হেলেন জুয়েট হত্যাকাণ্ড/ Helen Jewett Murder Case
১৮৩৬ সালের ১০ এপ্রিল। অনেকক্ষন থেকেই ঠকঠক করছে রোজিনা- রোজিনা টনসেন্ড, এই কিন্তু দরজা খোলার নাম নেই, হ'লটা কি? মনের মধ্যে হাজার এক খানা প্রশ্ন, একবার একটু জোরে ধাক্কা দিল রোজিনা, আরে দরজাতো খোলাই আছে! কিন্তু এই রাত তিনটের সময় দরজা এভাবে খোলাই বা রাখা আছে কেন? আস্তে আস্তে রোজিনা ঘরে ঢুকে এলো, উফঃ এত ধোঁয়া কোথা থেকে এলো? ঘরটা পুরো ধোঁয়ায় ভরে গেছে, চোখ মুখ জ্বলছে তার, আস্তে আস্তে চোখ রগড়ে সামনে তাকাতে চেষ্টা করলো রোজিনা। কিন্তু জুয়েট গেলো কোথায়? এত রাতে বাইরে বেরোলো নাকি? আরো একটু সামনে এগিয়ে গেলো রোজিনা, কেউ একজন পরে আছে- একি , একি দেখছে সে! জুয়েট পরে আছে কেন এভাবে? রোজিনা আঁতকে উঠল। সত্যই জুয়েট পরে আছে, মাথার কাছে চাপ চাপ রক্ত জমাট বেঁধে আছে। জুয়েট কি নেই?
উনিশ শতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া এক হত্যাকাণ্ড -হেলেন জুয়েট হত্যাকান্ড।
১৮৩৬ সালে নিউ ইয়র্ক শহরে হেলেন জুয়েট নামের একজন নারী যৌনকর্মী নৃশংসভাবে খুন হয় । জুয়েটের মৃতদেহ তার ঘরেই তার বিছানায় পাওয়া গিয়েছিল। মাথায় ছিল ধারালো অস্ত্রের জখম এবং তিনটি জখমই ছিল বেশ গভীর। কোনো ধ্স্তাধস্তির চিহ্ন ছিল না। খুন করার পরে ঘরটিতে আগুন লাগানোর চেষ্টা করেছিল খুনি । হত্যাকারী হিসেবে সন্দেহভাজনের তালিকার প্রথমদিকে উঠে আসে তার অন্যতম খদ্দের রিচার্ড রবিনসনের নাম । তখনকার খবরের কাগজগুলো এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠেছিল, প্রতিদিনই কোনো না কোনো মুখরোচক খবর উঠে আসতো। হেলেন জুয়েট ও রিচার্ড রবিনসন এর সম্পর্কের চুলচেরা বিশ্লেষণ ও পরিণতিই সংবাদপত্রগুলির একমাত্র মনোযোগের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায় এবং এই কাজে নিউইয়র্ক হেরাল্ড পত্রিকা ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম।
হেলেন জুয়েটের প্রতিকৃতি; Image Courtesy : nypost.com |
হেলেন জুয়েটের নিহত হওয়ার দৃশ্য; Image Courtesy thoughtco.com |
ওই পতিতাপল্লীর এক মহিলার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ১৯ বছর বয়স্ক রিচার্ড রবিনসনকে গ্রেফতার করা হয় । কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের সময় এই খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করল রিচার্ড। পতিতালয়ের আরো কয়েকজনেই সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মামলা আদালতে উঠলো। ২ জুন শুরু হলো বিচার। সাক্ষীদের বড় অংশই ছিল হেলেন জুয়েটের মতোই পতিতালয়ের বাসিন্দা। তাই আদালত তাদের সাক্ষ্যকে নির্ভরযোগ্য মনে করলেন না। অতএব রিচার্ড রবিনসন সমস্ত জুরিদের সিদ্ধান্তে নির্দোষ সাব্যস্ত হল। প্রসঙ্গক্রমে রিচার্ড রবিনসনের কথা এখানে একটু বলে নিলে ভালো হয়। ১৮১৮ সালে জন্ম নেওয়া এই রিচার্ড কাজের সন্ধানে নিউইয়র্কে এসে চাকরি নেয় ম্যানহাটনের এক বড় দোকানে। তখন তার বয়স বেশি নয়। ‘ফ্রাঙ্ক রিভার্স’ নাম নিয়ে সে পতিতালয়ে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেছিল । এক তথ্য অনুসারে, ১৭ বছর বয়সে ম্যানহাটন থিয়েটারের বাইরে এক স্থানীয় গুণ্ডার সাথে মারপিট করার পর, আহত অবস্থায় হেলেন জুয়েটের ঘরে ঢুকে পরে রিচার্ড। হেলেন জুয়েট মুগ্ধ হয় রিচার্ডের প্রতি, হয়ে পরে অনুরক্তও।
তাদের সম্পর্ক শুরু হয়। কিন্তু আস্তে আস্তে তাদের সম্পর্কে জটিলতা আসতে শুরু করে, রিচার্ড হেলেনের কাছে গেছিল শরীরের প্রয়োজনে, মনের প্রয়োজন সেখানে ছিল না। কিন্তু হেলেন চেয়েছিল বাক্য ছোট্ট সংসার, তার আর রিচার্ডের সংসার। সম্পর্কের ফাটল ধরা শুরু ঠিক এখন থেকেই। প্রায়শই অশান্তি হতে থাকে তাদের মধ্যে। হেলেন আস্তে আস্তে বুঝতে পারে এই সম্পর্কের কোনো পরিণতি নেই! ১৮৩০ সাল, হেলেন এতদিনে বুঝে গেছিলো তাদের সম্পর্কের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। কিন্তু তাও সম্পর্ক পুরোপুরি ভাঙলো না। হেলেনের ভালো লাগতো না আর নিত্য নতুন লোকের কাছের যেতে, সে এবার একটা সংসার চাইছিল, কিন্তু কিছু করার ছিল না। নিজের পেশা আর পরিস্থিতির সঙ্গে জোর করে আবার মানিয়ে নেওয়া ছাড়া আর কোনো রাস্তা খোলা ছিল না হেলেনের কাছে। তখনও কিন্তু রিচার্ড আর হেলেনের সম্পর্ক একেবারে মুছে যায় নি। ১৮৩৫ সালে তাদের সম্পর্ক পুরোপুরি ভেঙে গেল।
১৮৩৬ এর দিকে রিচার্ড রবিনসনের বিয়ের গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। কিন্তু সেটা গল্প নয় , গল্প শুরু হয়েছিল যখন থেকে হেলেন রিচার্ডকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া শুরু করে, তখন থেকেই। হেলেন জুয়েট রিচার্ডকে ক্রমাগত বিয়ের জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছিল। রিচার্ড ততই হেলেনের থেকে দূরে সরতে থাকে। হেলেন জুয়েটকে রিচার্ড টাকা দিয়ে যাচ্ছিল, যাতে সে চুপ থাকে। পরিস্থিতি জটিলতর হয়ে হয়ে উঠতে থাকে। শেষরক্ষা আর হ'ল না, খুন হয়ে যায় হেলেন।
হেলেন জুয়েটের এই ঘটনা রাতারাতি সংবাদমাধ্যমের প্রথম পাতায় জায়গা করে নেয়, এই খুনকে আরো মশলাদার এবং চটকদার করে তোলে সাংবাদিকরা। আর সাধারণ লোকজনও নিজেদের মতামত দিতে শুরু করল, একদল উঠেপড়ে লাগল হেলেনকে হেয় করতে, কারণ তার পেশা। যেন একজন যৌনকর্মীর জীবনের কোনো দাম নেই, যেন রিচার্ড তাকে মেরে ঠিক কাজই করেছে! হেলেনের জন্য এটাই স্বাভাবিক পরিণতি! রিচার্ড রবিনসন নির্দোষ! রিচার্ড রবিনসন যদি সত্যি খুন করে থাকে তাহলে তার যোগ্য শাস্তি হওয়া উচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছোট ট্যাবলয়েড ধাঁচের পত্রিকাগুলোকে পেনি পেপারস বলা হতো। এই জাতীয় পত্রিকাগুলো যেমন সান, কুরিয়ার ও এনকুয়েরার এই খুনের খবর প্রায় লুফেই নিয়েছিল। কারণ কাগজের মালিকরা বুঝতে পেরেছিল এই মুখরোচক খবরে কাগজের কাটতি বেড়ে হবে দ্বিগুণ।
পত্রিকাগুলিতে এই খুনের ঘটনায় রিচার্ড রবিনসনের মতো প্রতিষ্ঠিত নাগরিকের জড়িত থাকা নিয়ে লেখালেখি শুরু হয়। তাদের সম্পর্কের উত্থানপতনকে খুঁচিয়ে তুলতে শুরু করা হয় । সান পত্রিকার সম্পাদকীয়তে ঘটনায় রিচার্ডের জড়িত থাকার ব্যাপারে দাবি জানানো হয়। অবশ্য বেশ কিছু পত্রিকা এর বিরোধিতা করে তখন। হঠাৎই সমস্ত সন্দেহের অবসান ঘটিয়ে হেলেনের প্রকৃত খুনীর লেখা এক চিঠির হদিস পাওয়া যায় এবং নিউইয়র্ক হেরাল্ড পত্রিকায় এটা নিয়ে বিস্তর খবর ছাপা হয়। ঠিক এর পরেই পত্রিকার বিক্রি রাতারাতি ২,০০০ থেকে ১৫,০০০ হয়ে যায়। পরে অবশ্য জানা গিয়েছিল, খবরটি ভুয়ো, পত্রিকার সম্পাদক গর্ডন বেনেট ৫০ ডলার ঘুষ দিয়ে পরিচিত মহলের সাহায্যে কাজটি করেছিল। রিচার্ড রবিনসনকে নির্দোষ প্রমান করার জন্য গর্ডন বেনেট উঠে পরে লাগে, পতিতালয় ও এর সাথে জড়িত অন্ধকার জগতের কথা ফলাও করে লিখতে লাগল বেনেট। এছাড়া আইনি ব্যবস্থার ত্রূটি এবং পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কথাও লেখা হচ্ছিল শুধুমাত্র রিচার্ডকে নির্দোষ হিসেবে প্রমান করার জন্য। কিন্তু সান পত্রিকা আবার রিচার্ডের বিরুদ্ধে সম্পাদকীয় ছাপলো। ফলত এখানে যত না এই খুনের ঘটনার যুক্তিপূর্ন বিচার হচ্ছিল , তার থেকেও বেশি হচ্ছিল পত্রিকাগুলির নিজস্ব রেষারেষি। কার কত বিক্রি বাড়ে, কে কত পাঠককে আকর্ষণ করতে পারে! কি কি লিখলে পাঠকের কাছে তা আরো মুখরোচক হয়ে উঠবে সেটাই পত্রিকাগুলির মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়াল। হতভাগ্য হেলেনের সুবিচার পেলো কিনা সেটা কিন্তু তারা কেউ ভেবেও দেখেনি।
বিচারচলাকালীন, রিচার্ডের কিছু চিঠি পাওয়া গিয়েছিল, যাতে তার এই ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু ততদিনে রিচার্ড কোথায়! নিউইয়র্ক ছেড়ে সুদূর টেক্সাসে গা ঢাকা দিয়েছে সে । রিচার্ড কিন্তু রয়ে গেছিল অধরা। কোনো শাস্তি হয়নি রিচার্ডের। এই রকম একটা খুনের সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমান তার বিরুদ্ধে থাকা সত্ত্বেও আগাগোড়াই সে ছিল প্রশাসনের নাগালের বাইরে। সেটা কি শুধুমাত্র সমাজের ''এলিট '' শ্রেণীর প্রতিভূ বলে এতটাই নিস্পৃহ ছিল পুলিশ?
ত ৎকালীন পত্রিকায় প্রকাশিত সে খুনের কল্পিত দৃশ্য; Image Courtesy : ranker.com |
খুনের কিনারা হলো কিনা অথবা হেলেন জুয়েট বিচার পেল কিনা সেটা নিয়ে যেন ভাববার কারো সময় ছিল না, সমাজের একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সঙ্গের সঙ্গে সমাজের উঁচুতলার পারস্পরিক সম্পর্কের সাতকাহন নিয়ে চমকপ্রদ ও রসালো সব সম্পাদকীয় পড়তেই যেন সবাই মশগুল হয়ে রইল। প্রকৃত সত্য রয়ে গেল অন্তরালে, শুধুই চমক দেওয়া খবর ছাপা হতে লাগলো আর কোন পত্রিকা কতটা প্রচারের দৌড়ে থাকতে পারে শুরু হয়ে গেলো তার প্রতিযোগিতা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকায় গুরুত্ব পেয়েছিল এই হেলেন জুয়েট হত্যাকান্ড। পরবর্তীতে যা হয়ে উঠলো অনেক রহস্যগল্পেরও উপাদান । ১৮৪৯ সালে লেখা জর্জ উইলকিসের উপন্যাস ‘দ্য লাইভস অব হেলেন জুয়েট অ্যান্ড রিচার্ড পি. রবিনসন’ হেলেন জুয়েটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ইউজিন লুথার ভাইডালের লেখা ‘gurr’ উপন্যাসটিতে হেলেন জুয়েট এক উল্লেখযোগ্য চরিত্র ।
নিউ ইয়র্ক হেরাল্ড-এ হেলেনকে সমাজের ঘৃণিত জীব হিসেবে উপস্থাপন করেছিল ; Image Courtesy : thevintagenews.com |
সেই সময়কাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক অস্থিরতার যুগ, গৃহযুদ্ধ, সামাজিক টালমাটাল অবস্থা - তখন সমাজে নেমে এসেছিল এক ভয়ঙ্কর অবক্ষয়। বেড়েই গিয়েছিল অপরাধ প্রবণতা। হেলেন জুয়েট - এক হতভাগ্য রূপোপজীবী পায়নি তার হত্যার সুবিচার। তার গল্প হয়ে উঠেছিল এক মুখরোচক খবর মাত্র।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
গোল্ডেন স্টেট খুনি / Golden State Killer
'' এত ভোরে ফোন? উফফ একটু শান্তি নেই,, '' কথা গুলো মনে মনে বলে ব্যস্ত হয়ে টেলিফোনের দিকে হাত বাড়ালো সেক্রেমেন্টো পুলিশ ফাঁড়ির ডিউটিরত অফিসারটি। ঘড়িতে তখন কাঁটায় কাঁটায় ভোর ৫ টা । পুলিশ ফাঁড়ির সবাই তখন একটু ঝিমাচ্ছে। সারাটা রাত ডিউটির পর, সবারই চোখে তখন হালকা ঘুম। হ্যাঁ, যা ভাবা হয়েছে তাই, বেশ বড়সড় বিপদ। এরপরেই দ্রুত নিজের নিজের কাজে নেমে পড়ল সবাই। ভোরের আলো তখন সবে দেখা দিতে শুরু করেছে, কয়েকজন অফিসার গাড়ি নিয়ে রওনা হল ঘটনাস্থলের দিকে।
১৯৭৬ সালের ১৮ই জুন।
'' আমি কিছুদিন আগেই এসেছি এখানে। যুক্তরাষ্ট্রের এই সেক্রেমেন্টো অঞ্চল। সকালে নিজের কাজে যাই আর সন্ধ্যের সময় ফিরে আসি। আমার অফিস আমার বাড়ি থেকে বেশিদূরে নয়। আমার বাড়ি কিছুটা নির্জনে, সাইট্রাস হাইটস এলাকা। সেদিনটাও ছিল অন্যান্য দিনের মতোই। সন্ধ্যে বেলা বাড়ি ফায়ার একটু টিভি দেখে ডিনার করে ঘুমিয়ে পরেছিলাম। হঠাৎ করে কিসের একটা আওয়াজে যেন ঘুমের রেশটা কেটে গেল। হঠাৎ দেখি সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটা লোক। ভুল দেখছি নাতো! আমার শোবার ঘরে আর কেউ ঢুকবে কি করে? মাথা কাজ করছিল না। লোকটার মুখে একটা মুখোশ আঁটা , আরো ভালো করে দেখার চেষ্টা করলাম, চোর কি? লোকটার গায়ে একটা নেভি-ব্লু টিশার্ট আর ধূসর রঙের গ্লাভ্স। আরো অদ্ভুত যে লোকটির পরনে কোনো প্যান্ট ছিল না। হঠাৎ লোকটি আমাকে চার ইঞ্চি লম্বা একটা চুরি নিয়ে আক্রমণ করে বসল। আমার দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায়। আমি চিৎকার করবার চেষ্টা করি সাহায্যের আশায়। কিন্তু লোকটা আমার মুখ চেপে ধরে শাসাতে থাকে। কি কর্কশ সেই গলার আওয়াজ। আমি নিজেকে প্রানপনে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকি, কিন্তু না, পারিনি, লোকটার গায়ে অসম্ভব জোর। লোকটা আমাকে ......আমাকে.....'' এই পর্যন্ত বলার পর ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে শিলা। সামলে নিতে সময় দেয় জবানবন্দি নিতে আসা অফিসারটি। শিলা আবার বলা শুরু করে।
এখানেই শেষ শিলার জবানবন্দি। কিন্তু কাহিনীর শেষ এটা নয়, কাহিনীর সূত্রপাত মাত্র। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কিছু সাদা কাপড় আবিষ্কার করে যা আক্রমণকারী ফেলে পালিয়েছিল।
অনুসন্ধান শুরু করে এরপর। কেস ক্রমশঃ জটিল হয়ে উঠতে শুরু করে। কারণ শিলার ঘটনার পর আরো বারোটি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে আক্রমণকারী ধর্ষণের পর খুন করেছে। এই ধর্ষক ও খুনি এক ত্রাস - তার অপরাধের অঞ্চলের সঙ্গে মিলিয়ে এই বর্বর লোকটিকে বলা হত ইস্ট এরিয়া রেপিস্ট- East Area Rapist বা সংক্ষেপে EAR । পরে এই অপরাধীর নাম হয় গোল্ডেন স্টেট কিলার - Golden State Killer । অপরাধের এই বার-বাড়ন্ত সত্ত্বেও প্রায় দশ বছর এই অপরাধী ছিল একদম ধরাছোঁয়ার বাইরে।কিন্তু অবশেষে ২০১৮ সালে ধরা পরে যায় এই অপরাধী।
ততদিনে কেটে গিয়েছে, দু'বছর। প্রায় চব্বিশ জন শিকার হয়েছে সেই হিংস্র ঘাতকের। আরো অদ্ভুত হয়ে উঠেছে ঘাতকের কাজকর্ম। ধর্ষণ করার পর ধর্ষিতার বাড়ি থেকে ছোটোখাটো জিনিস চুরি করতে শুরু করেছে সে। যেমন, চুলের ক্লিপ, লিপস্টিক, ফিতে, জুতো ইত্যাদি। ঘটনার পরে, অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন করে নির্যাতিতাদের বিভিন্ন হুমকি দিত। খুব অশ্লীল সে ভাষা- ' মনে আছে আমাকে? ওই যে দিন তোমাকে নিয়ে খেলেছিলাম?' পুলিশ সেই নম্বর সন্ধান করে কিছুই সূত্র বের করতে পারে নি।
এরপরেই আসরে নাম এফ.বি.আই। কিন্তু তখনও চলতে থাকে অপরাধ। আক্রমণের ধরণে পরিবর্তন আনে সে। সে এখন নৃশংস খুনি।
বিভিন্ন পত্রিকার পাতায় ইস্ট এরিয়া রেপিস্টএর ছবি ;Image Courtesy : David Caraccio |
১৯৭৮ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী
নৃশংস ভাবে খুন হয় এক দম্পতি। কেটি আর ব্রায়ান মেগিয়ার। প্রত্যক্ষদর্শীরা একজন মুখোশপরা লোককে ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালাতে দেখেছিল। খুনের আগে কেটি কয়েকবার উড়ো ফোন পায়। কিন্তু কোন নম্বর থেকে এই ফোনগুলি আসছে তা সনাক্ত করা যায় নি। পুলিশে অভিযোগ করেও কোনো হদিশ মেলেনি তার। এমনকি কেটি পুলিশে এই মর্মে নালিশ জানায় যে, নীল গাড়িতে করে একটি লোক বাড়ি পর্যন্ত অনুসরণ করছে। কিন্তু তদন্তে কোনো কিছুরই হদিশ পাওয়া যায় নি। এটাই শেষ নয় , আরো পাঁচ জনের জীবনে হানা দেয় এই হত্যাকারী। ঘটে যায় পাঁচটি হত্যাকান্ড। মেগিয়ার দম্পতির পর হত্যাকারী এলাকা বদলে ফেলে।পরবর্তী খুন কোস্তা কাউন্টিতে। আগের সমস্ত অপরাধের ঘটনাকে নিমেষে বদলে দেয় পরের ঘটনাক্রম। আবারও চলে ধর্ষণের মতো অপরাধ। আর তার সংখ্যা কম নয়- কুড়িটি এই ধরণের জঘন্য অপরাধ করে সে।
খুন হতে হয় পেশায় ডাক্তার রবার্ট হফারম্যান এবং তার বান্ধবীকে । ঘাতকের বন্দুকের সামনে অসহায়ভাবে প্রাণ হারায় আরো অনেকে, তালিকায় নাম যুক্ত হয় হ্যারিংটন, ডমিঙ্গো, স্মিথ এবং সানচেজ দম্পতির। এলাকার ত্রাস ছিল এই অপরাধী, এবং ছিল মানসিক বিকারগ্রস্ত- খুন করার আগে সঙ্গীর চোখের সামনে মহিলাদের ধর্ষণ করত সে।
এই তো গেলো অপরাধের খতিয়ান, কিন্তু ধরা কি পরবে না এই জঘন্য অপরাধী। সারাজীবন কি ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে সে? অপরাধ শুরু ১৯৭৬ সালে, ১৯৮৬ পর্যন্ত এই জঘন্য অপরাধ চালিয়ে গেছে অপরাধী, মানে টানা দশ বছর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তান্ডব চালিয়ে গেছে এই ইস্ট এরিয়া রেপিস্ট। মোট পঞ্চাশটি ধর্ষণ এবং এক বারোটা খুনের অভিযোগ এই লোকটির বিরুদ্ধে, কিন্তু সে থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এতটাই তার আত্মবিশ্বাস যে, একবার সে সরাসরি পুলিশ স্টেশনে ফোন করে বসে। ''আমিই ইস্ট এরিয়া রেপিস্ট! তোমরা আমার টিকিটাও ধরতে পারবে না '' - এমন কথা অব্দি বলে সে কৌতুক করার সাহস করেছিল। কিন্তু কোনোভাবেই অপরাধীকে ধরা সম্ভব হচ্ছিল না, কোনো ভাবেই তার ফোনের কোনো সূত্র পাওয়া যাচ্ছিলো না, স্কেচ তৈরি করেও কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হচ্ছিলো না পুলিশের গোয়েন্দাদের। সব চেষ্টা একের পর এক ব্যর্থ হতে থাকে।
এই ভয়ানক লোকটির আক্রমণের শিকার কিন্তু ভাগ্যের জোরে পালিয়ে এসেছে এরকম অনেকেই পুলিশের কাছে অপরাধীর চেহারার বর্ণনা দিয়েছে। পুলিশের আর্টিস্ট বর্ণনা শুনে স্কেচও করেছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও ধরা যায়নি অপরাধীকে। কারণ বিভিন্ন জনের বর্ণনায় এক এক রকমের চেহারা ফুটে উঠছে অপরাধীর - প্রত্যেকটি ভিন্ন। এই সূত্র ধরেই প্রথম গোয়েন্দা বিভাগ তিনজন সন্দেহভাজনকে আটক করে। তারা হল জো এলসিপ, ব্রেট গ্লেসবি আর পল স্নেইডার। ব্রেট ১৯৮২ সালে মারা যায়। ডিএনএ পরীক্ষা হয় বাকি দুজনের। নির্দোষ প্রমাণিত হয় এরা। সেটা ১৯৯০ সাল। তখন ডিএনএ পরীক্ষা করে অপরাধী শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয় গেছে পুলিশবিভাগে। হত্যাকারীর ডিএনএ সংগ্রহ করা সম্ভবপর হয়েছে। কিন্তু পূর্বে অপরাধ করেছে এমন কোনো অপরাধীর সঙ্গে এই ডিএনএ মেলেনি। কিন্তু ফাইল বললো অন্যকথা, অদ্ভুতভাবে ১৯৭৬ এর আগের কিছু ধর্ষণের মামলার এক সন্দেহভাজনের সঙ্গে এই হত্যাকারীর মিল পাওয়া গেছে। আবার মুশকিল, তদন্ত যখন এই পর্যায় এসে এক নতুন দিকে বাঁক নিতে শুরু করেছে তখনি এই অপরাধী তার সমস্ত অপরাধ বন্ধ করে বেপাত্তা হয়ে গেলো। সে কিন্তু তার ফস্কে যাওয়া শিকারদের ফোন করে হুমকি দিতে ভুলতো না, ২০০১ পর্যন্ত তার এই দুষ্কর্ম চলেছিল।
এরপর এল ইন্টারনেট। যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটে গেল। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যবহার শুরু হয়ে গেল ইন্টারনেটের। আর এই সুবিধা যদি ব্যবহার করা হয় অপরাধের অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে? খোলা হয় এই ইস্ট ইন্ডিয়া রেপিস্টের মামলা। মিশেল ম্যাকনামারা নাম এক ব্লগার নতুন করে অনুসন্ধান শুরু করে। ট্রু ক্রাইম ডায়েরি - True Crime Diary নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে। নতুন করে অনুসন্ধান শুরু হয়। তার পুরো অনুসন্ধান ছিল ইন্টারনেট নির্ভর। এই ওয়েবসাইটেই এই হত্যাকারীর নাম দেওয়া হয় - গোল্ডেন স্টেট্ কিলার - Golden State Killer। মিশেল নতুন করে খোঁজ নিতে শুরু এই কেসের। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে, পুরোনো নথিপত্র, কেসে ফাইল ঘাঁটতে শুরু করে সে ।
নতুন অনেক সূত্র নজরে আসে মিশেলের। আর সেই সব কিছুই মিশেল তুলে ধরে তার ব্লগে। লেখা নিয়মিত হতে থাকে, কেসের অগ্রগতিও তুলে ধরতে থাকে। মিশেল ব্লগ শুরু করে ২০০৬ সালে। ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই ব্লগ এবং এই ব্লগকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয় একটি গ্রূপের। এই অনুসন্ধানের কাহিনী আকর্ষণ করতে থাকে গ্রূপের সদস্যদের। নিজেদের মধ্যেও বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ এবং তার আদানপ্রদান শুরু করে দেয়। ২০১৩ স্বামী মিশেল লস এঞ্জেলস ম্যাগাজিনে '' গোল্ডেন স্টেট্ কিলার '' নিয়ে একটা কলাম লেখে। তারপর তার ব্লগের নিবন্ধগুলো নিয়ে একটা বই লেখার কাজ শুরু করে মিশেল। আর ঠিক এখন থেকে শুরু হয় '' গোল্ডেন স্টেট্ কিলার '' কেস ফাইল নতুন করে খোলবার কাজ।
হত্যাকারীর শেষ অপরাধের ঘটনাস্থল ছিল কন্ট্রা কোস্তা কাউন্টি। আর এখানকারই পুলিশ অফিসার জন হোলস উৎসাহিত হয় এই অনুসন্ধানের কাজে। মিশেলের লেখা পড়েই জন এই কাজে আগ্রহী হয়। মিশেলের অনুসন্ধানে পাওয়া সূত্রগুলি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। তদন্ত নতুন গতি সঞ্চার করে। কিন্তু এরই মাঝে ঘটে যায় এক দুখঃজনক ঘটনা। ২০১৬ সালে, হার্টফেল করে ঘুমের মধ্যে মারা যায় মিশেল। তার মৃত্যুর পর কিছুদিন বন্ধ থাকে ব্লগের লেখালেখি। তারপর ধীরে ধীরে মিশেলের স্বামী প্যাটন অসওয়াল্টের উদ্যোগে ব্লগের লেখালেখি আবার শুরু হয়। প্যাটন আরো একটি অসমাপ্ত কাজ শুরু করে, মিশেল যে বইটির কাজ শুরু করেছিল সেই বইটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার পরিকল্পনা করে। '' I Will Be Gone In The Dark '' প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।
সামনে আসে এক ভয়ানক হত্যাকারীর গল্প।
মিশেল ম্যাকনামার মারা যাবার ঠিক দু'বছর পরে সামনে আসে একসময়ের ত্রাস ''গোল্ডেন স্টেট্ কিলার '' - এর পরিচয়। আর এই কাজে সবথেকে বেশি উদ্যোগ যার ছিল, সে হ'ল -অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার জন হোলস। নিজের উদ্যম এবং উদ্যোগে এই অনুসন্ধান শুরু করে জন। এই সূত্রে প্রথমে যে কাজটি করা হয়েছিল, তা হল পুলিশের ডেটাবেসে যে ডিএনে এর নমুনা সংরক্ষিত ছিল তার সঙ্গে www.gedmatch.com নাম ওয়েবসাইটের ডেটাবেসে দেওয়া ডিএনএ -এর নমুনা মিলিয়ে দেখা। এই ওয়েবসাইটটির একটি বিশেষত্ত্ব আছে, আর তা হ'ল - যে ডিএনএ'র নমুনা এতে রেজিস্টার করা হবে তার বিশ্লেষণ করে ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তির পারিবারকে খুঁজে বের করা। সহজ ভাষায় বলতে গেলে,নমুনা ডিএনএ'র কাছাকাছি মিল আছে এমন যতগুলো ডিএনএ পাওয়া যায়, সেগুলো মিলিয়ে তাদের একটা বিজ্ঞানসম্মত তালিকা তৈরী করা। প্রায় এত লাখেরও বেশি ডিএনএ প্রোফাইল সংরক্ষিত আছে এই ওয়েবসাইট-এ। তার থেকে '' গোল্ডেন স্টেট্ কিলার '' এর ডিএনএ মেলানো ! এ যে খড়ের গাদায় সুঁচ খোঁজা ! কিন্তু এই কাজটাও সম্ভপর হয়েছিল। এখানেই সংরক্ষণ করা ছিল '' গোল্ডেন স্টেট্ কিলার '' এর এক ভাইয়ের ডিএনএ প্রোফাইল। বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ধরা পরে তা।
সাংঘাতিক মূল্যবান এক তথ্যের উদ্ঘাটন হল। বিস্মিত গোটা পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। দীর্ঘ চল্লিশ বছর কেটে গেল এই কেসের রহস্য সমাধান করতে। পুলিশ এবং গোয়েন্দা বিভাগের করণকর্তাদের রাতের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছিল এই '' গোল্ডেন স্টেট্ কিলার '' । অবশেষে এলো সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে শনাক্তকরণের কাজ। প্রথমে সেই ডিএনএ প্রোফাইলে চিহ্নিত ব্যক্তির নিকটাত্মীয়দের ডিএনএ এর নমুনা সংগ্রহ করা শুরু হ'ল। এই বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বেরিয়ে এলো আসল হত্যাকারীর পরিচয়। সন্দেহভাজন ব্যক্তির খুড়তুতো ভাই ছিল সেই '' গোল্ডেন স্টেট্ কিলার'' । নাম- জোসেফ জেমস ডি-অ্যাঞ্জেলো। ২০১৮ সালে যখন গ্রেফতার করা হয় তাকে তখন সে বৃদ্ধ, বয়স ৭২ বছর।
জেমস জোসেফ ডি-অ্যাঞ্জেলো
না, যেরকম ভাবা হয়েছিল সেরকম কিছুই হয়নি জেমসকে গ্রেফতারের সময়। প্রচুর পুলিশ ছুটে চলেছে একজন ভয়ানক অপরাধীর পিছনে আর চোখে ধুলো দিয়ে পালাচ্ছে সে, এমন কোনো সিনেমার দৃশ্যও অভিনীত হয়নি সেদিন। পুলিশ কড়া নেড়েছিল জেমসের দরজায়। নেহাতই সাদামাটা চেহারার এক বৃদ্ধ দরজা খুলে বেরিয়ে এসেছিল। পুলিশ গ্রেফতার করল তাকে। অভিযোগ - এই হল এককালের ত্রাস '' গোল্ডেন স্টেট্ কিলার ''। কোনো বাধা দেয়নি সে, পুলিশের সঙ্গে বিনা বাক্যব্যয়ে চলে গেল।
কোর্টে তোলা হ'ল তাকে। নিজের সম্পর্কে সমস্ত অভিযোগ স্বীকার করে নেয় সে। কাঠ গড়ায় সে আগাগোড়াই নির্লিপ্ত ছিল সে , যেন কিছুই হয়নি। চোখে মুখে ছিল না কোনো রাগ, কিংবা অসহায়তা। এমনকি ধরা পরে গিয়ে একবারের জন্য হতাশ মনে হয়নি তাকে। এতগুলো অপরাধের পরেও ছিল না অনুশোচনার কোনোরকম লক্ষন। কোনো হতবাক হয়ে গেছিল নিহতদের পরিবারের লোকজন।
নিজের বয়ানে নিজের গল্প বলতে শুরু করে জেমস; সে কাজ কোর্ট পুলিশে, তার আগে সে অংশ নিয়েছে ভিয়েতনামের যুদ্ধে। পুলিশে চাকরি করা কালীন এক দোকানে চুরি করে সে। সেটাই তার প্রথম অপরাধ। তারপরের অপরাধের খতিয়ান তো সকলের সামনেই ছিল। দীর্ঘদিন গ্যারেজে কাজ করত জেমস। সেটা অবশ্য ছিল তার বাড়ির পাশেই। দীর্ঘ সাতাশ বছর ধরে সেখানে সে কাজ করে। আর সেখানে কাজ করবার সময়ই সেক্রেমেন্টো, রোজভিল যাবো ক্যালিফোর্নিয়ায় ঘুরে বেড়াত সে। এই সময়েই সমস্ত অপরাধ করে সে। কিন্তু কন্যা সন্তান জন্মানোর পর সে অপরাধ করা বন্ধ করে দেয়। কেন? স্নেহ কি তাকে অপরাধের পথ থেকে সরিয়ে নিয়ে আসে? জেমস কোনো জবাব দেয়নি।
২০১৭ সালে গ্যারেজের কাজ ছেড়ে দেয় জেমস। সবথেকে অবাক করে দেয় একটি তথ্য, জেমসকে গ্রেফতার করা হয় সাইট্রাস হাইটস থেকে- ১৯৭৬ সালের জুন মাসে এখানেই সে আক্রমণ করে তার প্রথম শিকারকে।
জেমসের গ্রেফতারের পর প্রতিবেশীরা তাজ্জব, জোসেফ যে এই রকম ভয়ঙ্কর ধরণের অপরাধী চিন্তাও করতে পারেনি তারা। বদমেজাজি হলেও নিজের মতো থাকতে পছন্দ করতো জেমস, চুপচাপ নিজের মতোই দিন কাটাতে ভালোবাসতো সে।
হত্যা ও ধর্ষণের প্রায় তেরোটি মামলা দায়ের করা হয় জেমসের বিরুদ্ধে, ওরেঞ্জ, ভেনটুরা,ট্যুলারে, সান্তা বারবারা এবং কন্ট্রা কোস্তা - এই ছয়টি কাউন্টিতে মামলা চলে , কারণ এই সব জায়গাতে অপরাধ করেছে সে। বর্তমানে বিচার চলছে সেক্রেমেন্টো কাউন্টিতে , নিহতদের পরিবার- পরিজনরা সুবিচারের আশায় দিন গুনছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন