অশ্লেষা
কয়েকশো শব্দের মধ্যে কয়েকজন কয়েকডজন কথা থাকে। কি থাকে কথার মধ্যে, থাকে যে প্রেমের কথা,জীবনের কথা,শব্দের কথা,শব্দগুলো জুড়ে জুড়ে কথার জন্ম।
একটা অক্ষরের শেষের শব্দের ছিঁটেফোঁটার সঙ্গে এল মুক্ত হয়, ছিঁটেফোঁটা যার ছিঁটে আর ফোঁটা থাকে না,
আলোর ক্ষেতে চলে যায়।
আলো ফুলে ফুলে ওঠে, জল দুলে দুলে ওঠে, কান্নার রোল ভুলে ভুলে ওঠে, ঠোঁটের আদরের কোলের সময় আশ্লেষে যেন ছুঁয়ে ছুঁয়ে তখনকার ভালোলাগার মুহূর্তগুলোকে।
অশ্লেষা নক্ষত্রের জন্ম হয়, যৌনতার গভীর থেকে ভালোবাসার জন্ম হয়,
নক্ষত্রের গভীর থেকে আদরের ছড়িয়ে পড়া নীতিকথার জন্ম হয়,
একটা অক্ষর আর শব্দের মিশেলে যৌন- পবিত্রতার জন্ম হয়,
শব্দ আর কথার মিশেলে অশ্লেষা নক্ষেত্রের জন্ম হয়।
রানীবালা
গোছানো জোনাকিতে আলো - আঁধারের ফাঁকে ফাঁকে হালকা হাতের স্পর্শের মতো রানীবালার হৃদয়ে ছুঁয়ে যায় টুকরো দাঁতের দংশন।
প্রথম নষ্ট গর্ভের মতো করে, প্রথম হারানো সন্তানের আদর।
রানীবালা, দেবদারু গাছের খাঁজের মধ্যে তোমার যে সত্ত্বা আছে,
তাকে টুকরো টুকরো করে আস্ত একটা মাজানে ভাসিয়ে দাও।
মুহুর্ত
যখন তোমার হাতের উপর হাত রাখতাম, মনে হতো যেন জীবনের প্রথম স্বেদবিন্দুর মতো আকর গড়ে নিচ্ছে নিজের প্রতিক্ষার যন্ত্রনাগুলি।
টুকরো টুকরো মনে হতে থাকলো যন্ত্রনাগুলি।
সেগুলোকে ছড়িয়ে দিতে থাকলাম সিন্ধুনদীর জলে,
নিজের হাতের মধ্যে থেকে তৈরি হওয়া আর মনের মধ্যে থেকে যাওয়া,
কিছু কিছু টুকরো- টাকরা ভালোবাসা ঘুরপাক খাচ্ছে।
শেষ
তোমার চোখের দিকে চেয়ে, কোথাও কোথাও যেন ভালোবাসার মরীচিকা খুঁজেছিলাম আমি,.
তারপরেই হঠাৎ সব শেষ হয়ে যাওয়ার মতোই স্তব্ধ হয়ে গেলো,
ফুরিয়ে যাবার মতো সবকটা পথ থেমে গেলো।
আর কোথাও কথা না বলা বাষ্পের মতো আদরের শেষ হল, আদরের খেলা চলতে চলতে আজিই শেষ হল,
তোমাকে ভালো রাখারও শেষ হল।
ক্ষত
আমার্ মনের ভিতরে
যে নিত্য মেঘেদের
আনাগোনা , তাদের
নিত্য নতুন চঞ্চলতার
খবর আমি ছাড়া
আর কেউই পায় না।
আমার রক্তের ভিতরে
যে কাঁটাদের চলাচল
টের পেতে শুরু
করেছি আজকাল ,
তার মধ্যমা আঙ্গুলি
দিয়ে গলার ভেতরকার
ক্ষতটাকে চিপে
ধরতে পাঁচ মিনিটও
লাগেনি।
রক্ত ক্ষত সৃষ্টি করেছে।
হৃদয়
আমার কবিতার ডায়েরির
শেষ পাতায়
আমার দ্বিতীয় প্রেমিকার
সঙ্গে মিলনের
তারিখ লেখা আছে।
আমি তার নাভিগর্ভে
হাত রেখে
নিজের হারিয়ে
যাওয়া হৃদয়কে
খুঁজেছি।
আমার হৃদয়ের
অন্তরালে ঘটে
যাওয়া অক্লান্ত ও
নিঃশব্দ ভালোবাসার
আবাহনকে খুঁজেছি।
তাও ...তবুও।
জীবন
যে কোনো ধাপ অথবা
ফাঁকের মাঝখানে
দিয়ে জীবন চলতে
শুরু করে।
কোনো গুলতি দিয়ে যদি
খানিকটা মাটিকে ছুঁড়ে ছুঁড়ে
টিপ্ ফেলা হয়,
তাহলে ছেঁড়াখোঁড়া জীবনই
তো ভেসে ওঠে।
চাঁদের ছায়া জলে প'রলে
তোমার - আমার
হৃদয় খোঁড়া হয়।
সেখানে ভালোবাসাটুকু
নিংড়ে নিলে
তোমার - আমার
ভালোবাসাই পরে থাকে।
চাঁদ অপেক্ষা করে
আর একটা বছর।
একা -জীবন
ছোট ছেলেটার একটা াক
জীবন ছিল।
পুকুরপাড়, ধানের ক্ষেত আর
মাছওয়ালা পুকুরের
পাশ দিয়ে একটা একা
জীবনের বীজ
বুনে চলেছিল ছেলেটি।
একা জীবনের এক্কা-দোক্কায়
একটা ঘুঁটিও ছড়াতে দেয়নি।
জীবনের একটা - একটা খাতার
পাতায় ধানক্ষেত হয়ে হলুদ
গমের ছোঁয়া জারাতে চায়নি।
আলো - আলগা ভালোবাসা
চারিয়ে গেছিল।
অনেক হালকা ভালোবাসাও...
কথা-কও
হেলানো বাতাসের
আসমানি রঙ
আর তার
আদরের ছোঁয়ায়
অনেকটা দূর
থেকে এসে
আমরা ,
নিজেদের মতো করে
আমার ভালোবাসার
মতো করে
ভালোবাসো আমাকে,
আর তোমাকেও।
শেষ-ভালোবাসা
যে জমানো ভালোবাসা
ছিল তাকে আদরের
নামে ডেকেছিলাম;
যে ধূসরতা রাঙানো
দিনলিপি ছিল;
তাকে ডায়রির প্রতিটা
ছেঁড়া পাতায় লিখে রাখতাম।
রামধনুর রঙ যখন সাতটা
পেখমের মতো ধরে রেখেছিল ;
তোমার চোখের
শেষ জলের আবছায়া
তাতে লিখে ররেখেছিলাম।
আমার কাছে ছিল কিন্তু হারিয়ে গেছে তোমার
কাজলের রেখায় লেখা শেষ ভালোবাসা।
বিষাদ-গাথা
তোমার-আমার মধ্যেকার যে দূরত্ব, তাতে আলো
করে আছে এক বিন্দু দুঃখের পরিমান সুখ,
এখন তোমার অপরিচিত সুখের পাশে আর
কারো যেন চেনা ভালোলাগার
একটা ছায়া দেখা যাচ্ছে।
পৃথিবীর আলো যখন আস্তে আস্তে আবছা হয়ে যায়,
তোমার আকাশ বিন্দু থেকে অনেক ভালোবাসার মতো
আদরের টুকরো আমার কাছে ফিরতি পথ নেয়।
তোমার অপেক্ষায়
আমার্ অপেক্ষায় কেউ বসে নেই,
তোমার অপেক্ষায় কেউ বসে নেই,
যে আমার জীবনে রয়ে যায়,
সে যে আমার জীবন নিয়ে যায়,
যে তোমার জীবন নিয়ে যায়,
সে যে তোমার জীবনে রয়ে যায়,
তোমার অপেক্ষায় কেউ বসে নেই,
আমার্ অপেক্ষায় কেউ বসে নেই,
আমাদের জীবন থেকে যে একবার যায়, সে যে আমাদের জীবন নিয়ে যায়;
পরিপার্শ্ব একই থাকে, তবে সব বদলে যায়, সব,
জীবন এক থাকে, শুধু জিয়নতি তা একটু একটু করে বদলে যেতে থাকে;
যে তোমার জীবন থেকে একবার চলে যায়, তাকে আমি এখনও যে ভালোবাসা থেকে সরাতে পারিনি।
যে আমার জীবন থেকে একবার চলে যায়, তাকে তুমি এখনও যে ভালোবাসা থেকে সরাতে পারনি.।
কাগজ
লেখার খাতাটা ছিঁড়ে ফেলতে গিয়ে পেনের একটা দাগের পার্থক্য ধরা পড়েছিল,
খাতার কিছু পাতা ছিঁড়ে আর আধফোঁটা রক্ত দিয়ে নিজের নামটাই লিখেছিলো,
ঠিক তারপরেই চিঠিটা ছুঁড়ে মেরেছিলো ডাস্টবিনা,
ভালোবাসা কি শেষ হয়ে গিয়েছিলো??
নাকি শুরু হতে শুরু করছিল।
পাতারা ঝরবে
কোথাও কোথাও বা কখনও কখনও
রাস্তা পেরিয়ে গেলে, বাঁ পাশের প্রান্তর ছোঁয়া- করে,
সেটা যে কি; আমার পায়ের নাকি হাতের মধ্যমার টুকরো কিছু ছোঁয়া।
রোদের ফোঁটাগুলো বেশ বড় হচ্ছে,
দীর্ঘতর হচ্ছে বৃষ্টি,
কথার আর আঙুলের লেখার মাঝখানে
কিছুক্ষন থেমে যাওয়া থাক।
আবার আরম্ভ হবে, আবার নতুন করে নতুন পাতার ঝরবে।
ভালোবাসার খেলা
সুরঙ্গমা, তোমার আশায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভালোবাসা আমি এক জায়গায় করে নিয়েছি;
জমা দিয়ে দিয়েছি নিজের মনের কাছে।
একটার পর একটা আবর্তন যে যত বেশি ঘুরেছে, আজন্মের ভালোবাসা আগামী বছরের অপেক্ষায় আছে,
আকাশের ভালোবাসার আরো অনেক রঙের পরত আছে; আবির ছড়াচ্ছে, ছড়িয়ে যাচ্ছে রঙের খেলা,
ছড়িয়ে যাচ্ছে ভালোবাসার মেলা।
আলো আঁধারের মাঝখানে
তোমার মুক্তির মাঝে, আমারই আসা যাওয়া;
তোমার অলিখিত কবিতার পংক্তির মাঝখান দিয়ে যে নদী ভেসে চলে গেছে,
তার পরিবর্গতা ছিন্নসূতা দিয়ে যে মাপ তা অবাধ্যতার নামান্তর:
ছোটো ছোটো সময়ের প্রতীক্ষায় থাকি, ছোটো ছোটো গল্পের তরী তার
বাঁকগুলো ধরে,
তোমার আমার পাশে, আগের মূহুর্ত পর্যন্ত ঘোষণা করে।
মালাঙবুরু
অপূর্ব এক ভাষায় নিজের লেখার প্রকাশ- ধ্বনি করতে থাকে;
দোতালা আর হাততালি দিতে থাকে ছোট-বড় সবাই।
দোতালা আর হাততালি দিতে থাকে ছোট-বড় সবাই।
নিরঞ্জনের ঘুম ভাঙে বেশ সকাল সকালই,
সামনের খোলা জানালাটা দিয়ে তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষণ।
সামনের খোলা জানালাটা দিয়ে তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষণ।
মায়ামু শরীরে তখন নতুন জোয়ার লেগেছে, জল ঝরছে আর তার সঙ্গে বেড়ে উঠছে সর্পিল লতার চাদর।
নিরঞ্জন আকাশ দেখে, পাখি দেখে।
নিরঞ্জন আকাশ দেখে, পাখি দেখে।
ইটা আমাদের বিশ্বাসের কথা বটেক- আমাদের ভিটা, আমাদের জল, আমাদের পাহাড়,
আমাদের ইচ্ছা আর অনিচ্ছার কথা বলে যায় গো মালাঙ বুরু- কতকটা এভাবেই নিজের মতো করে অনুবাদ করে নেয় নিরঞ্জন।
আমাদের ইচ্ছা আর অনিচ্ছার কথা বলে যায় গো মালাঙ বুরু- কতকটা এভাবেই নিজের মতো করে অনুবাদ করে নেয় নিরঞ্জন।
নিরঞ্জন বোতলটা গলায় পুরোটা ঢেলে দেয়; হালকা ওষুধ মাখা একটা গন্ধ আসছে।
ও মালাঙবুরু দেখো গো
কেমন মাদল বাজছে,
কেমন মাদল বাজছে,
দেখো কেমন আলতো লাল মাটির গন্ধ আসছে;
মালাঙবুরু আজ নাচছে, মাদলের তালে।
শঙ্খচিল
রাতের আকাশের অন্ধকার বিন্দুগুলোকে সূক্ষ্ম ভাবে যুক্ত করে যদি তারা বোনা যায়, তাহলে একটা সুতোর মতো ধারা তৈরি হয়;
আর তাতে শঙ্খচিলের বাসা বাঁধবে, তাতে ছোট ছোট ছায়া ফেলা ডানা ছড়ানো পাখিদের ভালোবাসা তৈরি হয়;
যদিও তাতে কোনো বিপত্তি আসে না, তবুও ভালোবাসা আর লোভের মধ্যে যে পার্থক্য থাকে তাতে আস্তে আস্তে বদ্ধ নদীর মতো অবিরত চাঞ্চল্যমানতা প্রবাহিত হতে থাকে।
শংখচিলেরা বাসা ভেঙে উড়ে গেছে আজ;
বাসায় ছড়ানো পুরোনো স্মৃতি ভিজিয়ে রেখে গেছে;
পুরোনো কথা মনের মধ্যে ফেলে রেখে গেছে।
বাসায় ছড়ানো পুরোনো স্মৃতি ভিজিয়ে রেখে গেছে;
পুরোনো কথা মনের মধ্যে ফেলে রেখে গেছে।
মৃত্যুধারা
আমার হিমেল চলন যেখান থেকে শুরু হয়েছে আর অবয়ব মাখানো
ঘন কালো রেখায় আঁকা তার অবারিত অভিসারিত স্রোত।
ঘন কালো রেখায় আঁকা তার অবারিত অভিসারিত স্রোত।
মাননীয় সে তখন;
হিমস্রোত তার জীবন্ত ও তীব্র অনুরাগ মাখানো
সমান্তরাল শায়িত বাতিল নিরুপায় মাপে ছাপা অস্তিত্বের পরত।
হিমস্রোত তার জীবন্ত ও তীব্র অনুরাগ মাখানো
সমান্তরাল শায়িত বাতিল নিরুপায় মাপে ছাপা অস্তিত্বের পরত।
বাসন্তী এক দিন,
স্তব্ধ এবং বিষাদের পর
সোনা - জোনাকিরা জ্বলে ওঠে।
স্তব্ধ এবং বিষাদের পর
সোনা - জোনাকিরা জ্বলে ওঠে।
এখন নিষাদ;
কচুরিপানারও সংসার হয়;
জন্ম নিগড়ে লেগে থাকে উর্বর মাকু শব্দ।
জন্ম নিগড়ে লেগে থাকে উর্বর মাকু শব্দ।
অসহায় ক্লোরোফিল হয়ে।
স্তব্ধ
কুয়াশায় হিমায়িত কোষের মাঝে, পাতায় বুনোট ফেলা পলাশের রং;
ছড়িয়ে পরা বিষ বিন্দু আর অলিগলি- শীর্ষে লেগে থাকা শাশ্বত ধূসরতা।
ছড়িয়ে পরা বিষ বিন্দু আর অলিগলি- শীর্ষে লেগে থাকা শাশ্বত ধূসরতা।
আর বিজয়িনীর সম্পূর্ণতার অংশ, আর থেকে যায় পুরুষচিত প্রয়োজন আর আবাহন।
অজেয় মোহমত্ততা।
আমি-মেঘ
আমার আর আমার মেঘের মধ্যে ঠিক কত যোজন দূরত্ত্ব আছে?
সেটা পরিব্যাপ্ত না সংক্ষিপ্ত তা বোঝার মত
স্থির-স্থবিরতা মেঘবালিকার নেই।
সেটা পরিব্যাপ্ত না সংক্ষিপ্ত তা বোঝার মত
স্থির-স্থবিরতা মেঘবালিকার নেই।
কত যোজন দূরত্বের হিসাবি যদি ধরি, তাহলে মেঘ বালিকার থেকে
নক্ষত্রের জলের আয়োজন তাই হয়তো অপরিণত হয়ে থাকে।
নক্ষত্রের জলের আয়োজন তাই হয়তো অপরিণত হয়ে থাকে।
সূর্য - বল্কল পরিহিত অভিষিক্ত কিংবা শালীন সন্ন্যাসীর মত
তন্দ্রাস্তিমিত ভালোলাগার একটা অবয়ব দাঁড়িয়ে ছিল ।
তন্দ্রাস্তিমিত ভালোলাগার একটা অবয়ব দাঁড়িয়ে ছিল ।
মোমবাতির আলোয় আমার নিজেরই মুখ দেখা হলো না,
নিজেরই মুখের প্রতিচ্ছবি প্রতিবিম্বিত হতে থাকল ।
নিজেরই মুখের প্রতিচ্ছবি প্রতিবিম্বিত হতে থাকল ।
আমার মেঘবালিকার মতন আমার শেষের আকুতি- অভিমান।
বেনামে
তুই এক ধূলিধূসরিত
কথামালা,
যে দিন একথা হয়েছিল
বান্ধব- মহলে বলা,
তুমি আমার নিবিড়
আজিকে দিবানিশি;
তুমি আমার স্নেহের
তুমি আমার নিবিড়
আজিকে দিবানিশি;
তুমি আমার স্নেহের
স্পর্শের অর্ধসুখ,
আর আমি তোমার ফুলেল
আদরের নিধিমুখ ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন