতনামকে জঙ্গল-শূন্য করতে উদ্যত হয়। আর সেটা করে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে। দক্ষিণ ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট গেরিলাদের জব্দ করতে গোটা ভিয়েতনাম জুড়ে গ্যালন গ্যালন রাসায়নিক পদার্থ ঢালতে শুরু করে মার্কিন সেনা। দশ বছর ধরে ভিয়েতনামে ঢালা হয়েছিল কুখ্যাত ‘এজেন্ট অরেঞ্জ’। সবমিলিয়ে মোট সাড়ে চার কোটি লিটার ‘এজেন্ট অরেঞ্জ’ ঢালা হয়েছিল । নিষ্ঠুরতার এক চিহ্ন। এই রাসায়নিক অস্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে গিয়েছিল এবং বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম নিতে শুরু করে ।
![]() |
Image Courtesy : Pinterest |
১৭. ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়, দক্ষিণ ভিয়েতনামি এবং ভিয়েতকং গেরিলারা দেশব্যাপী একাধিক সুড়ঙ্গ ব্যবহার করেছিল। সৈনিকদের যাতায়াতের জন্য এবং যুদ্ধসামগ্রী পাচার করার জন্য এই সুড়ঙ্গ। ছবিতে স্টাফ সার্জেন্ট মেলভিন গেইনস মূসা গ্রিনের হাতে জল ঢালছে, যখন মুসা একটি সুড়ঙ্গের সন্ধান করে ফেরত এসেছে। গেইনস ১৭৩ এয়ারবোন বিভাগের সদস্য ছিল। আজ, সুড়ঙ্গপথগুলি ভিয়েতনামের পর্যটকদের কাছে একটি অন্যতম আকর্ষণ।
যুদ্ধের ছবি তোলা সাংঘাতিক ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ একটা ব্যাপার। সাংবাদিকরা যুদ্ধের ছবি তুলতে গিয়ে নিহত হয়েছে কিংবা ভীষণ রকমের আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে অসংখ্য প্রতিবেদন তার সাক্ষী। যুদ্ধের ময়দান কাউকে ছেড়ে দেয় না। চিত্রসাংবাদিকরাও প্রাণ হাতে করে যুদ্ধের ছবি তোলে। নিজের সমস্ত মন কে একাগ্র করে অপেক্ষা করে সেই মুহূর্তের যে মুহূর্তের একটি দৃশ্য তাকে অমর করে দেবে। পৃথিবীর একাংশে হয়ে যাওয়া ত্রাস, সংগ্রাম, বীভৎসতার চিহ্ন অপর প্রান্তের বিশ্বকে জানিয়ে দিয়ে যায় ছবিগুলি।
ভিয়েতনাম যুদ্ধ আমরা অধিকাংশই প্রত্যক্ষ করিনি। বিভিন্ন লেখায় আর ছবিতে উঠে এসেছে এর ভয়ংকর রূপ। ছবিগুলোর মাধ্যমেই ঘটনার ভয়াবহতা, কল্পনা এবং বাস্তব রূপে একসাথে ধরা দেয়। ছবিগুলো বিশ্বাস করে , আসলে এমনটাই ঘটেছিলো তাহলে! নাপাম গার্ল, সায়গন এক্সিকিউশন অথবা এজেন্ট অরেঞ্জ। হাজারো অকুতোভয় চিত্রসাংবাদিকের তোলা ভিয়েতনাম যুদ্ধের কিছু ভয়ংকর ছবি, সেলাম তাদের ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন